রায়সহ এর মদদদাতা ও ভাড়াটে খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই খুনের মদদদাতা হিসেবে সাংসদের এপিএস সুকুমার, সাংসদের ঘনিষ্ঠ রবিন অধিকারী ও সুশান্ত কুমার দাসের নাম প্রকাশ হওয়ার পর থেকে পুলিশের তৎপরতা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, পুলিশের তৎপরতা বন্ধ হয়নি। পুলিশ খুনিদের অল্প সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
তবে পুলিশের অপর একটি সূত্র বলছে, খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিরা ধরা পড়েছে। খুনে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তারপরও পুলিশ অভিযোগপত্র দিতে পারছে না রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে।
এরই মধ্যে ওলিয়ারের স্ত্রী নূরজাহান বেগম, ভাই বকশিয়ার রহমান এবং ওলিয়ারের রাজনৈতিক সতীর্থরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে খুনের বিচার চেয়েছেন। নূরজাহান বেগম প্রথম আলোকে বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি আর্থিক কষ্টে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেপুলে নিয়ে দুটা ভাত খায়ে বাঁচতি পারি। সে ব্যবস্থাও উনি করি যাননি।’
ওলিয়ারের ভাই বকশিয়ার রহমান বলেন, ‘জনপ্রতিনিধির শেল্টার, বাঁচানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ—এসব দেখে আমরা মামলা করতে চাইনি। পরে পুলিশের অনুরোধে মামলা করি। প্রশাসন আর কোনো খোঁজ করেনি।’
মুক্তিযোদ্ধা ওলিয়ার নওয়াপাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। তিনি অভয়নগর উপজেলা শ্রমজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে হত্যার পর এখানকার শ্রমজীবী মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছে এবং মিছিল ও মানববন্ধন করেছে।
৫ আগস্ট দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই ব্যবসাকেন্দ্রে ঘাটশ্রমিকদের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। ভৈরব নদে ভেড়া জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের ফাঁকে আবদুর রাজ্জাক জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ওলিয়ার ভাইয়ের খুনিদের বিচার হলি সবচেয়ে খুশি হতেন ঘাটশ্রমিকেরা। যখনই শ্রমিকগের কিছু হয়িছে, বুক পাতি দাঁড়ায়েছে। কিন্তু খুনের বিচার হবি কি না, সে জানে কেবল আল্লাহ তাআলা।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাংসদ ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের প্রশ্রয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসা বেড়ে গিয়েছিল। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের স্থানীয় একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদকের বিষয়ে কথা বলতি অক্টোবরের ১০ তারিখ আমরা এমপিকে (সাংসদ রণজিৎ) নিয়ে বসিছিলাম। ওলিয়ার এমপিকে বলল, আপনি প্রসেনকে পুলিশে দেন, সে আপনার লোক। মাদক তো সে-ই বিক্কিরি করছে, ছড়াচ্ছে। এতে এমপি রেগে ওঠেন এবং এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে জানতে চান, প্রসেনকে কেন ধরা হচ্ছে না। তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তা সবার সামনেই বলেন, “আপনি চাইলেই প্রসেনকে ধরা সম্ভব।”’
আওয়ামী লীগের ওই নেতা দাবি করেন, ওই বৈঠকে সাংসদ দাবি করেন যে প্রসেনের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। তখন উপস্থিত নেতারা প্রত্যেকে তাঁদের মুঠোফোন নম্বর দিয়ে ওই পুলিশকে অনুরোধ করেন, কার সঙ্গে মাদক নিয়ে প্রসেনের কথা হয়, নম্বরগুলো অনুসরণ করে তা বের করতে। পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নেতাদের জানান, ওই বৈঠক শেষে সাংসদ প্রসেনকে না ধরার নির্দেশ দিয়ে যান।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, এমন তিনজন নেতার সঙ্গে ৫ আগস্ট এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের বিশ্বাস, ওই বৈঠকের পরই ওলিয়ারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওলিয়ারের ছেলেমেয়েরা দেখলেই জিজ্ঞেস করে, “কাকু, বিচার হবে না?” কী বলি, বলেন তো দেখি? এত লজ্জা লাগে।’