
সুমন হোসেন, খুলনা থেকে ফিরে:
আন্দোলনরত ৮ দলের খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, ন্যায় বিচার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাবেদারি নয়-স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যেতে চাই বললেন ডা. শফিকুর রহমান। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা ৮ দলের বিজয় চাইনা, আমার বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে, আঙুল বাঁকা করতে হবে।
আমরা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, ন্যায় বিচার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাবেদারি নয়- স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে আন্দোলনরত ৮ দল খুলনার উদ্যোগে নগরীর ঐতিহাসিক বাবরী চত্বরে (শিববাড়ী মোড়) এলাকায় খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষনে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর পীরসাহেব চরমোনাই মুফতী সৈয়দ মো. রেজাউল করিম এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর আল্লামা মামুনুল হক,
খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুফতী মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী,
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টি বিডিপির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আউয়াল, ও মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ,
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, খেলাফত মজলিস কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ধ মহাসচিব এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন।
দুপুর ১২ টায় পবিত্র অর্থসহ কুরআন তেল্ওায়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল,
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহানগরী সহ- সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিনের পরিচালনায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী সুলতান মহিউদ্দীন, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী,
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ,
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মোস্তফা কামাল, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার এম এ মজিদ,
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতী শরীফ সাঈদুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান,
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা মুহা. এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমীর উপাধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম মুকুল, বাগেরহাট জেলা আমীর মাওলানা মো. রেজাউল করিম, খুলনা জেলা নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম,
বাগেরহাটের এমপি প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা মহানগরী সভাপতি মুফতী আমানুল্লাহ, খুলনা জেলা অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল্লাহ ইমরান, খুলনা মহানগরী সেক্রেটারী মুফতী ইমরান হোসাইন,
জেলা সেক্রেটারী কে এম রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতী ওলিউল্লাহ মাহমুদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের খুলনা জেলা সহ-সভাপতি মুফতী আব্দুল কাইয়ুম জোমাদ্দার, খেলাফত মজলিসের খুলনা মহানগরী সভাপতি এফ এম হারুন অর রশিদ,
খেলাফত মজলিসের খুলনা জেলার সভাপতি মাওলানা এমদাদুল হক, জাগপার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. নিজাম উদ্দীন অমিত, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের খুলনা মহানগরী সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাও মুজাহিদুল ইসলাম, খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক মুফতী ইব্রাহিম খলিল,
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. জাকির হোসেন খান, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টি বিডিপির খুলনা মহানগরী সভাপতি এডভোকেট মো. হানিফ উদ্দীন, জামায়াতে ইসলামীর যুববিভাগের মহানগরীর সভাপতি মুকাররম বিল্লাহ আনসারী,
যুব আন্দোলনের জেলা সভাপতি ফজলুল হক ফাহাদ, মহানগরী সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম নাসির, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, খুলনা জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি ইউসুফ ফকির,
ছাত্র আন্দোলনের জেলা সভাপতি মো. ফরহাদ মোল্লা প্রমুখ। অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করেন ক্বারী ইকরামুল কবির।
এ ছাড়া প্রেরণা সাহিত্য সংসদ খুলনার আব্দুল্লাহ আল কাফি ও নবদান সাংস্কৃতিক সংগঠনের সিনিয়র পরিচালক নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে তাদের সহশিল্পীরা ইসলামী গান পরিবেশন করেন।
আমীরে জামায়াত বলেন, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অরাজগতা অব্যাহত আছে।
ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। মানুষ বলতে বাধ্য হচ্ছে, আগে ভালো ছিলাম না, এখন আরও খারাপ আছি।
তবে এ সময় কোন ইসলামি দলের গায়ে চাঁদাবাজের তকমা লাগেনি বলে দাবি করেন তিনি।
৩৫ বছর ও তার নিচে যাদের বয়স, যারা বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের আমীর বলেন, এবার তোমাদের ভোট নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করতে চাইলে আমরা তা হতে দেবোনা।
সেদিন আমারও যুবক হয়ে তোমাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করবো। তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তোমাদের হাতে আমার দেশটা তুলে দিতে চাই। সেজন্য নিজেদেরকে প্রস্তত করো। তোমরা চাকরি করবে না, চাকরি দেবে।
জামায়াতের আমীর আরও বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৪ বছরে জনগনের লালিত স্বপ্ন অনেকাংশেই বাস্তবায়ন হয়নি। দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন হলেও এটা প্রকৃত উন্নয়ন নয়।
দেশ ও জাতির মধ্যে ন্যায়বিচার ও সামাজিক সুশাসন আছে কিনা সেটা বিবেচ্য। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দুই ধারায় চলমান উল্লেখ করে জামায়াতের আমীর বলেন, এক ধারায় রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা। অন্য ধারায় স্কুল কলেজে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা।
মাদ্রাসায় খুন খারাবি হয় না। অস্ত্রবাজি হয়না। জ্ঞানের চর্চ্চা হয়। পক্ষান্তরে ৫৪ বছরে কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে সন্তানদের লাশ পড়েছে। মদ গাঁজার আসর বসেছে। মেয়েদের ইজ্জত লুট হয়েছে।অস্ত্রের ঝনঝনানি হয়েছে।
সভ্য হতে হলে আমাদেরকে দূর্নীতিমুক্ত হতে হবে। কিছু দল ও ব্যক্তি দফায় দফায় দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান করে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, অনেক স্থানে আমাদের ব্যানার প্যানা পোস্টার ফেস্টুন ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। তবে জনগন এখন আর পোস্টার দেখে ভোটের সিদ্ধান্ত নেয়না।
তারা আমাদেরকে ভালোবেসে বুকের মধ্যে স্থান দিয়েছে। আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে ঘোষনা দিয়ে তিনি বলেন, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ঐক্য আমাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে।
প্রয়োজনে আরও একবার ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলে হুশিয়ার করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর পীরসাহেব চরমোনাই মুফতী সৈয়দ মো. রেজাউল করিম বলেন, অনেকে বলেন আমার নির্বাচনের জন্য প্রস্তত নই। কিন্ত আমার নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তত।
কিন্ত তারাই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে হিসাব নিকাশ করে দেখেছেন তাদের পায়ের তলে মাটি সরে গেছে। এবার নির্বাচন নিয়ে আপনারাই ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। গুন্ডামি করে, সেন্টার দখল করে, সন্ত্রাসী চালিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসবেন।
৮ দলীয় জোট মাঠে একত্র হয়ে কাজ করতে পারলে আগামীর বাংলাদেশ হবে শান্তির, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। ৮ দলের দাবির পক্ষে জনগণ এক হয়েছে।
হকের পথে জিহাদ ও সাধনা চালিয়ে যেতে হবে। হক আদায়ে আগামী নির্বাচনে মাঠে নামতে হবে। ৮ দল মিলে আগামী দিনগুলোতে দেশ শাসন করবে ইনশাআল্লাহ।
চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। জাতীয় সংসদে মজলুম মানুষের পক্ষে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখন যারা চাঁদাবাজি ও দখলবাজির শিকার তাদের মুক্তির জন্য ৮ দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আমরা আর প্রতারণার ফাঁদে পড়তে চাই না। আগে গণভোট দিতে হবে, তারপর নির্বাচন। পিআর ব্যবস্থা উচ্চ এবং নিম্ন কক্ষে চালু করতে হবে।
সরকারের প্রতি আবেদন, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করতে হবে। ৮ দলের ঐক্য ভাঙতে ষড়যন্ত্র চলছে, কিন্তু আমরা কোনো ষড়যন্ত্রকে এগোতে দেব না। আগামী সংসদে ইসলামী পতাকা উত্তোলনের জন্য যা যা প্রয়োজন, তা আমাদের করতে হবে।
মোঃ সুমন হোসেন
০১/১২/২০২৫

