Type to search

ভাইয়ের সাথে প্রতারণা করে পার পেয়ে ১২ ব্যাংক কর্মকর্তার চাকরি নিয়ে টান

যশোর

ভাইয়ের সাথে প্রতারণা করে পার পেয়ে ১২ ব্যাংক কর্মকর্তার চাকরি নিয়ে টান

 

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
আব্দুল হাই ও একরামুল নামে দু’ভাইয়ের প্রতারণায় চাকরি হারাতে বসেছেন ইসলামী ব্যাংকের চৌগাছা, যশোর ও নওয়াপাড়া শাখার ১২ কর্মকর্তা। প্রতারক একরামুল ও আব্দুল হাই ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের ধান্যহাড়িয়া গ্রামের মোসলেম আলী মোল্লার ছেলে।
জানা গেছে আব্দুল হাই ২০০৮ সালের ২৯ জুলাই ইসলামী ব্যাংকের চৌগাছা শাখায় একটি সঞ্চয়ী (এমএসএ) হিসাব খোলেন। যার নম্বর ২০৫০২৭০২০০২৯২৪০০। হিসাবের নমিনি ছিল তার ছোটভাই একরামুল। একাউন্ট খোলার পর আব্দুল হাই ২০১০ সালে সৌদিআরব চলে যান এবং ওই হিসাবে টাকা পাঠাতে থাকেন। এরমধ্যে হিসাবের নমিনি একরামুল ভাইয়ের সাথে চেহারার মিল থাকার সুযোগ নিয়ে আব্দুল হাইয়ের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংকে গিয়ে একটি চেক বই উঠান। পরে ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট ব্যাংকের যশোর শাখা থেকে ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। যশোর শাখা থেকে টাকা উত্তোলনের পর একই দিন তিনি ব্যাংকের নওয়াপাড়া শাখা থেকে ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। একই বছরের ১৮ আগস্ট তিনি প্রথমে নওয়াপাড়া শাখা থেকে ৬০ হাজার টাকা উত্তোলনের পর একই দিন যশোর শাখা থেকে ৬৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।এরপর একই বছরের ১০ অক্টোবর যশোর শাখা থেকে ৫০ হাজার এবং ১৭ অক্টোবর নওয়াপাড়া শাখা থেকে ১ হাজার ৪ শতটাকা উত্তোলন করেন। এরপর ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারী ব্যাংকের যশোর শাখা থেকে ৭৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। একই বছরের ১৩ ফেব্রæয়ারী ব্যাংকের যশোর শাখা থেকে ২৫ হাজার ৫ শত টাকা, ৫ মে যশোর শাখা থেকে ৭৫ হাজার, ২৭ মে যশোর শাখা থেকে ১ হাজার এবং ১৭ জুন যশোর শাখা থেকে ১৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এভাবে তিনি তার ভাইয়ের হিসাব থেকে ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা তুলে নেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে আব্দুল হাই ২০১৩ সালের জুন মাসের পর থেকে ওই হিসাব নম্বরে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন। এরপর ২০১৬ সালে বাড়ি ফিরে আব্দুল হাই ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর ভগ্নিপতি চৌগাছা উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের বছির উদ্দিনকে সাথে নিয়ে ব্যাংকের চৌগাছা শাখায় গিয়ে ‘ব্যাংকস্টেটমেন্ট’ গ্রহণ করেন। স্টেটমেন্ট দেখে ভাই একরামুল কোন কোন তারিখে কত টাকা তুলেছেন বিষয়টি নিশ্চিত হন। তবে সে সময় ব্যাংক কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কেন খোঁজ খবর নিচ্ছেন জানতে চাইলে আব্দুল হাই ও তার ভগ্নিপতি বলেন আমাদের পারিবারিকভাবে একটু সমস্যা হয়েছে। এজন্য হিসাব দেখতে এসেছি। এনিয়ে তাদের পারিবারিক গোলযোগের সৃষ্টি হয়। সেসময় যাদবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানকে জানিয়ে তাদের পারিবারিক মিমাংসা হয় এভাবে, ‘যতদিন একরামুল তার ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব থেকে তুলে নেয়া ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা পরিশোধ না করতে পারবেন, ততদিন একরামুলের সাড়ে তিনবিঘা আবাদী জমি আব্দুল হাই চাষাবাদ করবে।’ এই মিমাংশার পর বিষয়টি সেখানেই শেষ হয়।
এরপর আব্দুল হাইয়ের ওই ব্যাংক হিসাবে আর কোন লেনদেন করেননি। অথচ দীর্ঘদিন পর আব্দুল হাই গত ১৩ নভেম্বর-১৯ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট ‘ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা খোয়া যাওয়া প্রসঙ্গে’ একটি আবেদন করেন। এ বিষয়ে তদন্তের শুরুতে আব্দুল হাইকে তার ছোট ভাই একরামুলকে ব্যাংকে আনার জন্য বারবার বলা হলেও একরামুল তার ছোটভাইকে ব্যাংকে হাজির না করে ব্যাংক কর্মকর্তারা তার টাকা তুলে নিয়েছেন বলে দাবি করতে থাকেন। এদিকে আব্দুল হাই তার ভাই একরামুলকে তদন্ত কমিটির মুখোমুখি না করায় ব্যাংকের আভ্যন্তরীন তদন্তে এরকম ‘ভুলের জন্য’ চেকগুলি ভাঙানোর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অর্থনৈতিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ব্যাংকটির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ দুইভাইয়ের এই প্রতারণার দায় ওই কর্মকর্তাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে সমাধান করতে চাচ্ছেন। ফলে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ না করতে পারলে চাকুরী নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বেন ওই কর্মকর্তারা।
চেকগুলি ভাঙানোর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের একজন হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ওই গ্রাহক যে অভিযোগ এনেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তারা যেদিন ব্যাংক স্টেটমেন্ট নেন, সেদিন স্টেটমেন্ট নেয়ার পর তাদের দ’ুজনের কথায় আমাদের সন্দেহ হলে আমি জানতে চাই কোন সমস্যা হয়েছে? তখন আব্দুল হাইয়ের ভগ্নিপতি বছির উদ্দিন বলেন এটা আমাদের পারিবারিক সমস্যা। একরামুল নামে আব্দুল হাইয়ের এক ভাই এই হিসাব থেকে টাকা তুলে নিয়েছে।’ হাফিজুর রহমান আরো বলেন, ভাই টাকা তুলে নিয়েছেন জেনেই ২০১৩ সাল থেকে ওই হিসাবে আব্দুল হাই লেনদেন করা বন্ধ করে দিয়েছেন। ২০১৬ সালে বিদেশ থেকে বাড়ি এসে তারা স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানিয়েই এবিষয়ে পারিবারিকভাবে মিমাংসা করে নিয়েছেন। অথচ এতদিন পর এখন তারা আমাদের বিরুদ্ধে প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করছেন। অভিযোগ করার পর আব্দুল হাইকে বারবার তার ভাই একরামুলকে ব্যাংকে নিয়ে আসার জন্য বলা হলেও সে তাকে তদন্ত কমিটির মুখোমুখি করছে না। আব্দুল হাই, একরামুল ও তার পরিবারের এই প্রতারণায় আমাদের ১২ জন সাধারণ কর্মচারীর চাকরিই এখন হুমকির মুখে।
আব্দুল হাইয়ের ব্যবহৃত মোবাইল নং ০১৯৫৪৩৭৮৬৮০ তে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করলেও কোন কথা বলেন নি। তবে ধান্যহাড়িয়া গ্রামের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, ওই পরিবারটিই এমন। তার বড় ভাই শামছুল মোল্লা গ্রামের বিভিন্ন লোকদের নিকট থেকে বিদেশ পাঠানোর নাম করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করে দু’বছর ধরে পালিয়ে আছেন।
ইসলামি ব্যাংক চৌগাছা শাখার ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আব্দুল হাই আমাদের প্রধান কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এরইমধ্যে একবার তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছেন। তদন্ত সম্পন্ন না হলে কিছু বলা যাচ্ছে না।
যাদবপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। তখন এটা নিয়ে তাদের পরিবারে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। সেসময় তার পিতা নিজে আমাকে বলেন এটা আমাদের পরিবারের বিষয়। আমার আরেক ছেলে টাকাগুলি তুলে নিয়েছে। বিষয়টি আমরা পারিবারিকভাবেই সমাধান করেছি। তবে এখন শুনছি আব্দুল হাই এবিষয়ে ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *