Type to search

কেশবপুরে সরকারী খাদ্য গুদামে ধান, চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় আশংকা 

যশোর

কেশবপুরে সরকারী খাদ্য গুদামে ধান, চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় আশংকা 

জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর (যশোর) থেকে।
যশোরের কেশবপুর খাদ্য গুদামে চলতি বোরো মৌসুমে ধান, চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। বর্তমান খোলা বাজারের মূল্য থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ার পাশাপাশি ধান ক্রয়ে নানা রকম শর্ত থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অবশিষ্ট সময়ে ধান, চাল সংগ্রহ হবে কিনা তা নিয়ে শংশয় দেখা দিয়েছে স্বয়ং খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি ত্রাণ সহায়তার কারণে এ বছর মজুদ প্রায় শেষ। সরকারের লক্ষ্য ছিল এবারের বোরো মৌসুমে ধান, চাল সংগ্রহ করে পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় মজুদ সংরক্ষণ করা। কিন্তু সরকারের সে উদ্দেশ্যই ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ২৬ টাকা কেজি দরে ২ হাজার ৫’শ ৫৩ মেট্রিক টন ধান ও ৩৬ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৬’শ ৩৪ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মৌসুমের ২০ মে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। সে লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রতিজন কৃষকের নিকট থেকে ১ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের জন্য লটারির মাধ্যমে ৫’শ ৫৩ জন কৃষক নির্বাচন করে তালিকা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রেরণ করে। কিন্তু মাত্র ৩৬ জন কৃষক খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করেছে। অবশিষ্ট কৃষক খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। এছাড়া উপজেলার ৫৫ জন মিল মালিক ৩৬ টাকা কেজী দরে ১ হাজার ৬’শ ৩৪ মেট্রিক টন চাল দেয়ার চুক্তিপত্র করেন। এ পর্যন্ত মিল মালিকরা খাদ্য গুদামে মাত্র ১৭৫ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করেছেন। অবশিষ্ট চাল কবে নাগাদ সরবরাহ করবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে হতাশা।
ব্যবসায়ী মশিয়ার রহমান জানান, বর্তমান বাজারে প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১১’শ টাকায়। সে ক্ষেত্রে সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতিমন ১ হাজার ৪০ টাকা। খোলা বাজারে মূল্য বেশী হওয়ায় কৃষক সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে অনিহা দেখাচ্ছেন। শিকারপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ জানান, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে নানা রকম শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। টাকা পেতেও সময় লাগে। এর থেকে বাজারে ধানের দাম বেশী পাচ্ছি, সাথে সাথে টাকাও পাচ্ছি বলে খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করিনি। এছাড়া ধান কাটা মাড়াই খরচ জোগানোসহ মহাজনদের দেনা দিতে গিয়ে অবশিষ্ট ধান ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
অপরদিকে, বাজারে প্রতিমন চাল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭’শ থেকে ১ হাজার ৮’শ টাকায়। সেখানে সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতিমন ১ হাজার ৪’শ ৪০ টাকা। এক্ষেত্রেও খোলা বাজারে মূল্য বেশী বলে খাদ্য গুদামের সাথে চুক্তিবদ্ধ মিলাররা আগামী দিনের অপেক্ষায় রয়েছেন। মিল মালিক বিষ্ণুপদ দাস জানান, তিনি এ পর্যন্ত ১৯ মেট্রিক টন চাল গুদামে দিয়েছেন। এখনও ২ মাস সময় আছে। এর ভেতর চালের দাম কমলে বা এলসি’র চাল যদি আসে তাহলে তিনি চাল সরবরাহ করতে সক্ষম হবেন। এছাড়া আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক সংকটে চাল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৩’শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৯১ হাজার ৯’শ ৩৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। যা প্রতি বছর কেশবপুরের চাহিদা মিটিয়েও রপ্তানি হয়ে থাকে।
খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দিচ্ছেন না। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে কৃষকদের ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি এ বছর খোলা বাজারে ধান চালের মূল্য বেশী হওয়ায় কৃষক ও মিলাররা সরকারি গুদামে ধান, চাল বিক্রিতে অনিহা দেখাচ্ছেন। তবে মিল মালিকরা সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ। লাইসেন্স টিকিয়ে রাখা স্বার্থে শেষ সময়ে হলেও তারা গুদামে চাল সরবরাহ করবেন বলে তিনি আশাবাদি। #

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *