
নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইলের লোহাগড়ায় স্ত্রীর পরকিয়ার অভিযোগ তুলে স্বামী ও স্ত্রী কে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করা হয়েছে। এরপর স্ত্রীসহ দুজনকেই জমিজমা বিক্রি করে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন ওই শালিসের মাতব্বরা।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের বাতাসি গ্রামে।বিষয়টি শুক্রবার ( ২০ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
জানা গেছে, বাতাসি গ্রামের বাসিন্দা নিজামুদ্দিনের (৩০) স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ ছিল। সম্প্রতি ওই নারী স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে চলে যান। কিছুদিন পর তিনি আবার নিজামুদ্দিনের ঘরে ফিরে আসেন। এ ঘটনার পর স্থানীয় মাতব্বর শহীদ খানের নেতৃত্বে বুধবার (১৭ জুন) শহীদ খানের বাড়িতে এক সালিশ বসে।
সালিশ বৈঠকে, স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যার্থ হওয়ার কারনে প্রকাশ্যে (স্বামী)নিজামুদ্দিনকে জুতাপেটা করা হয়। এরপর স্বামীকে দিয়ে স্ত্রী কে জুতা পেটা করা হয়।পরে সালিশদারেরা স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই ২০ তারিখে মধ্যে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেন।
নিজামের স্ত্রী আম্বিয়া বেগম বলেন, আমাকে যখন জুতা পেটা করা হয়েছিল তখন আমার ছেলে নাফিজ ছিল।তার বয়স এখন ১০ বছর। সে হাও মাও করে কান্না করছিল। আমাকে না মারার জন্য তাদের অনুরোধ করছিল। কিন্তু আমার ছেলের কথা তারা শুনে নাই। ছেলের সামনে আমাদের জুতা পেটা করা হয়।তবে তার স্বামী নাজমুল ঝুট ঝামেলার ভয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি।
গ্রাম শালিশে উপস্থিত ছিলেন বাতাসি গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘গত বুধবার নিজামের স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে গ্রামে শালিশ বসে। সেখানে শালিশকারীরা নিজামের স্ত্রীকে ১০টি এবং নিজামকে ২০টি জুতার বাড়ি দেন। এরপর তাদের গ্রাম ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই শালিশটি একেবারেই অমানবিক ছিল। আইন অনুযায়ী কাউকে একসঙ্গে জেল ও জরিমানা দেওয়া হয় না। অথচ এখানে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার পাশাপাশি তাদের গ্রাম ছাড়তেও বলা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই সঠিক বিচার হতে পারে না। গ্রামের কেউ কিছু বলছিল না, আমিও পেছনে বসে কিছু বলিনি।’
এ বিষয়ে গ্রাম্য মাতব্বর শহীদ খান বলেন, ‘নিজামুদ্দিনের স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি তিনি স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন। কিছুদিন পর আবার স্বামীর ঘরে ফিরে আসেন। এ নিয়ে গ্রামে সালিশ বসে। সালিশে গ্রাম্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ওই নারীকে শাস্তিস্বরূপ জুতাপেটা করা হয়। একই সঙ্গে নিজামুদ্দিনকে স্ত্রীসহ গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।’
নড়াইল লোহাগড়া থানা পুলিশ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন,এবিষয়ে এখন ও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হেব।