প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২০, ২০২৫, ৭:২৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ৫:৪৬ পি.এম
চুয়াডাঙ্গায় দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে তাপপ্রবাহ
![]()
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু,চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রতিদিনই তাপমাত্রার রেকর্ড গড়ছে চুয়াডাঙ্গা। মৃদু মাঝারি তীব্র এবং অতি তীব্র আকারের তাপপ্রবাহ চলমান আছে এ জেলার ওপরে। গতকাল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করেছে চুয়াডাঙ্গায়। এ দিন তাপমাত্রার পারদ ছিল ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা সারাদেশের মধ্যেও সবোর্চ্চ তাপমাত্রা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, ভৌগোলিক ভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থান কর্কট ক্রান্তি রেখার কাছাকাছি। ফলে এই গ্রীষ্মকালে পুরো সময়টায় সূর্য চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর তাপ ফেলছে । এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলাগুলো সমতলভূমি। যে কারণে তাপমাত্রা সহজে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাপমাত্রার হাত থেকে রক্ষা পেতে হয় প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত থাকতে হবে। সেই সঙ্গে জলাধার ও প্রচুর গাছপালা থাকতে হবে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা খেয়াল করছি যে চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসে সাধারণত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এপ্রিলে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপমাত্রা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। এ ছাড়া এ জেলায় পর্যাপ্ত জলাধার নেই। জলাধার থেকে পানি জলীয় বাষ্প আকারে ওপরে উঠে মেঘ তৈরি হয়। সে সময়ে শীতল পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু এ জেলায় সে সম্ভাবনাও নেই।’
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাস জুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহের পর এখন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এতে চরম গরম অনুভূত হচ্ছে। ঘরে-বাইরে কোথাও মানুষ স্বস্তি পাচ্ছেন না। সবখানেই হাঁসফাঁস অবস্থা। কৃষি শ্রমিকসহ কর্মজীবী মানুষের অবস্থা কাহিল। রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। এতে যানবাহন চলাচলেও ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে।দেখা যায়, সদরের নেহালপুর গ্রামের রাস্তার পাশে গাছের নিচে ভ্যান রেখে জামা খুলে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন চালক আবদুর রহমান (৫৪)। চুয়াডাঙ্গা থেকে হিজলগাড়ি বাজারের একটি বেকারি কারখানায় ময়দার বস্তা নামিয়ে এসেছেন তিনি। আবদুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর ধরে ভ্যান চালাচ্চি। ইর আগে কখখনোই অ্যারাম গরম লাগিনি। এট্টুসখানি পত গাড়ি নি যাতি না যাতিই গরমে হাঁপিয়ে যাচ্ছি। জানের ভেতর ছটফট করচে। কিচুতিই শান্তি পাচ্চি নে।’
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানাধীন নেহালপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহাতাব উদ্দিন বেলা আড়াইটার দিকে বাড়ির পাশেই কেরু অ্যান্ড কোম্পানির পরিত্যক্ত আখের জমিতে গরু চরাচ্ছিলেন। গায়ের জামাটির সব কটি বোতাম খোলা। মাথার ওপর ছাতা নিয়ে তাঁর নয়টি গরু তদারকি করছিলেন। মাহাতাব বলেন, ‘গরুগুনুর ঘাস খাইয়ে বাঁচানির জন্যি মাটে আইচি। এই খরার দিনি আমার ঘরিত্তি কিডা বেইর কত্তি পারে?’
সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের কেষ্টপুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক মকছেদ মণ্ডল (৮০) এই অসহনীয় গরমের ব্যাপারে বলেন, ‘আল্লাহর মাইর, দুনিয়ার বাইর। দুনিয়াতে আমরা যত বাড়াবাড়ি কইরব, আমাদের ততই শাস্তি ভোগ কত্তি হবে। আমরা নিজিদির মতো করে সব ওলটপালট করচি। কেউ পুকুর ভরাট করচে, আবার কেউ কৃষিজমিতি পুকুর কাটচে। গাছ কাইটে ভাটায় পুড়ানো হচ্চে। আমাগের সুক কত্তি হলে সহ্য ও কত্তি হবে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আতাউর রহমান মুন্সী বলেন, তাপপ্রবাহ দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে রোদে বের না হওয়াই ভালো। দিনে দুই থেকে তিনবার গোসল করতে হবে। অন্তত একটি করে মুখে খাওয়ার স্যালাইন (ওআরএস) খেতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করেই খাওয়া যাবে না। স্বাভাবিক হওয়ার পর খেতে হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক :
মোঃ কামরুল ইসলাম
মোবাইল নং : ০১৭১০৭৮৫০৪০
Copyright © 2025 অপরাজেয় বাংলা. All rights reserved.