চৌগাছায় ভাতিজার ২বিঘা জমির করলা ক্ষেত কেটে দিলেন চাচা

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছায় আমিনুর রহমান (৪০) নামে এক কৃষকের ২ বিঘা করলা (উচ্ছে) ক্ষেত কেটে সাবাড় করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আপন চাচা শরিফুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই সুজন হোসেনের বিরুদ্ধে। ২ বিঘা জমির করোলা ক্ষেত এভাবে কেটে দেয়ায় কৃষক আমিনুরের বাবা ও মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় ওই কৃষক চৌগাছা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চৌগাছা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাইদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগকারী কৃষক আমিনুর রহমান উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের মাংগিরপাড়া গ্রামের মৃত শুকুর আলী মন্ডলের ছেলে। তার চাচা শরিফুল ইসলাম (৬০) এবং তাঁর ছেলে সুজন হোসেনও (৩০) একই গ্রামের বাসিন্দা।
চৌগাছা থানায় লিখিত অভিযোগে আমিনুর রহমান বলেন, উভয় বিবাদি আমার আপন চাচা ও চাচাতো ভাই। তাঁদের সাথে জমিজামা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমার বিরোধ রয়েছে। প্রায় এক বছর আগে তার বিরুদ্ধে আমি মামলা করি। সে মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। তারই জেরে গত ৫ আগস্ট দিবাগত রাতে গ্রামের মাঠে আমার দুই বিঘা জমির করোলা (উচ্ছে) ক্ষেতের সব গাছ কেটে অনুমান ২ লক্ষ টাকার ক্ষতি করেছে। শুক্রবার (৬আগস্ট) সকালে ক্ষেতে করতে যেয়ে বিষয়টি দেখি। এরপর তাঁদের কাছে জানতে চাইলে তারা আমাকে মারপিট করতে উদ্যত হয় এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ কর ও খুন- জখমের হুমকি দেয়।
আমিনুর রহমান জানান, দু’বিঘা করোলায় এখন পর্যন্ত ৩৫/৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শনিবার (৭ আগস্ট) প্রথম করোলা তুলে পাশ^বর্তী বেলেমাঠ বাজারে নেয়ার কথা ছিল। তাঁর আগেই সম্পূর্ণ ক্ষেতের করোলা কেটে দেয়ায় ২ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান আরেক চাচা আব্দুল মুজিদের দুই ছেলে হাসান (৩২) ও শাহিন (২৮) ঘটনার সাথে জড়িত। তবে থানায় লিখিত অভিযোগে তাদের নাম দেননি তিনি। কেন দেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাঁদের নাম দিলে বাড়ি যাওয়ার আগেই রাস্তায় তাঁরা মারপিট করবে। এই ভয়ে তাঁদের নাম দিইনি।’ পুলিশি তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হবে দাবি করে তিনি বলেন, ‘হাসান এর আগে একটি বোমা হামলার ঘটনায় তদন্তে যাওয়া চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপনের মাথা, পিঠ ও হাত কুপিয়ে জখম করেছিল। সেদিন এসআই রিপনের সাথে থাকা পুলিশ কনস্টেবলের একটি আঙুল কেটে পড়ে যায়। ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় বেশ কিছুদিন জেলে থেকে জামিনে রয়েছে হাসান।’
তিনি জানান জমিজামা সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে এক বছর আগে আমার একটি আমড়া গাছ, ২টি মাঝারি সাইজের মেহগনি গাছ, বাড়ির লাউ ও মিষ্টি কুমড়োর মাঁচা কেটে দিয়েছিল চাচাতো ভাই সুজন। সেসময় তাঁরা আমার মাথা ও শরীরে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। ওই ঘটনায় আমি মামলা করি। মামলায় কয়েকদিন দিন জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলো। তাঁরা আমার কেনা জমিতে করা বাড়ির প্রাচীর ও গেইট ভেঙে রাস্তা নিতে চায়। এ নিয়েই তাঁদের সাথে আমার বিরোধ।
এদিকে শনিবার দুপুরে ওই কৃষকের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, এ খবর শুনে তার বাবা ও মাসহ স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিকরা গেলে তাঁরা হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌগাছা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাইদুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। শনিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে খাবার খেয়ে ঘটনাস্থলে যাবো। বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন লিখিত অভিযোগ পেয়ে থানার এএসআই সাইদুল ইসলামকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।