

যুগান্তর প্রতিবেদন
যশোর সদর উপজেলার গোয়ালদহ গ্রামের শেষ প্রান্তে হরিহর নদ। এর ওপারে মনিরামপুর উপজেলার পলাশী গ্রাম। দুই উপজেলার সংযোগ স্থাপন ও যাতায়াতের একমাত্র উপায় সেতু। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এই নদের ওপর নতুন সেতু নির্মাণ শুরু করে। নদের দুই প্রান্তে গার্ডারও নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু সাড়ে তিন বছর পার হলেও শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণকাজ। তাই নদের মাঝখানে দেওয়া ক্রস বাঁধের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকার মানুষের। শুধু হরিহর নদের ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি নয়, জেলায় ৪টি নদনদীর ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডির অধীন ৮টি সেতুর কাজই বন্ধ রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ-এর অনুমোদন ছাড়াই কম উচ্চতায় সেতু নির্মাণের অভিযোগে উচ্চ আদালতে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের করা রিটে সেতুগুলোর নির্মাণকাজ ঝুলে আছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেতু এলাকার বাসিন্দারা। |
জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) তিনটি প্রকল্পে ২০২১ সালে সদরের ভৈরব নদের ওপর দায়তলা সেতু, একই নদের ওপর রাজারহাট সেতু ও ছাতিয়ানতলা সেতু, শার্শার বেতনা নদীর ওপর নাভারণ ঘোড়পাড়ায় দুটি, মনিরামপুর উপজেলার শ্রী নদীর ওপর মনিরামপুর-নেহালপুর সেতু এবং যশোর সদরে হরিহর ও মুক্তেশ্বরী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ৪১ কোটি ৬৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যয়ে আটটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে ৫টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। বিআইডব্লিউটিএ-এর অনুমোদন না নিয়ে কম উচ্চতায় সেতুগুলো নির্মাণকাজ শুরু করলে স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন সংগঠন আপত্তি তুলে স্মারকলিপি দেয়। আপত্তি আমলে না নিয়ে নির্মাণকাজ চালিয়ে যায় এলজিইডি। একপর্যায়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর আদালত তিন মাসের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ-এর নীতিমালা অনুযায়ী সেতুর কাজ সম্পাদন করতে বলেন। আদালতের নির্দেশের ছয় মাস পরও কাজ করেনি এলজিইডি। এরপর ২০২৪ সালের ২৮ মে আদালত এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ২০২৪ সালের ১১ জুন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর প্রতিনিধি ও যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ এলজিইডি কর্তৃপক্ষ আদালতে হাজির হয়ে ছয় মাসের মধ্যে নীতিমালা অনুযায়ী সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতির ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।
এদিকে সাড়ে তিন বছরে সেতু নির্মাণকাজ শেষ ও হস্তান্তর না হওয়ায় জনভোগান্তি বেড়েছে। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে মানুষ যাতায়াত করছে। নির্মাণাধীন সেতুর পাশ দিয়ে কাঠের সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হচ্ছে দুইপারের বাসিন্দাদের। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এ বিষয়ে যশোর সদরের গোয়ালদহ এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, হরিহর নদের ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি কাজ বন্ধ থাকায় জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। নদীর বুকে আড়বাঁধ দিয়ে বিকল্প চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে আড়বাঁধের কারণে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া আড়বাঁধ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।’
বাঘারপাড়ার ছাতিয়ানতলা এলাকার বাসিন্দা পবিত্র কুমার বিশ্বাস বলেন, সাড়ে তিন বছরেও ছাতিয়ানতলা হাট-ঘোপ এলাকায় ভৈরব নদের ওপর নির্মাণাধীন সংযোগ সেতুর কাজ শেষ হয়নি। তাই দুই পারের বাসিন্দারা ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতু ব্যবহার করছেন। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এলাকার মানুষ।’
সদরের দায়তলা সেতু এলাকার বাসিন্দা শামসুর রহমান বলেন, ‘সেতু না হওয়ায় কোনো যানবাহন যেতে পারে না। সেতুর সামনে নেমে বাসের সাঁকো দিয়ে পার হয়ে ওপাশ থেকে গাড়িতে উঠতে হয়। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। ১০ কিলোমিটার ঘুরে শহরে যেতে হয়।’
এ বিষয়ে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, ‘এলজিইডির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা আদালতে মুচলেকা দিয়েছেন ৬ মাসের মধ্যে নীতিমালা অনুযায়ী সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করবেন। কিন্তু ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও সেতু নির্মাণকাজ শুরু করেনি। এতে জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। অবিলম্বে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও নীতিমালার ভিত্তিতে সেতুগুলো নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ-এর অনাপত্তি নিয়ে নতুন করে সেতুর নকশা প্রণয়ন করবে এলজিইডি। ইতোমধ্যে এলজিইডির নকশা বিভাগের প্রকৌশলী ও পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেতুগুলো পরিদর্শন করেছেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন নকশা অনুমোদন হবে। নতুন নকশা পেলে সেতুগুলো নির্মাণ হবে।’