২৪ ডিসেম্বর থেকে প্রথমবারের মত রেল সেবায় যুক্ত হতে যাওয়ায় খুশি নড়াইলবাসী

নড়াইল প্রতিনিধি
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে প্রথম বারের মত রেল সেবায় যুক্ত হচ্ছে নড়াইলবাসী।
সকল প্রস্তুতি শেষে নতুন এ রেল লাইন উদ্বোধনের অপেক্ষায় অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাওয়ায় খুশি এলাকাবাসী।
ঢাকা থেকে যশোর ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেললাইন নির্মাণ করে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো রেলপথ ব্যবহারের সুযোগ পেতে যাচ্ছে নড়াইলবাসী। ২৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের আওতায় খুলনা-ঢাকা এবং বেনাপোল-ঢাকা রেলপথে ট্রেন চলবে নড়াইলের বুকের ওপর দিয়ে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সব কাজ শেষ হয়েছে। দুই দফায় পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলও সম্পন্ন হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর থেকে এই রুটে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ও রূপালী এক্সপ্রেস নামের আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে। এই প্রকল্পের ২৮ কিলোমিটার রেলপথ পড়েছে নড়াইলে। নড়াইল শহর ও লোহাগড়া উপজেলায় একটি করে রেলস্টেশনও নির্মাণ করা হয়েছে।
নড়াইল রেলওয়ের সহকারী স্টেশনমাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, ‘ঢাকা-খুলনা পথে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-বেনাপোল পথে রূপসী বাংলা নতুন রেলপথ দিয়ে চলাচল করবে। এ ট্রেন দুটির সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। বাকি ছয় দিন চলাচল করবে। দিনে দুইবার ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বেনাপোল পথে চলাচল করবে ট্রেন দুটি। ট্রেন চলাচলের জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। এখন থেকে নড়াইলের মানুষ ট্রেনে মাত্র দুই ঘণ্টা ঢাকায় যেতে পারবে।’
রেলের দেওয়া সময়সূচি অনুসারে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছাড়বে সকাল ছয়টায়। ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছানোর নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে আবার ট্রেনটি ছেড়ে যাবে রাত আটটায়। খুলনায় পৌঁছানোর কথা ১১টা ৪০ মিনিটে। অন্যদিকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়বে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। ট্রেনটির যশোরের বেনাপোলে পৌঁছানোর কথা বেলা ২টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় যশোর থেকে ট্রেনটি ছাড়বে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে। আর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে।
প্রথমবারের মতো রেলপথে যাতায়াত সুবিধা পেতে যাচ্ছে নড়াইলের মানুষ। ফলে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার যেন শেষ নেই। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই রেল যোগাযোগব্যবস্থায় নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সার্বিকভাবে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।
সদর উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামের তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে পদ্মার বুকে পদ্মা সেতু, এরপর নড়াইলের কালনায় মধুমতী সেতু নির্মাণে সড়কপথে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। একসময় যেখানে ঢাকায় যেতে এক দিন লাগত, সেখানে এখন আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। রেল চালু হলে আরও কম সময়ের মধ্যে আমরা ঢাকায় যেতে পারব। সহজেই নড়াইল থেকে উৎপাদিত পণ্য পৌঁছে যাবে ঢাকায়। এতে জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা লাভবান হবে। নড়াইলে কলকারখানা গড়ে উঠবে। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে আমাদের জেলা।’
লোহাগড়া স্টেশনে ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি খুলনা রুটের ট্রেন লোহাগড়ায় থামবে, কিন্তু বেনাপোল রুটের ট্রেন লোহাগড়া স্টেশনে থামবে না। এমন খবরে শুরু থেকে প্রতিবাদ করছে লোহাগড়াবাসী। লোহাগড়ায় প্রতিটি ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। লোহাগড়াবাসী ট্রেনে যাতায়াত করবে, এটা দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এ স্বপ্নের বাস্তবায়নের দাবিতে মাঠে নেমেছেন তাঁরা। ২৪ ডিসেম্বর স্বপ্ন পূর্ণ হলে অল্প সময় ঢাকা যাবে নড়াইলের মানুষ। ###