নড়াইল ফ্যামেলি কেয়ার (প্রাঃ) হাসপাতালে মাতাল চিকিৎসকের খামখেয়ালিপনায় এক রোগির ১০বার হাসপাতাল পরিবর্তন

মির্জা মাহমুদ রন্টু, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ নড়াইল ফ্যামেলি কেয়ার (প্রাঃ) হাসপাতালে চিকিৎসকের খামখেয়ালিপনায় এক দরিদ্র রোগির কয়েক লাখ টাকা অর্থদন্ডের অভিযোগ উঠেছে। গত ১০ আগস্ট রোগিকে সিজারের পর থেকে এ পর্যন্ত রেয়ার ‘ও’ নেগেটিভ গ্রূপের ১৮ব্যগ রক্ত দিতে হয়েছে। রোগিকে সুস্থ করতে নড়াইল, যশোর, খুলনা ও ঢাকায় ১০বার হাসপাতাল পরিবর্তন করতে হয়েছে। সর্বশেষ অপারেশন করে রোগির জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছে। ভূক্তভোগি পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকের ভূলের খেসারত দিতে গিয়ে তারা ধার-দেনা করে, সুদে লোন নিয়ে রোগির পেছনে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে তারা এখন সর্বশান্ত। এখন এ পরিবার রোগির সমস্ত খরচ এবং অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিচার দাবি করেছেন। ভূক্তভোগি রোগির ভাই আল আমিন লিখিত অভিযোগে জানান, নড়াইল শহরের ভওয়াখালী এলাকায় বসবাসরত বোন নাজমা বেগম (২৬), স্বামী আশরাফুল ইসলাম শহরের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করে। নাজমা সন্তান প্রসবের জন্য গত ১০ আগস্ট সকাল ১১টায় নড়াইল ফ্যামেলি কেয়ার হাসপাতালে (প্রাঃ) ভর্তি হলে হাসপাতালের মালিক ডা. মুকুল হুসাইন ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুজ্জামান তার বোনের সিজার করেন। সিজারের পর থেকেই জরায়ু থেকে অল্প অল্প রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ৫দিন পর ১৬ আগস্ট ডা. মুকুল রোগি সুস্থ না হওয়া সত্তে¡ও রোগিকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন। রোগি বাড়ি যাওয়ার ৮ দিন পর ২৩ আগস্ট থেকে প্রচুর পরিমানে রক্তক্ষরণ হলে তাকে ফ্যামেলি কেয়ার হাসপাতালে আনা হলেও চিকিৎসকরা আর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে পারেননি। এরপর শুরু হয় শুধু হাসপাতাল পরিবর্তন। রোগিকে সুস্থ করতে এ ক’দিনে নড়াইল সদর হাসপাতাল, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, যশোর ইবনে সিনা হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ৯বার হাসপাতাল পরিবর্তন করতে হয়েছে। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর তাকে যশোরের কিংস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার রোগিকে বাঁচাতে জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। এ পর্যন্ত রোগিকে সুস্থ করতে ধার-দেনা ও সুদে করে তিন লাখ টাকার বেশী খরচ হয়েছে। এখন আমরা রোগির চিকিৎসার সমস্ত খরচ এবং অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিচার দাবি করছি। ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার এ প্রতিনিধিকে জানান, রোগিকে বাঁচাতে তার জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো কোনো রোগির ক্ষেত্রে এ ধরনের রক্তক্ষরণের সমস্যা হয়। তখন জরায়ু কেটে ফেলতে হয়। এ রোগি কমপক্ষে ৯টি হাসপাতাল পরিবর্তন করতে হয়েছে। তিনি রোগির ভোগান্তির জন্য এসব হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেন। অভিযোগের ব্যাপারে নড়াইল ফ্যামেলি কেয়ার হাসপাতালের মালিক ডা. মুকুল হুসাইন বলেন, আমি সিজার করি নাই। সিজার করেছেন ডা. নুরুজ্জামান। তবে এখানে আমাদের কোনো ভুল বা অবহেলা ছিলনা। আমাদের ভুল হলে প্রথম থেকেই রক্তক্ষরণ হবে। তারা বাড়িতে ৮দিন সুস্থ থাকলো কিভাবে ? কোনো কোনো রোগির ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হয় বলে জানান। সদর হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুজ্জামান বলেন, ‘সিজার বা অপারেশন একটি টিম করে থাকে। এখানেও তাই হয়েছে। সিজারের সময় ডা. মুকুলও ছিলেন। রোগির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কোনো ভুল বা খামখেয়ালী ছিল না। কোনো কোনো রোগির ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হয়, যাকে বলে পিপিএইচ (পোষ্ট পার্টেম হিমোরেজ)। ওই রোগির রক্তক্ষরণ জরায়ুর ভেতর থেকেই হচ্ছিল। এ ধরনের সমস্যা হলে জরায়ু কেটে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এ সমস্যা আমরাই ঠিক করতে পারতাম’। তাহলে রোগি এতগুলি হাসপাতাল কেন পরিবর্তন করলেন এবং কয়েক লাখ টাকা অর্থদন্ড হলো কেন ? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, রোগির পরিবার আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি।