Type to search

দরকারি ওষুধ মিলছে না মণিরামপুর হাসপাতালে

মনিরামপুর

দরকারি ওষুধ মিলছে না মণিরামপুর হাসপাতালে

অপরাজেয়বাংলা ডেক্স: মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে আগত রোগীরা তাদের প্রয়োজনীয় সব ওষুধ পাচ্ছেন না। ডাক্তার দেখিয়ে রোগীরা  স্লিপ নিয়ে ফার্মেসিতে গেলে ওষুধ নেই বলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দুস্থ অসচ্ছল রোগীদের।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, করোনায় চাহিদার তুলনায় কম সরবরাহ পাওয়ায় অধিক চাহিদাপূর্ণ কিছু ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে, এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) উপজেলার কোদলাপাড়া এলাকা থেকে গ্যাসের সমস্যা নিয়ে মণিরামপুর হাসপাতালে আসেন আয়েশা বেগম ও রুনা খাতুন নামে দুই নারী। চিকিৎসক তাদের দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন। গ্যাসের ওষুধসহ কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকে নেওয়ার জন্য স্লিপ দেন ডাক্তার। সেই স্লিপ নিয়ে হাসপাতালের ফার্মেসিতে গেলে ‘গ্যাসের ওষুধ নেই’ বলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
রুনা খাতুন বলেন, ডাক্তার দশটা গ্যাসের ক্যাপসুল লিখেছেন। হাসপাতাল থেকে একটাও দেয়নি। বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।
মণিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গত ৩-৪ দিন চিকিৎসা নিচ্ছেন রঘুনাথপুর গ্রামের সোনিয়া খাতুন। ভর্তির পর থেকে গ্যাসের ইনজেকশন পাননি তিনি।
গত বুধবার (২৬ মে) সকালে চার বছরের ছেলে সিয়ামকে ডায়রিয়াজনিত কারণে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছেন মা লিমা খাতুন। একদিনের মধ্যে তাকে ছেলের জন্য ৫০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে।
রোগীদের অভিযোগ, তারা ছয়টার বেশি গ্যাসের বড়ি পান না। আর দুপুর ১২টার পর হাসপাতালে গেলে বলে, ‘গ্যাসের বড়ি নেই’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মণিরামপুর হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডায়াবেটিস রোগীরা চার মাস ধরে কোনো ওষুধ পাচ্ছেন না।
মণিরামপুর হাসপাতালের চিকিৎসক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত দেড় বছর ধরে এনসিডি কর্নারে রোগী দেখছি। এখানে নিয়মিত ৬০-৭০ জন ডায়াবেটিসের রোগী আসতেন। রোগীরা ৪-৫ রকমের ওষুধ বিনামূল্য পেতেন। গত চারমাস ধরে ডায়াবেটিসের কোনো ওষুধ নেই। এই পর্যন্ত তিন-চারবার ওষুধ চেয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। সরবরাহ আসছে না। এখন ডায়াবেটিসের রোগী কম আসছেন ‘
১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মণিরামপুর উপজেলা। এখানে সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এছাড়া উপজেলার নেহালপুর ও রাজগঞ্জ বাজারে দুটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেখানে নিয়মিত চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা সেবা পান না বলে অভিযোগ। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ বেশি। নিয়মিত এখানে বহির্বিভাগে ৪০০-৪৫০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসতেন। দরকারি ওষুধ না পাওয়ায় এখন রোগীর সংখ্যা কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিন জানা গেছে, মণিরামপুর হাসপাতালের বহির্বিভাগে গত ১৫ দিন ধরে গ্যাসের ক্যাপসুল, একমাস ধরে অ্যান্টাসিড ও ক্যালসিয়াম বড়ি সরবরাহ নেই। এরআগে প্যারাসিটামল ছিল না বেশ কয়েকদিন। ভর্তি বিভাগে গ্যাসের ইনজেকশন নেই একমাসেরও বেশি সময়। মেলে না ডায়রিয়ার সব ওষুধ।
হাসপাতালের ভর্তি বিভাগে নারী ও শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ বন্দনা নন্দী বলেন, গ্যাসের ইনজেকশনের চাহিদা বেশি থাকায় দ্রুত সরবরাহ শেষ হয়ে গেছে। একমাস ধরে গ্যাসের ইনজেকশন নেই। আর ডায়রিয়ার রোগীদের সব ওষুধ হাসপাতালে আছে। অনেক সময় রোগীর অবস্থা বুঝে ডাক্তার অন্য কিছু ওষুধ লেখেন।
হাসপাতালের স্টোরকিপার মহিতোষকুমার বলেন, ‘ডায়াবেটিসের ওষুধ ঢাকা থেকে আসে। তিন-চার পদের ওষুধ আসে এই রোগীদের জন্য। গতবার তিন লাখ চাহিদা পাঠানো হয়েছিল; পাইছি মাত্র ৫০ হাজার। কিছু ওষুধ হাতে রেখে পাঁচমাস আগে আবারও চাহিদা পাঠানো হয়েছে; এখনো কোনো খবর নেই।’
মহিতোষ বলেন, ‘ডায়াবেটিসের বাদে বাকি ওষুধ বগুড়া থেকে আসে। তিন-চার মাস পরপর ওষুধ পাই। গ্যাসের ক্যাপসুলের চাহিদা ছিল তিন লাখ; পাইছি ৩০ হাজার। আবার তিন লাখ চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ক্যালসিয়াম বড়ি ৯০ হাজার পাইছি; তিনমাসে শেষ হয়ে গেছে। অ্যান্টাসিড এক-দেড় লাখ পাইছি। তা একমাস আগে শেষ হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কম ওষুধ পাওয়ায় রোগীদের হিসাব করে দিতে হয়।’
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অনুপ বসু বলেন, ‘মণিরামপুর উপজেলার আয়তন বড় হওয়ায় এই হাসপাতালে রোগীর চাপ সবসময় বেশি। হাসপাতালে মোট ২০-২২ পদের ওষুধ আসে। আমরা যে পরিমাণ ওষুধ চাই, সরবরাহ পাই তার চেয়ে অনেক কম। উপজেলায় ৪৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। সেখানে পর্যাপ্ত ওষুধ আসে। রোগীরা সাধারণ রোগে হাসপাতালে না এসে সেখানে গেলে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাবেন।’
মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা শুভ্রারানী দেবনাথ বলেন, করোনার কারণে ওষুধ কম এসেছে। সেই কারণে গ্যাসের ওষুধসহ কয়েক প্রকারের ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নতুন চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ওষুধ চলে আসবে।সূত্র,সুবর্ণভূমি