আবু হানিফ, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ঃ বাগেরহাট ঘূর্ণিঝড় আম্পানের চেয়ে জোয়ারের পানিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাগেরহাটের চিংড়ি চাষিদের।গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে জেলার ৫ হাজার চিংড়ি ঘের।এর ফলে শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেক চাষি।টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানাতে না পারলেও চাষিদের ক্ষতি পোষাতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন মনে করছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়,অতিবৃষ্টি ও ভরা মৌসুমে জোয়ারের পানি কয়েক ফুট বেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।এর ফলে জেলার বাগেরহাট সদর,মোরেলগঞ্জ,শরণখোলা,রামপাল, মোংলা,চিতলমারী এই ৬ উপজেলার প্রায় ৫ হাজার মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে।এতে চাষিদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।তবে এর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে মোংলা ও মোরেলগঞ্জের চাষিরা।
মোংলায় এক হাজার ৭৬৫ এবং মোরেলগঞ্জে ২ হাজার ২৬৫ ঘের ডুবেছে জোয়ারের পানিতে। সরকারি হিসেবে আম্পানের আঘাতে বাগেরহাট জেলায় চার হাজার ৬৩৫টি মৎস্য ঘের তলিয়ে চাষিদের দুই কোটি ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছিল।এসময়ও চাষিরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি দাবি করেছিলেন।জোয়ারের পানিতে এতো বেশি ক্ষতি হবে এটা কখনও চিন্তাও করতে পারেননি চিংড়ি চাষিরা।
রামপাল উপজেলার কাজী কামরুল ইসলাম বলেন,আম্পান ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের চার ভাইয়ের প্রায় ৫০০ বিঘার ঘেরে দুই কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়।পরে ধার দেনা করে আবারও চাষ শুরু করি। গত ১৫ দিন ধরে মাছ বিক্রি শুরু করেছি।এর মধ্যেই জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে ঘেরের কয়েক কোটি টাকার মাছ।এই পানি কমার পরে আসলে কি পরিমাণ মাছ ঘেরে থাকবে আল্লাহ ভাল জানেন।এবার যদি ভাল দামে অনেক মাছ বিক্রি করতে পারতাম তাহলে আম্পানের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব ছিল।সব শেষ হয়ে গেল।
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন,ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পরে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলাম।যখনই চাষিরা মাছ বিক্রি শুরু করল তখন জোয়ারের পানিতে ঘেরগুলো তলিয়ে মাছগুলো ভেসে গেল।জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে আমাদের চাষিদের শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন,জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের ছয়টি উপজেলার প্রায় ৫ হাজার মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।টাকার অংকে চাষিদের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়টি নিরুপণ করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছি আমরা।
বাগেরহাট জেলায় প্রায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ৭৮ হাজার বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘেরে চিংড়ি চাষ হয়েছে।গত অর্থ বছরে সাড়ে ১৬ হাজার মেট্রিক টন বাগদা ও সাড়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টন গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল বাগেরহাট জেলায়।
প্রকাশক ও সম্পাদক :
মোঃ কামরুল ইসলাম
মোবাইল নং : ০১৭১০৭৮৫০৪০
Copyright © 2025 অপরাজেয় বাংলা. All rights reserved.