নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা নির্বাচনে ভোটের লড়াই হবে হেলিকপ্টারের সঙ্গে আনারসের

নড়াইল প্রতিনিধি
উপজেলা নির্বাচনের আগেই নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় সংঘর্ষ ও একাধিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীসহ সাধারণ ভোটাররা উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠ নির্বাচন আয়োজনে প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনসহ জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,লোহাগড়া উপজেলা নির্বাচনে মোট ১৫জন প্রার্থী প্রতিদন্দিতা করছেন। এর মধ্যে ৫জন চেয়ারম্যান পদে, ৭জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ও ৩জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্দিতা করছেন। ৮৮ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২লাখ ১০হাজার ৭৭০জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫ হাজার ৭৮৫জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪ হাজার ৯৮৫ জন। আগামী ২১ মে এ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু (হেলিকপ্টার),এস এম ফয়জুল হক রোম (আনারস),মুন্সী নজরুল ইসলাম(দোয়াত-কলম),মো.তারিকুল ইসলাম(মোটরসাইকেল) মো.আইউব হোসেন (ঘোড়া) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
এছাড়া ভাইস-চেয়ারম্যান (পুরুষ) ৭ জন প্রার্থী হলেন- এফ আর রোমান রায়হান (টিয়া পাখি), মো. কামরুল ইসলাম মিন্টু (মাইক), মোস্তফা কামাল লিওন (টিউবওয়েল), জাহিদুর রহমান (তালা), আলী আজম মোল্যা (বই), মো. বাবুল মিয়া (চশমা মার্কা), মাহমুদুল হাসান (বৈদ্যুতিক বাল্ব) প্রতীক।
ভাইস-চেয়ারম্যান (মহিলা) ৩ জন প্রার্থী হলেন, ফারহানা ইয়াসমিন ইতি (কলস), কনিকা ওসিউর (ফুটবল), কাকলি বেগম (হাঁস) প্রতীক।
ইউনিয়নের ভোট যারা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন এমন ১৫০ জন প্রবীণ মাদবর এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,লোহাগড়ায় নির্বাচন হবে দ্বিমুখি। এরা হলেন হেলিকপ্টার প্রতীকের বর্তমান চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, এবং আনারস প্রতীকে এস এম ফয়জুল হক রোম।
এলাকার উন্নয়নে সকল প্রার্থীই তাদের নির্বাচনী ইস্তেহার জনগণের মাঝে বিতরণ করেছেন।তারা সবাই আওয়ামী লীগসহ সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
একান্ত সাক্ষাৎকার
শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু বলেন,আমি ছাত্র জীবন থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ বুকে ধারণ ও লালন করে আসছি। আমৃত্যুএটাকে ধরে রাখতে চাই। তিনি বলেন,রাজনীতির পাশাপাশি মানবসেবায় জীবনকে উৎস্বর্গ করেছি। গত নির্বাচনে মানুষ আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিলেন। আমার সাধ্যমত জনগণের সেবা করেছি। উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবারো মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করছি।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যা কিছু করণীয় ফয়জুল হক রোম তার নির্বাচনী ইস্তেহারে উল্লেখ করে বলেছেন আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। এলাকার উন্নয়নে জীবনকে উৎস্বর্গ করতে চাই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,হুইপ মাশরাফি বিন মোর্তজা এমপি আমার নিকটাত্মীয়। তাকে ভাঙিয়ে আমি নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাই না। একটি মহল নির্বাচনে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এটি প্রচার করছেন। আমি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হতে চাই। উপজেলাকে মডেল এবং স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী নজরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় সংসদের হুইপ মাশরাফি বিন মোর্তুজা এমপি একজন সৎ, নীতিবান এবং আদর্শবান মানুষ। তার মত মানুষ বর্তমান সময়ে খুজে পাওয়া ভার। হাসিখুশি এই মানুষটাকে ভালোবেসে আমি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাড়িয়েছি। নির্বাচনে আমার প্রতীক দোয়াত-কলম। জনগণের কাছে আমি তাদের মূল্যবান ভোট প্রার্থনা করছি। হুইপ মহোদয়ের সঙ্গে আমাকে কাজ করার সুযোগ করে দিন।
তিনি বলেন,আমি দেশের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরি করেছি। কখনো কেউ কোন দিন আমার দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলতে পারেনি। জনগনের ভোটে যদি আমি নির্বাচিত হই তাহলে হুইপ মহোদয়ের সঙ্গে হাতে হাত রেখে নড়াইলকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।
তিনি বলেন,আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা ৭১ সালে যুদ্ধের রণাঙ্গনে ছিলাম। মাটি মানুষের সাথে আমার সম্পর্ক। মানুষের সাথে মিশেছি। আমি যে সময় রেজিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের প্রধান দায়িত্বে ছিলাম তখন প্রতিদিন বহু মানুষের সাথে মিশেছি। চাকুরি করাকালে আমার দিকে কউ আঙ্গুল তুলে কথা বলতে পারেনি। সততার সঙ্গে চাকুরি করেছি।
আমার ছেলে মেয়েরা পাঁচজন কানাডা আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া থাকে। তারা আমাকে নিয়ে যায় কিন্তু এক দুই তিন মাসের বেশি থাকতে পারিনা। দেশের মানুষের মাটির টানে চলে আসি।
এলাকায় আমি থাকলে আমার ঘরবাড়ি মানুষে ভরে যায়। সে কারণে আমার ভাইয়েরা ও এলাকার লোকেরা উদ্বুদ্ধ করেছে এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আসতে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,নির্বাচনী ইস্তেহারে আমি বলেছি প্রতিটি ইউনিয়নে একটা ক্যাম্প ও কমিটি করবো তাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশা শুনবো ও সমাধান করব।
মো.তারিকুল ইসলাম বলেন,লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মো: তারিকুল ইসলাম উজ্জ্বল তার ১২ দফা নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করেছেন।
তিনি নির্বাচিত হলে,লোহাগড়া উপজেলাকে সন্ত্রাস,দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলবেন। প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং সরকার প্রদত্ত ভর্তুকি প্রকৃত কৃষকদের মাঝে বন্টনের ব্যবস্থা করবেন। বেকার যুবকদের তথ্য ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও সড়কের উন্নয়ন, প্রকৃত ভাতা ভোগীদের প্রাধান্য দিয়ে ভাতার সুষম বন্টন, জমি জাল- জালিয়াতকারী এবং ভূমি দস্যুদের দৌরাত্ব বন্ধ করাসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মান উন্নয়নকরণ।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহ অবস্থান নীতি বজায় রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মাদ্রাসা, গোরস্থান ও মন্দির সমূহের মান উন্নয়ন, শিক্ষা শিল্প-সাহিত্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অবদান রাখায় গুনীজনদের সম্মাননা প্রদান করা হবে। সর্বোপরি জনগণের সার্বিক উন্নয়ন এবং ব্যক্তি পর্যায়ের বিকাশে সব পক্ষকে নিয়ে দল মত নির্বিশেষে কাজ করা হবে।