Type to search

চৌগাছায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধ দম্পতির মৃত্যু

যশোর

চৌগাছায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধ দম্পতির মৃত্যু

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছায় করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত ব্যক্তি আলী হোসেন সরদার (৭৫)। তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১২ই জুলাই রোববার। এর ৪ দিন পর বৃহস্পতিবার তার ছেলে গ্রাম ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে এসএমএস আসে তিনি করোনা পজেটিভ। ওই দিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে পরিবারের অন্য পাঁচ জনের নমুনা নেয়া হয়। দুপুরে নমুনা দেয়ার পর রাতে আলী হোসেন সরদারের স্ত্রী সুফিয়া খাতুনও (৬৫) করোনা উপসর্গে মারা গেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছাঃ লুৎফুন্নাহার লাকি।
আলী হোসেন সরদার ও সুফিয়া খাতুন উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা।
আলী হোসেন সরদারের ছেলে গ্রাম ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক জানান এক সপ্তাহ ধরে বাবার জ¦র ছিল। এরপর জ¦র সেরে যায়। পরে আবার জ¦র আসলে ১১ জুলাই বেলা ১২ টার দিকে চৌগাছা শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেয়া হয়। তখন বাবার শ^াসকষ্টও থাকায় অক্সিজেন দেয়ার পর তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি অবস্থায় ১২ জুলাই তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর দুদিন পর মোবাইল ফোনে জানানো হয় তিনি (আমার বাবা) করোনা পজেটিভ ছিলেন। এরপর বৃহস্পতিবার আমার মোবাইল ফোনে এসএমএস (তার করোনা পজেটিভ হওয়ার রিপোর্ট) আসে। বৃহস্পতিবারই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তত্বাবধানে আমাদের পরিবারের অন্য পাঁচজনের নমুনা নেয়া হয়। দুপরের আগ দিয়ে নুমনা নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর রাত ৯টার দিকে আমার মা মারা যান।
এদিকে স্বামীর করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসার পর করোনা ভাইরাসের উপসর্গে সুফিয়া খাতুনের মৃত্যু হওয়ায় গ্রামের কোন ব্যক্তি তার লাশ দেখতেও আসেনি। লাশ নিয়ে সারা রাত ছেলে আব্দুর রাজ্জাকসহ পরিবারের সদস্যরা বসে ছিলেন। মাত্র চার দিন আগে পরিবার প্রধানের মৃত্যু করোনায় হওয়ায় পরিবারের সদস্যরাও মৃতদেহের পাশে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলেন না। পরে শুক্রবার সকালে চৌগাছা পৌর মেয়রের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদান সংস্থা ‘অগ্রযাত্রা’র সদস্যরা ওই গ্রামে যান। অতঃপর সুফিয়া খাতুনের মেয়ে তার মায়ের লাশের গোসল দেয়ার পর ‘অগ্রযাত্রা’র সদস্যরা সকাল সাড়ে আটটায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অগ্রযাত্রা’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য জানান, আতংকের কারনে আমরা যাওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রামের একজনও মরদেহের পাশে আসেনি। এমনকি পাশের বাড়ির কেউও আসেনি মরদেহ দেখতে। গ্রামের কেউ কবর খুঁড়তেও চাচ্ছিলেন না। পরে গ্রামের মসজিদের ইমামের অনুরোধে কবর খোড়া হয়। শুধুমাত্র সুফিয়া খাতুনের মেয়ে তাকে গোসল দেন। আমরা জানাজা পড়তে দাড়ালে গ্রামের কয়েকজন এসে জানাজায় অংশ নেন। তিনি বলেন এর আগে ১২ জুলাই আলী হোসেন মারা গেলে গ্রামের মানুষজন স্বাভাবিকভাবেই তার দাফনে অংশ নেন। পরে তার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসায় গ্রামের মানুষজন আতংকিত হয়ে তাদের প্রায় একঘরে করে রেখেছেন। এমনকি গ্রামেই সংরক্ষিত মহিলা মেম্বারের বাড়ি হলেও তিনিও আসেন নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছাঃ লুৎফুন্নাহার বলেন, গ্রামের মানুষজনের এমন আচরণ দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া আলী হোসেনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসার পর বৃহস্পতিবার ওই পরিবারের অন্য পাঁচ জনের নমুনা নেয়া হয়। এরপর রাতে সুফিয়া খাতুন মারা যাওয়ার সংবাদ পাই। যিনি গোসল করিয়েছেন ও যারা কবরে মৃতদেহ নিয়েছেন তাদের জন্য পিপিই’র ব্যবস্থা করে পিপিই পরে গোসল দেয়া ও কবরস্থ করার জন্য বলেছি। যে গোসল করিয়েছে ওই মেয়েটির নমুনা আগে নেয়া হয়নি। এখন তার নমুনা নেয়া হবে।