Type to search

বিজয়ের মাসে প্রত্যাশা সাম্য, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র ফিরবে

সাহিত্য

বিজয়ের মাসে প্রত্যাশা সাম্য, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র ফিরবে

বিলাল হোসেন মাহিনী

বাঙালির মহান বিজয়ের মাস শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়েছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়ের মাসে দেশবাসীর প্রত্যাশা হলো শান্তির বাংলাদেশ। বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ চায় বাংলার শান্তি প্রিয় মানুষ। অধিকার, সাম্য ও সুবিচার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। সাথে বিকশিত হতে হবে পূর্ণ গণতন্ত্র। ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌছে যাক। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয় এ মাসে। ডিজিটালাইজেশন ও উন্নয়নে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলেও পূর্ণ গনতন্ত্রের বিকাশ, সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা স্থায়ী হয়নি এখনো। এগুলো স্থায়ী হলে বাংলাদেশ সত্যিকারের সোনার দেশে পরিণত হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হলে স্বাধীন জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালিরা, অর্জন করে নিজস্ব ভূ-খন্ড ও সার্বভৌমত্ব। আমরা পাই সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা। ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিলো, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয়ের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এ দিনে।
স্বধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ যাদের নেতৃত্ব ও অবদানে আমরা পেয়েছি তাদের মধ্যে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান সর্বাগ্রে। বাংলাদেশ নামক ভূখ-ের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। যাকে পারিবারিকভাবে আদর করে ডাকা হতো খোকা, আপামর জনতার দেয়া নাম ‘বঙ্গবন্ধু’, কেউ বলে স্বাধীনতার মহানায়ক, কেউ বলে রাজনীতির কবি, বাংলাদেশের সংবিধান তাকে দিয়েছে জাতির পিতার স্বীকৃতি। বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে জাতির পিতাসহ বাংলাদেশ বিনির্মানে আত্মত্যাগকারী ও অবদান রাখা সকলের প্রতি রইলো বিন¤্র শ্রদ্ধা।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে বাংলাদেশে ঐতিহাসিক যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে, প্রতিটি ঘটনার মূখ্য চরিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন; ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের সাধারণ নির্বাচন; ১৯৬২ সালে শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন; ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন; ১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলা; ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথান; ১৯৭০ সালের নির্বাচন; ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ; ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা; ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ পুরোটাই বঙ্গবন্ধুময়। এছাড়াও মওলানা ভাসানী, সাত বীর শ্রেষ্ঠ, সেক্টক কমা-ারগণ, জাতীয় চার নেতা, আ স ম রব, শাহজাহান সিরাজ, ড. কামাল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীসহ অসংখ্য বীর যোদ্ধার অসামান্য অবদান রয়েছে।

বিজায়ের সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি এবং উন্নয়নের এ ধারা অব্যহত থাকলে আগামিতে আমরা আধুনিক এবং উন্নত দেশে পরিণত হব, ইন শা আল্লাহ। এরই মধ্যে পদ্মা বহুমূখী সেতু উদ্বোধন হয়েছে। ভাগ্য খুলেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে নতুন সম্ভবনা। এছাড়াও অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, তন্মোধ্যে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সারা দেশজুড়ে রাস্তাঘাট কালভার্ট নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচক ও জরিপে এগিয়েছে বাংলাদেশ।

পেছন ফিরলে দেখা যায়, বিগত ৫১ বছরে আমাদের অর্জন খুব একটা কম নয়। হয়তো অর্জন আরও বেশি হতে পারত; তবে যা হয়েছে তা খুব সামান্যও নয়। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে সম্মানজনক দেশ ও রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আমাদের আরও অনেক বিষয়ে আরও গভীর মনোযোগ দিতে হবে। যেমন- সাম্য, সুশাসন ও গণতন্ত্র। এজন্য রাজনৈতিক সহাবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি। ৫০ বছরে আমাদের যে উন্নয়ন, তার মধ্যে ‘সুশাসন’-এর অভাব প্রকট। সুশাসন, সাম্য, ইনসাফ ও পূর্ণ গণতন্ত্র না থাকা সত্ত্বেও যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু উচ্চ প্রবৃদ্ধি সুশাসনের বিকল্প নয়। প্রবৃদ্ধি ও সুশাসন পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে চলতে হবে। এ যোগসূত্র দুটোকেই বেগবান ও টেকসই করবে, ভবিষ্যতে টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে এ সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন।
পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক প্লান্ট, বঙ্গবন্ধু ট্যানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, উড়ালসেতু প্রভৃতি বড় বড় কাঠামোর কারণে জাতীয় প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার বজায় থাকলেও শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, সুশাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সূচকগুলোতে আমাদের অবস্থান সম্মানজনক বলা যায় না। স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এখন আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন ও গণতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রা শুরু হোক, এটিই সবার আন্তরিক অভিপ্রায়।