
বাঙালির বিজয়ের ইতিহাস ও অংশীজন প্রশ্ন!
বিলাল হোসেন মাহিনী
বাঙালি-অবাঙালি, পাহাড়ি-সমতলি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশি নাগরিক ও বিশ্ববাসীকে জানাই মহান বিজয়ের মাসে বিজয়ী বিপ্লবী শুভেচ্ছা। সশ্রদ্ধ সালাম মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ও গাজীদের।
একাত্তরের ডিসেম্বরে মহান মুক্তিযুদ্ধের ফলাফল তথা নতুন ভূখন্ড ও নতুন পতাকার মালিক আমরা সবাই। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এই মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের সমান অংশীজন। যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব কাউকে না কাউকে দিতে হয়, কিন্তু একটা দেশের স্বাধীনতার লড়াই কোনো একক নেতার দ্বারা সংগঠিত হতে পারে না। দেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় গণ আন্দোলনের মাধ্যমে।
আমাদের দেশের স্বাধীনতা হুট করে হয়নি। কিন্তু বিগত ৫৪ বছর আমাদের জানতে ও বুঝতে দেয়া হয়নি আমাদের স্বাধীনতার পেছনের হাজার বছরের আজাদীর সংগ্রাম ও ইতিহাসকে। ভাবটা এমন যেনো একাত্তরে হুট করে ৯ মাস যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীন হয়ে গেছি!
আমাদের এই ভূখন্ডের আদি পরিচয় ও ইতিহাসের ধারাবাহিকতা আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানতেই দেয়া হয়নি।
আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে সিন্ধু ও মুলতান জয়ী মুহাম্মাদ বিন কাসিম, যিনি ৭১২ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সূচনা করেন। সুলতান মাহমুদ, মুহাম্মদ ঘোরি, ইখতিয়ার উদ্দিন মু. বকতিয়ার খিলজি, মুঘল শাসন থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন, সিপাহী বিপ্লব, বঙ্গভঙ্গ ও বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনসহ পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টির ইতিহাস ভুলিয়ে রাখা হয়েছে।
বাঙালি মুসলিমদের ইতিহাস অনেক লম্বা। দিল্লির শাসনের বিপক্ষে মুসলমান শাসকদের স্বাধীন সুলতানী আমল, ব্রিটিশদের উপনিবেশ থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের আজাদির আন্দোলন, ৪৭ এর স্বাধীনতা, ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ গঠন, ৭৫ এ সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন, ৯০ এর গনঅভ্যুত্থান, এবং ২০২৪ এর গনঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ২.০ গড়ার যাত্রা - এই সবই আমাদের রাজনৈতিক পথ চলা, আমাদের ইতিহাসের মাইলস্টোন মোমেন্ট। ৪৭-৭১-২৪ একসাথে ধারণ করে, বাঙালি আর মুসলিম - এই দুই আইডেন্টিটি সাথে নিয়েই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস ( ভারতীয় ইতিহাসও বটে), সেইখানে ৭১ এর আগে বাঙালির কোন অতীত নাই, ভাষা আন্দোলনে তৎকালীন ডাকসু জিএস অধ্যাপক গোলাম আযমের অসামান্য অবদান স্বীকার করা হয় না। ভাবটা এমন ছিলো, শেখ মুজিব বাদে কোন নেতা নেই। এমনকি ভাসানীও নেই, তাজউদ্দীনও নাই। এই চরম দলীয় ইতিহাসের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ, বাম আর সেকুলাররা যেই রাজনীতি দাড় করায়, সেটা ফ্যাসিস্ট আর ইসলামোফোবিক হইয়া উঠে। বাংলাদেশ যে জেনারেশনাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়া যাচ্ছে, তাতে এই ফ্যাসিস্ট আর ইসলামোফোবিক ইতিহাস চর্চা এবং রাজনীতির একটা সমাপ্তি ঘটবে সামনের দিনে। ইন শা আল্লাহ।
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও নতুন সংবিধান প্রনয়ণে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লব শক্তি যোগাবে অন্ততকাল ধরে।
বিলাল হোসেন মাহিনী
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক
বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদ, কেন্দ্রীয় সংসদ।
নির্বাহী সম্পাদক : ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র
প্রকাশক ও সম্পাদক :
মোঃ কামরুল ইসলাম
মোবাইল নং : ০১৭১০৭৮৫০৪০
Copyright © 2025 অপরাজেয় বাংলা. All rights reserved.