চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা। পোশাক বা কোনো অজুহাতে নারী হেনস্তা। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে লাশ পোড়ানো। মব বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার নৈরাজ্যে মানুষ মরছে অহরহ। জনমনে প্রশ্ন, তাহলে কি মবের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, প্রশাসন ও পুলিশের উদাসীনতায় এসব অপরাধ থামছেই না। মবের মাধ্যমে সমাজে ভয় চালু করা হচ্ছে।
ভোলায় নারীকে চুল কেটে জুতার মালা পরানো, নুরাল পাগলার লাশ পোড়ানো, চুরির অপবাদ দিয়ে রংপুরে ভ্যান চালককে পিটিয়ে হত্যা। এমনকি একাত্তর ও সংবিধান নিয়ে আলোচনা সভায় মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকীকে হয়রানি।
মতের অমিল, রাজনৈতিক বিরোধ কিংবা ছোটখাটো ইস্যুতেও তৈরি হচ্ছে মব। একের পর উচ্ছৃঙ্খল জনতার এসব কর্মকাণ্ড বা মবের ঘটনায় সরকারসহ সবপক্ষ বারবার কাগুজে বিবৃতি আর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে।
এ ধরনের সন্ত্রাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ খোদ আইন-শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গত এক বছরের হিসাবে আগস্ট ২০২৪ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ১৯৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে মব সৃষ্টি করে। এ সময়ে শুধু ঢাকা বিভাগেই এ ধরনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯২ জন। গেলো এক বছরে সবমিলিয়ে ৬৩৭ জন বিক্ষিপ্তভাবে উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রোশের শিকার হয়েছে।
মবের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশের নীরব ভূমিকায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। আর এসব ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ নীরব থাকলে পরিত্রাণ কোথায়- এমন প্রশ্নও উঠছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা আর পুলিশের উদাসীনতায় মবের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, সরকার কোনোভাবেই মব বন্ধ করতে পারছে না কিংবা বন্ধ করতে চাচ্ছে না কিংবা বন্ধ করার ক্ষেত্রে মনোযোগী হচ্ছে না। এ কারণে মব যারা করছেন তারা আস্কারা পাচ্ছেন।
নাগরিক কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, হয় সরকারের নিস্ক্রিতার কারণে অথবা সরকারের পরোক্ষো সমর্থনের কারণে মব হচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, মব সৃষ্টি করে সমাজে ভয় চালু করা হচ্ছে। আর টিআইবি মনে করে, সরকার প্রতিরোধ করতে পারছে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
মব বা এই নৈরাজ্য কোথায় শেষ হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না বিশ্লেষকরা