চৌগাছায় করোনায় আ.লীগ নেতার মৃত্যু

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছার সিংহঝুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান নিপু (৬২) করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়নের সিংহঝুলী বিশ^াসপাড়া গ্রামের মৃত সুজা মিয়ার ছেলে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে খুলনায় নেয়ার পথে শুক্রবার ভোর রাত চারটার সময় তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন মরহুমের বড় ছেলে নওয়াপাড়া পৌরসভার কর্মরত রাজিবুর রহমান। তিনি ২২ বছর ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
হাফিজুর রহমান করোনা পজেটিভ ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএন্ডএফপিও) ডা. মোছাঃ লুৎফুন্নাহার লাকি।
ডা. লুৎফুন্নাহার লাকি জানান, হাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী বৃহস্পতিবার চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার নমুনা দেন। সেই নমুনা যশোর বৃহস্পতিবারই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে পাঠানো হয়। সেখানে রাতে পরীক্ষার পর শুক্রবার বেলা ১১টায় তার করোনা নমুনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। তিনি আরও বলেন তার দাফন কাজ সম্পন্নের জন্য পিপিই দেয়া হয়েছে এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যারা তার সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের শনিবার করোনা নমুনা দেয়ার জন্য হাসপাতালে আসার জন্য বলা হয়েছে। লুৎফুন্নাহার আরো জানান বৃহস্পতিবার চৌগাছা থেকে মোট ১৬টি নমুনা পাঠানো হয়। এরমধ্যে হাফিজুর রহমানসহ দুজনের করোনা পজেটিভ এসেছে। এ নিয়ে গত নয় দিনে চৌগাছায় নতুন করে ৯ জনের করোনা সনাক্ত হলো।
মরহুমের পারিবারিক সূত্র জানায় গত কয়েকদিন ধরে তার ঠান্ডা-জ¦র, স্বাস কষ্ট, কাশি, গলায় ব্যাথা ছিল। বৃহস্পতিবার তিনি ও তার স্ত্রী চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার নমুনা দেন। এরপর বাড়ি নেয়ার পর সন্ধ্যার দিকে তার শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনায় নেয়ার পথে শুক্রবার ভোর রাত ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মরহুমের দুই ছেলে রয়েছেন। তারা দুজনেই সরকারি চাকুরি করেন। সকালে তার মৃতদেহ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তবে গ্রামের লোকজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ায় ভয়ে গোসল দিতে চান নি। চৌগাছা কপোতাক্ষ ক্লিনিকের সত্বাধিকারী জুয়েল ছাড়া মৃতদেহের কাছেই যান নি তেমন কেউ। পরে চৌগাছা পৌর মেয়র নূর উদ্দীন আল মামুন হিমেলের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অগ্রযাত্রা’র সভাপতি ব্যবসায়ী হাসিবুর রহমান, আব্দুর রশীদ রাজু, হোমিও চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ, ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান ও চৌগাছা সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বলেন্স চালক আলমগীর জুম্মার নামাজের পর তার মৃতদেহ গোসল দেন। এরপর নামাজে জানাজা শেষে বিকাল তিনটার দিকে অগ্রযাত্রার স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফনের সাময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরীসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
মরহুমের বড় ছেলে রাজিবুর রহমান বলেন কিছুদিন আগে আব্বা ও মা নওয়াপাড়ায় আমার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তখন মা করোনা টিকা নিলেও আব্বার ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকায় তিনি টিকা নেন নি। কয়েকদিন থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। বৃহস্পতিবার করোনার নমুনাও দিয়েছিলেন। পরে সন্ধ্যার দিকে শ^াসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা নেয়ার পথে ভোর চারটার দিকে তিনি মারা যান।
এর আগে গত ৩০ শে মার্চ করোনা উপসর্গ নিয়ে সিংহঝুলী মল্লিকবাড়ী গ্রামের আলী আহাম্মেদ মল্লিক (৭৫) মারা যান। তিনিও দু/তিন দিন ধরে ঠান্ডা জ¦র, কাশিতে ভুগছিলেন ২৯ মার্চ শ^াসকষ্ট শুরু হলে তাকে প্রথমে চৌগাছা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেয়া হয়। সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হলে যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তার স্বজনদের বলেন তার ফুসফুসে মারাত্মক সমস্যা হয়েছে। ঢাকা নিতে হবে। স্বজনরা তাকে ঢাকা না নিয়ে বাড়িতে নিলে ৩০ মার্চ ভোরে তার মৃত্যু হয়। হাফিজুর রহমান ও আলী আহাম্মেদ মল্লিকের বাড়ি দুই পাড়ায় হলেও দূরত্ব এক কিলোমিটারের মধ্যে।