অপরাজেয়বাংলা ডেক্স: দেশের অর্ধশত জেলায় করোনার অতি উচ্চ সংক্রমণের মধ্যেই চোখ রাঙাতে শুরু করেছে ডেঙ্গু। রাজধানীতে এর প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালেও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আগের দিন সকাল থেকে গতকাল শুক্রবার একই সময় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত অন্তত ১৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরেও অনেক রোগী আছেন, যারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবে আসছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসে জোরালো সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অন্যান্য বছরের তুলনায় বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে। তখন করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে গিয়ে হাসপাতালগুলোকে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হবে।
জানা গেছে, এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর মৌসুম। কিন্তু এবার এপ্রিল-মে পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরের তেমন কোনো প্রকোপ দেখা না গেলেও চলতি জুন থেকেই হাসপাতালে রোগী বাড়তে শুরু করে। এই বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে ১০ শতাংশের তীব্র জ্বর হয় এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তি প্রয়োজন পড়ে। অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ রোগীকে ভর্তির প্রয়োজন হয় না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের হিসাবে, গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ৯৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা শহরের ১২টি সরকারি হাসপাতালে এবং ৩০টি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুু রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যাননি। জানা গেছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ ঢাকায় বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জনই ঢাকার বাসিন্দা। বাকি তিনজন শরীয়তপুর জেলার।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৮০ জনের মধ্যে ঢাকার ১২টি সরকারি হাসপাতালে ৩১ জন এবং ৩০টি বেসরকারি হাসপাতালে ২২৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে আটজন, ময়মনসিংহ বিভাগে একজন ও খুলনা বিভাগে ১৩ জন রয়েছেন। তবে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগে কোনো ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য মেলেনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি মৌসুমপূর্ব এডিস সার্ভে-২০২১ পরিচালনা করা হয় গত ২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০টি টিম ওই সময়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৮টি ওয়ার্ডে জরিপ করে। এতে ডিএনসিসির মধ্যে ১৩, ৩১, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড আর ডিএসসিসির ১২, ১৯, ৩৪, ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে এডিসের ঘনত্ব বেশি পাওয়া যায়। তবে এডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি ছিল লালমাটিয়া, ইকবাল রোড, সায়েদাবাদ ও উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকায়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ আমাদের সময়কে বলেন, এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। অর্থাৎ এখন ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুম। কারও জ্বর হলে তাকে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুজ্বরের বিষয়টি স্মরণে রাখতে হবে। কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে ডেঙ্গু পরীক্ষা।
তবে জ্বর থাকলে তিনি নিজে নিজে পরীক্ষা করবেন না বা ওষুধ খাবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে এডিশ মশা যেন বংশবিস্তার করতে না পারে, সে জন্য ঘরের ভেতর ও বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না। দিনের বেলায় বাসাবাড়িতে মশানাশক স্প্রে করে দরজা-জানালা কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে হবে। এ ছাড়া মশা নিধনে পদক্ষেপ নিতে হবে সিটি করপোরেশনকেও।সূত্র,আমাদের সময়
প্রকাশক ও সম্পাদক :
মোঃ কামরুল ইসলাম
মোবাইল নং : ০১৭১০৭৮৫০৪০
Copyright © 2025 অপরাজেয় বাংলা. All rights reserved.