বিলাল হোসেন মাহিনী
মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো শারীরিক সুস্থতা। পবিত্র রমজান মাসে দীর্ঘ পানাহার বিরতিতে থাকায় রোজাদার ঔষধ সেবন ছাড়াই লাভ করে থাকে সতেজতা ও সুস্থতা। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণিত। রমজানে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ অনুগ্রহ লাভ করে থাকেন। গবেষণা করে দেখা গেছে, রোজায় মানুষের স্বাস্থ্যগত প্রভূত উপকার হয়। এর রয়েছে শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষতার নানা দিক। রোজাদার দিনের বেশির ভাগ সময় না খেয়ে থাকেন। এর ফলে তার শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিন কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পায়। শরীরকে বিষমুক্ত করার একটি কার্যকর উপায় সিয়াম তথা রোজা। যারা ওজন কমাতে চান, তারা সহজেই এ সময়টা কাজে লাগাতে পারেন। কারণ, রোজা রাখার পাশাপাশি ইফতার ও সাহরিতে পুষ্টিকর খাবারকে প্রাধান্য দিলে খুব সহজেই ওজন কমানো যেতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, রমজানে নিয়মিত রোজা রাখার ফলে স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগ ও স্থূলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোজায় পেট খালি থাকার কারণে খাবার হজমের অ্যাসিড এই সময় ধীরগতিতে নিঃসরিত হয়, যা হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোজার কোনো বিকল্প নেই। কারণ দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়। এ ছাড়া যেকোনো নেশাগ্রব্য থেকে মুক্তি পেতেও রোজা কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
রোজা ভঙ্গের মাসয়ালা : যেসব কারণে রোজ ভঙ্গ হয় না :
রোজার আরবি প্রতিশব্দ ‘সাওম’। যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায়, ‘সাওম বলা হয় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোজা ভঙ্গকারী কাজ থেকে বিরত থাকা’। আজ আমরা জেনে নেব- যেসব কাজের কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না :
রোজ ভঙ্গের কারণ : যে সকল কাজে রোজা ভঙ্গ হয় :
ক) আহার অথবা পানকরা। খ) স্ত্রী সহবাস করা। গ) ভুলে খাওয়া বা পান করার পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করা। (ফাতওয়া শামি, খ- : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫) ঘ) বিড়ি-সিগারেট বা হুঁকা সেবন করা। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খ- : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮) ঙ) কাঁচা চাল, আটার খামির বা একত্রে অনেক লবণ খাওয়া। (ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খ- : ০১, পৃষ্ঠা : ১৯৯) চ) এমন কোনো বস্তু খাওয়া, যা সাধরণত খাওয়া হয় না। যেমন- কাঠ, লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা ইত্যাদি। (ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খ- : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২; জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খ-: ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮) ছ) নিজের থুতু হাতে নিয়ে গিলে ফেললে। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খ- : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২) জ) ভুলে স্ত্রী সম্ভোগের পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে— আবার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস সম্পর্ক করা। (ফাতওয়া শামি, খ-: ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫) ঝ) কানে বা নাকের ছিদ্র দিয়ে তরল ওষুধ দেওয়া। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, খ- : ০২, পৃষ্ঠা : ১২৭) ঞ) দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি তা থুতুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কণ্ঠনালিতে চলে যায়। (ফাতাওয়া শামি, খ- : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৬৭) ট) মুখে পান দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদিক করা। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, খ- : ০২, পৃষ্ঠা : ১৭২) ঠ) হস্তমৈথুন করা। (ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, খ- : ০৬, পৃষ্ঠা : ৪১৭) ড) রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় কুলি কিংবা নাকে পানি দেওয়ার সময় কণ্ঠনালিতে পানি চলে যাওয়া। (আহসানুল ফাতাওয়া, খ-: ০৪, পৃষ্ঠা : ৪২৯) ঢ) কাউকে জোর-জবদস্তি করে পানাহার করানো। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, খ- : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২) ণ) রাত মনে করে সুবহে সাদিকের পর সাহরি খাওয়া। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খ- : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮) ত) ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা বা বমি আসার পর তা গিলে ফেলা। (ফাতহুল কাদির, খ- ০২, পৃষ্ঠা : ৩৩৭) থ) সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে ভুলে দিনে ইফতার করা। (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৯)
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সুস্থতার সাথে রোজার মাসয়ালা জেনে ও যথাযথ হক আদায় করে পবিত্র রমজানের সবকটি রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।
বিলাল হোসেন মাহিনী, পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাস, যশোর।
প্রকাশক ও সম্পাদক :
মোঃ কামরুল ইসলাম
মোবাইল নং : ০১৭১০৭৮৫০৪০
Copyright © 2025 অপরাজেয় বাংলা. All rights reserved.