
আদিল সাদ : কবিতার রূপকথার গল্পে যদি কারো নাম শোনা হয়, যদি সাধনা, শক্তি, কৌতুহলকে বাঁচিয়ে রেখে কবিতাকেই কেউ জীবন দেয়, যে অপরিসীম সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নিজেকে বাংলার মাটি ও মানুষের সাথে তুলনা করে এই বাঙালি সত্ত্বাকেই প্রতিষ্ঠা করেন, যিনি কোন গ্রহ, নক্ষত্রের ভিতরে নন, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য কলমে শ্লোগান তুলেন জীবনের কবিতা, মাটির কবিতা, মানুষের কবিতা—আমাদের সার্বজনীন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন।
যার হাত ধরে প্রতিষ্ঠা হয়েছে বাংলা সাহিত্যের কবিতার নতুন মাত্রা। যিনি বাংলা কবিতাকে সারা বিশ্বের কাছে সার্বজনীন করার জন্য কবিতাকে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করেছেন মুক্তিকামী বাঙালি এক যোদ্ধা হিসাবে। বাঙালিদের কাছে তার পরিচয় দেওয়ার মতন মনে হয় না, আর কিছু আছে।
রেজাউদ্দিন স্টালিন ২২শে নভেম্বর ১৯৬২ সালে যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। স্টালিনের শৈশব কাটে নলভাঙ্গা গ্রামে। পরবর্তীতে তারা সপরিবারে কালিগঞ্জ শহরে চলে যান। শৈশব থেকেই তিনি কবিতা লিখতেন। আট বছর বয়সে তার প্রথম কবিতা “শপথ” ১৯৭০ সালে শতদল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
স্টালিন রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ “ফিরিনি অবাধ্য আমি”। পরবর্তীতে তিনি আরও ৪৫টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থসমূহ হলো “আর্শীবাদ করি আমার দুঃসময়কে”, “আঙ্গুলের জন্য দ্বৈরথ”, “হিংস্র নৈশ্য ভোজ”, “সব জন্মে শত্রু ছিল যে”। সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ “তদন্ত রিপোর্ট”।
তিনি “রবীন্দ্রনাথ আরোগ্য” নামে একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত ছড়া গ্রন্থ “হাঁটতে থাকো”। স্টালিন রচিত একমাত্র উপন্যাস “সম্পর্কেরা ভাঙ্গে”। তার কবিতার একটি একক সিডি “আবার একদিন বৃষ্টি হবে”, এটি আবৃত্তি করেন প্রদীপ ঘোষ।
অনুবাদক জাকারিয়া সিরাজী “Selected Poems of Razuuddin Stalin” নামে একটি গ্রন্থ ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, উড়িয়া, রুশ, জার্মান, চীনা, জাপানি ও ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। নজরুল গবেষক হিসেবেও তিনি এদেশের সাধারণ মানুষের মাঝে পেয়েছেন সহস্র শ্রদ্ধা।
কবিতার বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৬ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ২০০৫ তিনি লাভ করেন। কবিতাকে আধুনিক করার পেছনে যে সকল কবিদের স্থান সবার উপরে থাকবে, সেখানে রেজাউদ্দিন স্টালিন নামটাও উচ্চারিত হবে।
আধুনিক বার্তা নিয়ে আবার এই সুন্দর পৃথিবীতে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির যোদ্ধা হিসাবে রেজাউদ্দিন স্টালিন পৃথিবীতে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দিক দেশ থেকে দেশান্তরে।
কবিরা কখনো বেঈমান হয় না। তারা হয় নিঃস্বার্থ মানুষ। রেজাউদ্দিন স্টালিন—যুগ যুগ ধরে এমন কবি আর আসবেন না। তিনি একজন সত্যিকারের বিপ্লবী, আমাদের বাংলা সাহিত্যের এক মহাতারকা।
সবকিছু শেষে গুণী মানুষকে সম্মান দিতে পারায় রাষ্ট্রকে জানাই অভিনন্দন।
শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা আমাদের কবিতার অলংকার, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন স্যারকে।
মহাপরিচালক, শিল্পকলা একাডেমি।