Type to search

মণিরামপুরে বালু উত্তোলনের মহোৎসব, হুমকির মুখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মনিরামপুর

মণিরামপুরে বালু উত্তোলনের মহোৎসব, হুমকির মুখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

জি. এম ফারুক আলম. স্টাফ রিপোর্টার:
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহি রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নীচ থেকে দেশের বৃহত্তম ঝাঁপা বাওড় থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় উপজেলার চালুয়াহাটি ও ঝাঁপা ইউনিয়ন যুবলীগের দুই সভাপতির নেতৃত্বে এ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে পাশেই ঝাঁপা বাওড়ের ভাসমান সেতুসহ তীরসংলগ্ন কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ভবন চরম ঝুঁকিতে পড়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে ভূক্তভোগিরা দাবি করেছেন।
সরেজমিন গেলে বিশাল আকৃতির ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের চিত্র চোখে পড়ে। বালু উত্তোলনের স্থানের উপরেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহি রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি আবাসিক ভবন। এ সময় বালু উত্তোলনের কাজে নিয়জিত শ্রমিক ইমরান হোসেন ও আবুল হোসেন জানায়, সাতক্ষীরার তালা থেকে দিনপ্রতি দুই হাজার টাকায় ভাড়া করে আনা হয়েছে তাদের। গত ১০ দিন ধরে এখান থেকে বালু উত্তোলনের কথা জানিয়ে তারা আরও বলেন, ইমরান খান পান্না ও সোহেল রানা নামের দুই যুবলীগ নেতা তাদেরকে দিয়ে বালু উত্তোলন করাচ্ছেন। পান্না উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এবং সোহেল রানা ঝাঁপা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।
শুক্রবার এ প্রতিবেদক ভাসমান সেতুর কাছ থেকে মান্না নামের এক নৌকা চালককে সাথে নিয়ে বালু উত্তোলনের ছবি তুলে ফেরার পর যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, শিমুল হোসেনের নেতৃত্বে একদল দূর্বৃত্তরা মান্নাকে মারপিট করে নৌকা না চালানোর হুমকি দেয়। জানতে চাইলে নৌকা চালক মান্নার মামা নয়ন হোসেন জানান, ছবি তুলে যাওয়ার পর সোহেল ও শিমুল হোসেন তাদের উপর চড়াও হয়ে মান্নাকে বেদম মারপিট করে। প্রতিবাদ করতে গেলে তাদেরকে সেখানে নৌকা না চালানোর হুমকিও দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা সোহেল রানা চড়-থাপ্পড়ের কথা স্বীকার করে বলেন, এ নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হলে পরে তা নিরসন হয়ে গেছে। অপর যুবলীগ নেতা ইমরান খান পান্না বলেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজে এ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ বালু উত্তোলনের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, বাওড়ের মাঝখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর কোন ক্ষয়ক্ষতি হবে না।
তথ্যমতে, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৪ ধারার ৮টি উপধারায় এবং ৫ ধারার ৩টি উপধারায় তীর ভাঙ্গন, আবাসিক ভবন, বাঁধ, সেতু, কালভার্ট, সড়ক-মহাসড়কের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এমন আশংকায় পাম্প বা ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ বা তলদেশ হইতে বালু বা মাটি উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এখানে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্ষমতার দাপটে এ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এ বিষয়ে ভয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না। তারপরও স্থানীয় অনেকেই এবালু উত্তোলন বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পলাশ কুমার দেবনাথের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা, ঘটনা সত্য হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, এ ব্যাপারে যতদ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোঃ তমিজুল ইসলাম খান বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *