বিবাদমান জমি থেকে রাতের আঁধারে ধান কর্তণ

বিবাদমান জমি থেকে রাতের আঁধারে ধান কর্তণ
অভয়নগরে পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে দ্বরে দ্বারে ঘুরছেন এক বিএনপি পরিবার
স্টাফ রিপোর্টার
যশোরের অভয়নগর উপজেলার দেয়াপাড়া গ্রামের এক বিএনপি পরিবার তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। নাবালক অবস্থায় পিতার মৃত্যু হওয়ায় ওই জমিটির বর্গাচাষী মালিক বনে গেছেন বলে ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ। বিবাদমান জমিনিয়ে মোকাম ল্যান্ড সার্ভে ট্রইবুনাল(এল এস টি) মামলায় ট্রইবুনাল ওই ভূক্তভোগীর পক্ষে রায় দিয়েছেন। আদালতের রায় ও ডিগ্রি পেয়ে জমিতে এবছর বোরো আবাদ করেছিলেন ওই বিএনপি পরিবার কিন্তু রাতের আঁধারে পাকা ধান কেটে নিয়েছে প্রতিপক্ষ। এর আগে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে স্যালো ম্যাশিন চুরি সহ একাধিক ঘটনার অভিযোগ দিয়েছেন ওই পরিবার কিন্তু এ পর্যন্ত থানা পুলিশ কোন মামলা গ্রহণ করেনি।
আদালতের রায় ও ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দেয়াপাড়া গ্রামের স্থানীয়জমিদার খ্যাত আবুল হক মোল্যা দুই পুত্র উপজেলা বিএনপি নেতা মাসুদ রানা, কামরুজ্জামান রাজু, দুই কন্যা সনিয়া খান ও রুপা খানকে রেখে অকাল মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তার সন্তানেরা নাবালক ছিলো। যে কারনে আর এস জরিপের সময় তারা জমিজমার সঠিক রেকর্ড করাতে পারেনি। আরএস রেকর্ডে আবুল হক ম্যোল্যার অনেক জমিজমা তখনকার বর্গাচাষীদের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। সে ধারাবাহিকতায় উপজেলার পুড়াখালী মৌজায় অবস্থিত ৪৫ শতক জমি ভুলবশত বিবাদি পক্ষের পিতা খাতের মল্লিকের নামে রেকর্ড হয়। যা এস এ১০১৬ খতিয়ানের ৬৫৬ দাগে এবং আর এস ৪৪৫ খতিয়ারে ৮৯৫ দাগে অবস্থিত। খাতের মল্লিকের মৃত্যুর পর ওই জমির বর্তমান মালিক বনে গেছেন তার পুত্র আছর আলী মল্লিক, ওহাব মল্লিক, নওশের মল্লিক, শহিদুল মল্লিক, মহির মল্লিক, আতাউর মল্লিক, কন্যা মোমেনা বিবি ও হলুদ বিবি।
আবুল হকের পুত্রদের অভিযোগ আর এস রেকর্ডের চুড়ান্ত প্রিন্ট পর্চা হাতে পেয়ে জানতে পারেন তাদেরজমি প্রতিপক্ষের নামে রেকর্ড হয়েছে। রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবুল হকের পুত্র কামরুজ্জামান রাজু গত ১১/০৬/২০১৫ খ্রি. তারিখে যশোরে বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে ট্রইবুনালে মৃত খাতের মল্লিকের সন্তানদের বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন। গত ৯ জানুয়ারি ট্রইবুনাল বাদিরঅনুকুলে রায় ও ডিগ্রি জারি করেন। রায় পেয়ে আবুল হকের ওয়ারেশরা মিলে ওই জমিতে এ বছর বোরো ধান চাষ করেন। বাদির অভিযোগ, মামলায় হেরেযাওয়ার আশংকায় বিবাদি পক্ষ ও্ই জমি স্থানীয় আন রেজিস্ট্রি ‘ শ্রীধরপুর ইউনিয়ন কলেজে’ দান করেছেন। বর্তমানে ভোগদখলে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ। কামরুজ্জাম রাজু জানান, তিনি এ বছর ধান রোপন করেছিলেন। ধান খেতে সেচর জন্য নলকূপ স্থপনকরেছিলেন। পানি তোলার জন্য পাম্প বসিয়ে ছিলেন। কিন্তু কলেজ কর্তপক্ষ তাদের পাম্প খুলে নিয়ে যায়। তার লাগানোপাকা ধান রাতের আধারে কেটে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় তিনি থানায় পৃথক পৃথক ভাবে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।নিরুপায় হয়ে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ ইমাদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিবাদি পক্ষ মৃত খাতের মল্লিকের ছেলে আছর আলী মল্লীক জানান,‘জমিটি তার পিতা আবুল হক মোল্যার ওয়ারেশদের কাছ থেকে কিনেছিলেন। ওই বুনিয়াদে তারা আর এস রেকর্ডের মলিক হয়েছেন। বর্তমানে তারা ট্রইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আফিল করেছেন।’
শ্রীধরপুর ইউনিয়ন কলেজের অধ্যাক্ষ মো: কামাল শেখ বলেন, ‘ওই জমিটি কিছুদিন আগে আছর আলীরা কলেজে দান করেছেন। জমি নিয়ে মামলা আছে। মামলায় বাদি পক্ষ কামরুজ্জামান রাজুরা জিতেছেন। ওই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আফিল করা হয়েছে। আদালত আফিল গ্রহণও করেছেন কিন্তু রাজুদের লোকজন ওই জমিতে নলকূপ ও পাম্প বসিয়ে ধান চাষ করেছিলো। স্থানীয় লোকজন সে পাম্প খুলে কলেজে আটকে রেখেছেন। তিনি আরো জানান, ওই জমিটি কলেজের কাছ থেকে বন্দকী নিয়েছেন কলেজের এক কর্মচারি তিনিই মুলত ধান কেটেছেন।’