চৌগাছা প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা নিয়েও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক (৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি) পদে নিয়ে না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঝাউতলা এমকেএনজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইনাল হক এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। চাকরি তো দেননি উল্টো টাকাও টাকা নেননি দাবি করে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন ওই প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি।
২ ফেব্রæয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
এর আগে ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান গত ৩১ জানুয়ারী যশোরের ডিসি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) যশোর সমন্বিত কার্যালয়ে এবং ১ ফেব্রæয়ারী চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে বিভিন্ন সময়ে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে টাকা প্রদানের ভিডিওসহ লিখিত অভিযোগ করেন। ভিডিওতে দেখা গেছে প্রধান শিক্ষক মেহেদীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে এবং সভাপতি বিভিন্ন স্থানে তার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন।
লিখিত অভিযোগে মেহেদী হাসান বলেন, ‘কিছুদিন আগে উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের ঝাউতলা এমকেএনজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রত্রিকার সার্কুলার দেখে অফিস সহায়ক হিসেবে আবেদন করি। এই সার্কুলারের আগেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইনাল হক স্কুল সংলগ্ন বাজারে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে (কিটনাশকের দোকান) এসে প্রায়ই ওই পদে চাকুরির জন্য প্রলোভন দিতে থাকে। এক পর্যায়ে পারিবারিক, সাংসারিক ও সামাজিক জীবন ব্যবস্থার কথা চিন্তা করে প্রধান শিক্ষকের কথায় আস্বস্ত হয়ে আমার ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে প্রধান শিক্ষকের কাছে নগদ অর্থ প্রদান করি। (যার ভিডিও সংরক্ষিত আছে)। প্রথম অর্থ গ্রহণের পরবর্তী চার মাসের মধ্যে বিভিন্ন ধাপে প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের কথায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমানের কাছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করি (যার কিছু ভিডিও সংরক্ষিত আছে)।’
তিনি আরও লেখেন, ‘এই টাকা দিতে গিয়ে আার বসতভিটার জমি বিক্রি করি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গাভী গরু, মোটরসাইকেল বিক্রি করি এবং দুটি এনজিও থেকে মোটা অংকের ঋণ গ্রহণ করি। যার ভার বইতে গিয়ে আমি নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। এমনকি আমি, আমার মা ও বড়ভাইকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাড়ি গিয়ে তার হাতে-পায়ে ধরি। এরপরও আমাকে চাকুরি না দিয়ে গত ২১ জানুয়ারী যশোর জেলা স্কুলে নিয়োগ বোর্ড বসিয়ে আমাকে বঞ্চিত করে অধিক অর্থের বিনিময়ে অন্য একজনকে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমার কাছ থেকে টাকা নেয়নি বলে অস্বীকার করেন এবং আমার ও আমার পরিবারকে নানা প্রকার হুমকি-ধামকি দেন।’
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রধান শিক্ষক আইনাল হক স্কুলটিকে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মনে করে অসহায় শিক্ষককেদর এমপিওভূক্ত করার কথা বলে লাখ লাখ টাকা নিয়ে ভোগবিলাস করেন। এমনকি বিপুল অর্থের বিনিময়ে রাতারাতি গায়েবি নিয়োগ প্রদান করেছেন। ২০২২ সালে মোঃ আব্বাস আলী নামে এক ব্যক্তিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আগের তারিখে দেখিয়ে গায়েবি নিয়োগ দেন। অথচ এই শিক্ষককে ২০২২ সালের আগে কেউ কখনও এই স্কুলে দেখেননি। এসব বিষয়ে স্কুলের অন্য শিক্ষকরা তার ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। এছাড়াও বিদ্যালয়ে প্রায় ২০ বছর ধরে বিনা বেতনের চাকরিরত শিক্ষক রাব্বুল হোসেনের এমপিও করার কথা বলে সম্প্রতি ২ লাখ টাকা নেন। এরপরও তার বেতন না করায় তিনি টাকা ফেরৎ চাইলে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিকভাবে হয়রানি করছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে এবিষয়ে বক্তব্য নিতে গত বৃহস্পতিবার (২ফেব্রæয়ারি) সকালে প্রধান শিক্ষক আইনাল হক বলেন, এখন একটু ব্যস্ত আছি পরে কথা বলবো। এরপর তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি, তিনিও ফোন না করলে শনিবার (৪ফেব্রæয়ারি) সকালে তাকে ফের কল করা হলে প্রথমে ফোন ধরেন নি। পরে ফোন রিসিভ করে তিনি বলেন, 'টাকা দেয়ার ভিডিওর মত আমার কাছে টাকা ফেরৎ নেয়ার ভিডিও আছে, স্ট্যাম্পও আছে। সেটা সন্ধ্যার মধ্যে আপনার কাছে পৌছে দেবো।' তিন দিনেও তার সময় হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। অন্যদিকে সভাপতি মিজানুর রহমানের সাথে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রকাশক ও সম্পাদক :
মোঃ কামরুল ইসলাম
মোবাইল নং : ০১৭১০৭৮৫০৪০
Copyright © 2025 অপরাজেয় বাংলা. All rights reserved.