Type to search

যশোরে মে দিবসে করনীয় বিষয়ক নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চার আলোচনা সভা 

যশোর

যশোরে মে দিবসে করনীয় বিষয়ক নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চার আলোচনা সভা 

প্রেস বিজ্ঞপ্তি
মহান মে দিবস উপলক্ষে যশোরে  নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চার যশোর শাখার উদ্যোগে সকাল ১১:০০ টায় যশোর অনুশীলন পাঠাগারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত  হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির নেতা কামাল উদ্দীন রানা। মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষক ও লেখক শ্যামল শর্মা, নয়া গণতান্ত্রিক গণ মোর্চা যশোর জেলা আহবায়ক খবির শিকদার। যশোর জেলা মুদ্রণ  শিল্প মালিক সমিতির সদস্য  রিয়াজ মাহমুদ লালন, যশোর হোটেল মালিক শহর আলী, প্রেস শ্রমিক হামিদুর রহমান, শ্রমিক প্রতিনিধি দুর্জয় সাহা, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন যশোর জেলা আহ্বায়ক সুমাইয়া শিকদার ইলা  ও রাইয়ান রশিদ আবির প্রমূখ।
আলোচনা সভায় আন্তজার্তিক শ্রমিক দিবসে তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তারা বলেন,
১ মে—আমাদের লড়াইয়ের দিন, প্রতিবাদের দিন, বুক উঁচিয়ে দাঁড়ানোর দিন। শিকাগোর সেই শ্রমিকরা আমাদের পথ দেখিয়ে গেছেন—যারা বলেছিলেন, “আমাদের রক্ত বৃথা যাবে না!” আমরা তাদের উত্তরসূরি, আমরা সেই আগুন বয়ে আনি বুকে, যে আগুন নিভে যায় না টান মেরে ছেঁড়া ফুসফুসে, ঘামে ভেজা জামায়, ফাটল ধরা তালুর ভিতরেও।
আজকে যারা দেশের হাল ধরেছে, তারা আমাদের শত্রু হিসেবেই হাজির হচ্ছে প্রতিদিন। ওদের চোখে আমরা শুধু শ্রমিক নই—একটা সংখ্যা, একটা ইউনিট, একটা উৎপাদনের মেশিন মাত্র। যখন আমরা রাস্তায় নামি, দাবি তুলি, তখন তারা গুলি চালায়। যখন আমাদের বেতন চাওয়া হয়, তারা তালা লাগায়, মামলা দেয়। গার্মেন্টস-শিল্প থেকে হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, অথচ সেই মালিকদের প্রতিনিধি বর্তমান সরকার কনফারেন্স করে বিদেশি লগ্নিকারীদের ডেকে এনে বলে—এই দেশে সস্তা শ্রম আছে। মানে, আমরা আছি। আমাদের ঘাম বিক্রি করে তারা লাভের পাহাড় গড়ে।
এই তৃতীয় শক্তির ইউনুস এর নেতৃত্বে এনজিও সরকার মুখে বলে, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা। কিন্তু আমরা দেখি—যে হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে করা যেসব অসম চুক্তিগুলো হয়েছে, সেগুলো একটাও বাতিল হয়নি। তিস্তা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই, ট্রানজিটের নামে এখনো আমাদের দেশের ভেতর দিয়ে তাদের পণ্য চলে যায়, আর আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে মরা খাঁড়িতে পরিণত হয়েছে। আমাদের বাজার, বন্দর, এমনকি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ভারতীয় লগ্নিকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই সরকার আগের পথেই হাঁটছে—মুখে স্বাধীনতার কথা বললেও, কাজে তারা একেকজন সম্প্রসারণবাদের কাছে আত্মসমর্পণকারী।
শুধু ভারত নয়—চীন-রাশিয়া এমনকি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের কাছেও এই সরকার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে তারা আমাদের গলা কেটে ঋণের বোঝা চাপাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য আজ এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে আমরা এক প্লেট ভাতের হিসেব করি, অথচ তারা হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে জনগণের ঘাড়ে কিস্তির দড়ি ঝুলিয়ে দেয়।
এই উন্নয়ন আমাদের নয়—এটা মালিক আর তাদের দোসরদের।
এই ব্যবস্থা আমাদের নয়। এই রাষ্ট্র আমাদের নয়। যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছে, তারা মালিক শ্রেণির দালাল, সাম্রাজ্যবাদের চাকর। তারা শুধু দমন করতে জানে—ছাঁটাই, মামলা, লাঠি, গুলি দিয়ে। কিন্তু তারা জানে না—আমরা কেমন জেদ নিয়ে বাঁচি, কেমন আগুন নিয়ে মরতে রাজি হই।
তথাকথিত জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা ছাত্র-যুবদের নতুন দল, শাসকশ্রেণীর অন্যান্য দল, লিবারেল নেতা—এরা কেউই আমাদের বন্ধু নয়। এরা শুধু আশ্বাস দেয়, ‘সংস্কার হবে’, ‘নির্বাচন হবে’, ‘বদল আসবে’। কিন্তু এই সংস্কারও হবে মালিকদের স্বার্থে। ভোটেও বদলাবে না শোষণ।
আগস্টের পরে আট মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনও খুনি হাসিনার দোসর এবং লুটপাটকারীদের বিচার হয়নি। হয়নি আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা। এসবের মধ্য দিয়ে তারা পথ করে দিচ্ছে পুরনো ভারত-হাসিনা ফ্যাসিবাদীদের এবং একই সাথে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে নব্য ফ্যাসিবাদীরা। যারা ধর্মের মোড়কে সাম্রাজ্যবাদের দালালি করে কাটিয়েছে চিরকাল।
আমাদের দেশে যখন এই পরিস্থিতি, তখন ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে, ভারতের আদিবাসী অঞ্চলে ‘অপারেশন কাগার’-এর নামে ভারত রাষ্ট্রের নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াকু মাওবাদীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। এই ঘটনাগুলো আলাদা কিছু নয়। এগুলো এক সূত্রে বাঁধা। আমাদের বিরুদ্ধে, পৃথিবীর মেহনতি মানুষের বিরুদ্ধে একটিই যুদ্ধ—সাম্রাজ্যবাদের যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে জয় পেতে হলে, আমাদের লড়াইও হতে হবে আন্তর্জাতিক, ঐক্যবদ্ধ। ১-মে আমাদের সেই শিক্ষায় দিচ্ছে।