
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ অঞ্চলের ৫ নদী পুনঃখনন কাজ উদ্বোধন
যশোর (অভয়নগর) সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
শুক্রবার সকালে ভবদহ অঞ্চলের পাঁচটি নদী পুনঃখননের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে
নাব্য ফিরিয়ে আনতে ভবদহ অঞ্চলের পাঁচটি নদীর ৮১ দশমিক ৫ কিলোমিটার অংশ পুনঃখননের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) যশোরের অভয়নগর উপজেলার কালশীকুল গ্রামের ২১ ভেল্ট এলাকা থেকে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি শুরু করছে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চেলের জলাবদ্ধতা নিরসন হবে এমনটি আশ করছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লষ্টরা।
স্থানীয়দের উদ্দেশে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, “আমাদের পাশাপাশি এলাকাসীকেও এ কাজে অংশগ্রহণ থাকতে হবে। আপনারা জানেন কোথায় সমস্যা। কাজেই আপনাদের সমাধানও জানা। আপনারা যেভাবে চান, সমাধান সেইভাবেই করা হবে।”
নদী থেকে বালু উত্তোলন, ২ জনকে কারাদণ্ড
মৌলভীবাজারে মনু নদের বাঁধে ধস
আরো পড়ুন: সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন করা হবে: রিজওয়ানা
তিনি আরো বলেন, “ভবদহ পানি নিষ্কাশনের দ্বিতীয় পথ আমডাঙ্গা খালেও দ্রুত কাজ শুরু হবে। এখন আমরা নদী পুঃখনন শুরু করছি। এই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান আমরা করব।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, “শুক্রবার থেকে ভবদহ এলাকায় নদী পুনঃখনের কাজ শুরু হয়েছে। টেকা হরিহর নদীর কাজ শুরু হলে ভবদহর দুর্ভোগ লাঘব হবে। নদী খননের পর পলি অপসারণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রকল্প পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মামুন উর রশিদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডর প্রকল্প পরিচালক বি.এম. আব্দুল মোমেন, প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর গাজী নাজমুল হাসান, যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী এবং মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না।

রাজনীতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই দফা ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শন করেন। তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন এলাকাবাসীকে। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর যশোর ও খুলনার ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের আওতায় যশোর ও খুলনা অঞ্চলের হরিহর নদী (৩৫ কিলোমিটার), হরি-তেলিগাতি নদী (২০ কিলোমিটার), আপারভদ্রা নদী (১৮.৫ কিলোমিটার), টেকা নদী (৭ কিলোমিটার) ও শ্রী নদী (এক কিলোমিটার) পুনঃখনন করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, “জলাবদ্ধতা দূরীকরণে জনগণ উদ্ভাবিত টিআরএম প্রকল্প গণআন্দোলনে গৃহীত হয়। তবে, বিগত সরকার ২০১২ সালে ‘সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার’ অজুহাতে সেটি বাতিল করে দেয়।”
তিনি বলেন, “নদী খনন, টিআরএম চালু, স্লুইসগেট খোলা, আমডাঙ্গা খাল খনন করা এই চারটি দাবি ছিল। ইতোমধ্যে এই চারটি দাবি মেনে নিয়েছেন পানি সম্পদ উপদেষ্টা। জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। স্লুইসগেটের ২১ ভেল্টের ১২টা খুলে দিয়েছে। প্রবল বেগে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নদী খননের কাজ শুরু হয়েছে। এই খননের সঙ্গে টিআরএম চালু না হলে প্রকল্প ব্যর্থ হবে। আমরা আশা করছি, উজানে নদী সংযোগ ও টিআরএম বাস্তবায়ন হবে।”
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, “এবার সেনাবাহিনীর অধীনে নদী খনন বাস্তবায়ন হবে, এ কারণে একটু আশার আলো দেখছেন এলাকাবাসী।”

