
অপরদিকে,মাঠের পূর্বে প্রান্তে প্রবাহিত লাইনের খালের ওপর নির্মিত একটি
ব্রিজের নির্মাণ শ্রমিকদের বসবাসের জন্য টিনের তৈরি একটি আবাসিক ঘর
নির্মাণ করেছেন। এ বিষয়ে শ্রমিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,‘মাঠের পূর্বে
পাশে গোল পোস্টের পেছনের খালি জায়গায় ঠিকাদারের ১২-১৫ জন শ্রমিকদের থাকার
জন্য এ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ মাঠে নির্মাণাধীন ব্রিজের শুধুমাত্র রড
রাখা হলেও সড়কের ঠিকাদার নির্মাণ সামগ্রী রাখার জন্য এই মাঠের একটি বড়
অংশ ব্যবহার করছেন।’
মাঠ সংলগ্ন চন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজু খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘
খেলার মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রাখাসহ পরিবেশ দূষণকারী টায়ার পুড়িয়ে বিটুমিন
গরম করার সময় দুর্গন্ধে এলাকায় থাকাই দায়। প্রতিবাদ করেও কোনো কাজ হয়নি।
আশপাশের এলাকার ভেতরে ছেলেমেয়েদের একটি মাত্র খেলাধুলার মাঠ হলো শেখ
রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে। সেটাও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম
ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দেড়-দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিয়েছে বলে আমরা
শুনেছি। বর্তমানে বিদ্যালয় খোলা রয়েছে কিন্তু খেলার মাঠ বন্ধ থাকায়,
শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন,‘চন্দ্রপুর-জামরিল সড়ক
নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল
ইসলাম ভাড়া দিয়েছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক খাতা-কলমে কত টাকা চুক্তি
করেছে তা ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন কিংবা আমাদের জানাননি।’
ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘
দীর্ঘদিন যাবত প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে
বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম বিদ্যমান। ইতিমধ্যে আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ
হওয়ায় প্রধান শিক্ষক তার আপন খালাত ভাইকে এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত
করে একটি পকেট কমিটির মাধ্যমে তার অনিয়মের পরিমাণটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের মাঠ কীভাবে এবং কত টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে তা শুধু প্রধান
শিক্ষকই বলতে পারবেন।’
স্থানীয় খেলোয়াড় নাঈম মিয়া বলেন,‘পাথর আর বালুর বিশাল সব স্তুপের নিচে
চাপা পড়েছে মাঠটি। খেলার মাঠে চলছে নষ্ট করার যজ্ঞ। প্রতিবছর ফুটবল ও
ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হলেও মাঠ দখল করে নির্মাণসামগ্রী রাখার
কারণে এখন কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজন করা যাচ্ছে না। মাঠটি খেলার অনুপযোগী
হয়ে পড়েছে। অথচ তা দেখার কেউ নেই।’
কালিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও পুরুলিয়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান এসএম
হারুনার রশীদ জানান,‘সম্প্রতি নির্মিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে
নির্মাণসামগ্রী রাখার কারণে এলাকার যুব সমাজের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে।
আর প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলামের খেয়াল খুশি মতো মাঠ ভাড়া দেয়া খুবই
দুঃখজনক ঘটনা। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছি।’
সড়ক নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রাইট কনস্ট্রাকশন ফার্ম
লিমিটেডের কর্ণধার রকিবুল হাসান ব্রাইট বলেন,‘কাজ আমাদের নামে হলেও সেটি
করছেন কালিয়া পৌরসভার সাবেক এক মেয়র। ভাড়ার বিষয়টি আমার ভালো জানা নেই।
আমি যতটুকু জানি স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে মাঠ ব্যবহার করার
কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে বালু দিয়ে মেরামত করে দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক
আশরাফুল ইসলাম বলেন,‘বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিভাবে
ব্যবহার করছেন,সেটি আমার জানা নেই। বিষয়টি সম্পর্কে যখন অবগত হয়েছি;সঙ্গে
সঙ্গেই আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান মিয়া বলেন,‘ এ
বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ভাড়া দেওয়ার কোনো
বিধান নেই। আর যদি ভাড়া দিয়ে থাকেন, এর সব দায়দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষকে
নিতে হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আরিফুল ইসলাম বলেন,‘মাঠটির উত্তর পাশে
কালিয়া-নড়াইল প্রধান সড়ক দিয়ে জেলা শহরে যাবার পথে দৃষ্টিনন্দন খেলার
মাঠটি দখল করে নির্মাণ সামগ্রী রাখার বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’