Type to search

মণিরামপুরে করোনাযোদ্ধা ডাক্তারের বদলিতে ক্ষোভ

মনিরামপুর

মণিরামপুরে করোনাযোদ্ধা ডাক্তারের বদলিতে ক্ষোভ

অপরাজেয়বাংলা ডেক্স: গেল বছর করোনার শুরু থেকে জীবন বাজি রেখে ছুটছিলেন মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মুসাব্বিরুল ইসলাম রিফাত। হাসপাতালের দায়িত্বের বাইরেও রোগীদের সেবা দিতে দিন-রাত ছুটেছেন তিনি। যখনই কোনো রোগীর স্বজনদের কল পেয়েছেন ছুটে গেছেন সেখানে। বিনা পারিশ্রমিকে বাড়িয়েছেন সেবার হাত। কখনো উপজেলা প্রশাসনের সাথে কখনো নিজ উদ্যোগে ছুটেছেন তিনি। মানবিক গুণের কারণে অল্পদিনেই মণিরামপুরবাসীর মন জয় করে নেন ডা. রিফাত। হয়ে ওঠেন সবার প্রিয় মানবিক চিকিৎসক।

মণিরামপুরবাসীর প্রিয় এই মানুষটিকে হঠাৎ ছাড়তে হয়েছে নিজ এলাকা। গত মঙ্গলবার তার বদলির আদেশ আসে। আজ (বৃহস্পতিবার) মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার ডা. রিফাতের বদলির খবর ফেসবুকে আসে। প্রিয় মানুষটির আকস্মিক বদলির খবর মেনে নিতে পারছেন না মণিরামপুরের মানুষ। ডা. রিফাতের বদলি নিয়ে ফেসবুকে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। তার এই বদলির আদেশকে ‘ষড়যন্ত্র’ মনে করছেন অনেকে।
মণিরামপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মজনুর রহমান তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘মণিরামপুরে করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে রাতদিন ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার খেসারত হিসেবে মানবিক ডাক্তার খ্যাত রিফাতকে মুজিবনগরে বদলি! হায়রে প্রতিদান…।’
মণিরামপুর প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি তার আইডিতে লিখেছেন, ‘করোনা আক্রান্ত হলে যখন নিজের আপন মানুষগুলো দূরে সরে থাকে ডা. রিফাত তখন রোগীর কাছাকাছি যেয়ে চিকিৎসা দিয়েছে। যখন হাসপাতালের অন্য ডাক্তাররা রোগীর চিকিৎসা না দিয়ে যশোর সদরে রেফার করেছেন রিফাত সেই রোগীকে মনিরামপুর হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছেন। করোনা রোগীর বাড়ি যেয়ে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দিয়েছেন। আর তার ফল আজ বদলি। ছিঃ, আমরা এত অমানুষ।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানমের ছেলে আসিফ খান অভি লিখেছেন, ‘করোনাকালীন এই দুঃসময়ে জনগণের সবথেকে বেশি প্রয়োজন হলো একজন ডাক্তারকে। আর সেই ডাক্তার যদি হয় রিফাত ভাইয়ের মতো তবে তো কোন কথায় নেই। এই মুহুর্তে তাকে বদলি করে দেওয়া সম্পূর্ণ অমানবিকতা ও হঠকারিতা।’
এদিকে ডাক্তার রিফাতের বদলির আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে মণিরামপুরে কেন্দ্রীয় শহিদমিনার চত্বরে মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
মণিরামপুরের সন্তান ডা. রিফাত। তিনি অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. নজরুল ইসলামের ছেলে। মণিরামপুর থানা-সংলগ্ন রোকেয়া ক্লিনিক পরিচালনা করেন তার বাবা।
২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর নতুন চিকিৎসক হিসেবে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন রিফাত। এখনে যোগদানের পরেই ভালো সেবা দিয়ে অল্পদিনেই তিনি রোগীদের মন জয় করে নেন।
২০২০ সালের মার্চ থেকে উপজেলা প্রশাসনের সাথে করোনা রোগীদের বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত সেবা দিতেন ডা. রিফাত। চলতি বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তার সেবা আরো বাড়ে। হাসপাতালের ডিউটির বাইরে রাত-বিরাতে করোনা রোগীর পাশে গিয়ে বিনা পয়সায় সেবা দিয়ে সবার কাছে সমাদৃত হন তিনি।
করোনার ভয়াল গ্রাস রোধে কয়েকদিন আগে ডা. রিফাত নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি মণিরামপুরের ১৭টি ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে দল গঠন করতে চান; যারা সবসময় করোনা রোগীর পাশে থেকে বাড়ি বাড়ি সেবা দেবেন।
স্ট্যাটাসটিতে মণিরামপুর হাসপাতালের সেবার মান কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। তার স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হলে তখনই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রশ্নের মুখোমুখি হন তিনি। আর সেটাই ডা. রিফাতের জন্য কাল হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তখনই তার বদলির গুঞ্জন শোনা যায়। যদিও ডা. রিফাতের বদলিকে ‘স্বাভাবিক’ বলা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে ডা. রিফাত বলেন, ‘সরকারি চাকরি করি। বদলি হতে পারে। মণিরামপুরবাসী যেটা করছেন সেটা তাদের হৃদয়ের টান।’
মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শুভ্রারানী দেবনাথ বলেন, ‘গত মঙ্গলবার রিফাতের বদলির আদেশ পেয়েছি। তাকে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। কী কারণে বদলি করা হয়েছে সেটা বলতে পারব না।’সূত্র,সুবর্ণভূমি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *