Type to search

গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণ: ফায়ার সার্ভিস

জাতীয়

গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণ: ফায়ার সার্ভিস

ডেস্ক রিপোর্টঃ এ যেন কোন মর্মান্তিক যুদ্ধবিধ্বস্ত জায়গার দৃশ্য। আগুনে দগ্ধ অসহায় মানুষ যন্ত্রনা ধেকে মুক্তি পেতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন রাস্তায় জমে থাকার পানির উপর। দগ্ধ এসব মানুষের আর্তনাদে আশপাশের কেউই বুঝে উঠতে পারছিলেন না কি করতে হবে।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন তল্লা এলাকার বাইতুল সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের পরের দৃশ্য এমনই ছিলো। আগুনে দগ্ধ প্রায় অর্ধশত মানুষের আর্তনাদে হাসপাতালের দৃশ্য ছিল আরো অনেক বেশী করুণ।

শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টায় এশার ফরজ নামাজ শেষে অনেকেই বেতের নামাজ আদায় করছিলেন মসজিদে। এসময় মসজিদে বেশ কয়েকজন শিশুও ছিলো। হঠাৎই বিকট শব্দে মসজিদের নিচতলার চলমান ৬টি এসি এক সঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। মুহুর্তেই আগুনে ঝলসে যান সেসময় মসজিদে থাকা প্রায় অর্ধশত মুসল্লি। প্রত্যেকেরই গায়ের জামাকাপড় পুড়ে শরীরের অধিকাংশই পুড়ে যায়। যন্ত্রনা থেকে বাঁচতে সকলেই ছুটে গিয়ে গড়াগড়ি খেতে থাকেন মসজিদের সামনের রাস্তায় জমে থাকা পানির ওপর।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নামাজের মধ্যেই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ফিরে আসার পরেই ঘটে এই বিস্ফোরণ।

এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সহায়তায় দগ্ধদের প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দগ্ধদের অবস্থা খারাপ দেখে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

ঘটনার পরপরই ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিরা। ঘটনা তদন্তে রাতেই ছুটে আসে অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির একটি টিম। তারা ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন।

ফায়ার সার্ভিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া তিতাস গ্যাসের লিকেজ হওয়া লাইন থেকেই এই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, মসজিদের নিচ দিয়ে একটি গ্যাস পাইপ রয়েছে। আর এ পাইপের লিকেজ দিয়ে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা হয়। মসজিদে এসি চলার কারণে দরজা জানালা সব বন্ধ রাখা হয়। আলো বাতাস বের হতে পারায় নির্গত গ্যাস বের হতে পারেনি। বিস্ফোরণের আগে বিদ্যুতের কোনো কিছু জালানোর সময় স্পার্কিং থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

তিনি আরো বলেন, মসজিদের মেঝেতে থাকা পানিতে গ্যাসের বুদবুদ ওঠায় সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের অনেকগুলো লাইন গেছে। আর পাইপগুলোর প্রতিটিতে একাধিক লিকেজ রয়েছে। সেই লিকেজের গ্যাস সব সময় মসজিদে উঠতো। আর নামাজের আগে থেকে মসজিদের দরজা জানালা বন্ধ করে এসি চালু করার ফলে পুরো রুমে এসি ও গ্যাস মিশে যায়। তাতে করে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণ ঘটে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা দ্রুত এখানে এসে আমাদের ধারণাকে নিশ্চিত করে। তারা জানান গ্যাসের লাইন থেকেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে।

এদিকে, বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১ শিশু ও মুয়াজ্জিনসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ তথ্য দেন। এছাড়া, দগ্ধ আরো ২৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন: কুদ্দুছ ব্যাপারী (৭২), সাব্বির (২২), দেলওয়ার (৪৫), জুয়েল (৭), জামাল (৪০) , জুবায়ের (১৮), হুমায়ুন কবির (৭০), মোস্তফা কামাল, ইব্রাহিম (৪৩), রিফাত (১৮) এবং জুনায়েদ (১৭)।

এঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সূএ: DBC News

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *