
আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ৬নং ঝিকরগাছা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর ছিদ্দিকীয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর ক্রমাগতই তার থলের বিড়াল বের হতে শুরু করেছে। উক্ত মাদ্রাসায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী অনুপস্থিত মো. ইস্রাফিল হোসেন। তার সহি জাল করে বেতন তুলছেন স্ত্রী লাবনী খাতুন। তিনি শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে। ঘটনার বিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি ও অধ্যক্ষ জানার পরে বেতন বিলে তাদের সহি পাওয়া যায়। তাহলে মাদ্রাসায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী অনুপস্থিত মো. ইস্রাফিল হোসেনের জাল সহিতে বেতন উত্তোলনের দায় ভার এখন কে নেকে ? এটা নিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন উদিয়মান হতে দেখা গেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ০১/০১/২০০১ইং তারিখে মাদ্রাসায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে যোগদান করেন মো. ইস্রাফিল হোসেন। মাদ্রাসায় কোন প্রকার ছুটি না নিয়ে বিগত ২৩ জুলাই হতে অদ্যবধি পর্যন্ত অনুপস্থিত রয়েছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম সুলতান মাহমুদ গত ৮ অক্টোবর মাদ্রাসা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে মো. ইস্রাফিল হোসেন যে মাদ্রাসাতে যায় না এই বিষয়ে হাজিরা খাতার সহি দেখে হাজিরা খাতায় ডিম্বকার চিহ্ন দিয়ে সহি করে দিয়ে এসেছেন। সম্প্রতি জুলাই-২৫, আগস্ট-২৫ ও সেপ্টেম্বর-২৫ অনুপস্থিত হিসেবে হাজিরা খাতায় সহি না থাকলেও ক্রমাগতই পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. ইস্রাফিল হোসেনের বেতন শীটে জাল সহিতে উত্তলন করা হচ্ছে বেতন ভাতা। যেটা মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমান ও অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাক জানলেও জাল সহি কে সঠিক সহি বানিয়ে বেতন-ভাতার শীট অনুমোদন দিচ্ছেন তারা এবং তার স্ত্রী লাবনী খাতুন স্বামীর সহি জাল করে মাসের পর মাস টাকা উত্তলণ করছেন। এ বিষয়ে মাদ্রাসার অলিখিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এটিএম আব্দুল আহাদের নিকট মাদ্রাসায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. ইস্রাফিল হোসেনের মাদ্রাসায় উপস্থিতিতের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. ইস্রাফিল হোসেন মাদ্রাসাতে আসেন না। তার পরিবর্তে মাদ্রাসায় তার স্ত্রী কাজ করেন। মাদ্রাসায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. ইস্রাফিল হোসেনের ছুটি নেওয়া আছে কিনা বা স্বামীর স্থানে স্ত্রীর কাজ করতে পারবে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে মাদ্রাসায় মো. ইস্রাফিল হোসেনের কোন ছুটি নেওয়া বা আবেদন পত্র জমা নেই। আর তার স্ত্রী কি করে কাজ করছে সেটা অধ্যক্ষ বলতে পারবে!
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার আশেপাশের একাধিক ব্যক্তিরা জানান, সে মাদ্রাসাতে আসে না। তবে তার হাজিরা খাতায় সহির স্থান ফাকা থাকার পরও তার স্ত্রীর মাধ্যমে মো. ইস্রাফিল হোসেনের সহি হুবহু নকল করে মাসের পর মাস বেতন উত্তলন করছেন। আর অনৈতিক কাজের সহযোগিতায় আছেন সভাপতি ও অধ্যক্ষ।
মাদ্রাসায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী অনুপস্থিত মো. ইস্রাফিল হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করতে গেলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মাদ্রাসায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর স্ত্রী লাবনী খাতুন বলেন, আমার স্বামী প্রায় ৩মাস যাবৎ ভারতে অবস্থান করছেন। স্বামীর বিপরীতে তিনি কাজ করতে পারবেন কি না এবং স্বামীর বেতন শীটের সহির বিষয়ে তিনি বলেন, স্বামীর বিপরীতে আমি কি করে কাজ করছি ও বেতন শীটে স্বামীর নামের সহি আমাকে মাদ্রাসার সভাপতি ও অধ্যক্ষ করতে বলেছেন তাই আমি সহি করে বেতন তুলি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাক সাথে একাধিকবার তার ব্যবহৃত মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে সাংবাদকর্মীর পরিচয় পেয়ে ‘ধোষ’ বলে ফোন কেটে দেন।
মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, আমি সভাপতি হওয়ার আগে থেকে ও মাদ্রাসায় আসে না। আপনি জানেন সে আসেনা তাহলে আপনি ও অধ্যক্ষ কি করে তার সহি জাল করে তার স্ত্রীকে দিয়ে বেতন তুলছেন ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাকে শর্ত সাপক্ষে ছুটি দিয়েছিলাম। শর্তটা হল তার পরিবর্তে তার স্ত্রী তার কাজ গুলো করবে। তার ছুটির কাগজ মাদ্রাসাতে নাই এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে আছে। বেতন শীটে ইস্রাফিল হোসেনের সহির স্থানে তার স্ত্রী সহি করছেন এই বিষয়ে তিনি বলেন, বিল ছাড়ছি ঠিক আছে। সব কিছু কমিটির স্থানীয় কিছু মানুষ থাকে তাদের সম্মতি ক্রমে মানবিক দিক বিবেচনা করতে হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম সুলতান মাহমুদ বলেন, আপনাদের তথ্যের উপর ভিত্তি করে ৩দিনে ৯বার অধ্যক্ষকে ফোন দেওয়ার পরেও তিনি আমার ফোন রিসিভ করছেন না। ঘটানার বিষয়ে আমি ওখানে যাবো, তারপর দেখি কি করা যায়।

