Type to search

আমার লাশ যেন ফুটবল ভবনে না যায়

অন্যান্য

আমার লাশ যেন ফুটবল ভবনে না যায়

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স

রোববার, ২২ নভেম্বর রাতে বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতাল থেকে পুরান ঢাকার বাসায়। সোমবার, ২৩ নভেম্বর, সকালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ভবনে। তারপর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেখান থেকে শশ্মানঘাটে নেয়ার পথে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খানিকক্ষণের যাত্রাবিরতি।

সবুজবাগের কালীমন্দিরের শশ্মানঘাটে ফুলের সুবাস ও চন্দনকাঠের ধোঁয়া উড়িয়ে বাদল রায় মিশে রইলেন এই দেশের বাতাসে, মাটিতে-জলকণায়! খেলার সতীর্থরা চোখের কোণে জল নিয়ে শেষ বিদায় বললেন। সমর্থকদের শ্রদ্ধা-সন্মান আর স্মরণে বাজল ‘জীবন ম্যাচের’ শেষ বাঁশি।

আজীবন ফুটবলের মানুষ সবার প্রিয় বাদল দা। কিন্তু শেষ যাত্রায় তার রথ কেন একবার সামান্য সময়ের জন্যও উঁকি দিল না বাংলাদেশ ফ্টুবলের সর্বোচ্চ অভিভাবক সংস্থা বাফুফের ঘাসমোড়া ব্যালকনিতে?

ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার পর বাফুফের সহ-সভাপতি পদে সব মিলিয়ে তিনবার অর্থাৎ ১২ বছরের মতো সময় কেটেছে তার এই ভবনে। আর নিজের একসময়ের সেই কর্মস্থলেই তার শেষ সন্মান জুটল না?

এই প্রশ্নের উত্তর হলো- বাদল রায় নিজেই চাননি তার শেষ বিদায়ে বাফুফের এই ভবন যেন শোক করে! বাফুফের এই সুরম্য ভবনের ওপর বাদল রায়ের একবুক ভরা অভিমান ছিল! এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুর থেকে সুরম্য অট্টালিকা হওয়ার পথ পরিক্রমার পুরোটাই দেখেছেন বাদল রায়। বাফুফের নির্বাহী কমিটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চেয়ারে বসেছেন দীর্ঘসময়ের জন্য। কিন্তু শেষের সময়টায় সেই ভবন থেকেই প্রাপ্য সন্মানটুকু পাননি তিনি। আর তাই অভিমান করে একসময় এই ভবনে নিজের জন্য বরাদ্ধকৃত কক্ষে যাওয়াই বন্ধ করে দেন।

২০০৮ সালে বাফুফের নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিন যখন প্রথমবারের মতো সভাপতি পদে নির্বাচন করেন তখন সেই নির্বাচনে বাদল রায় ছিলেন তার সতীর্থ। সালাউদ্দিনকে জেতানোর জন্য ভোট প্রার্থনা থেকে দৌড়ঝাঁপ-সবই করেছিলেন। যখন মাঠের খেলোয়াড় ছিলেন তখনো নব্বই মিনিটের খেলায় বাদল রায় নিঃস্বার্থপরতার উদাহরণ ছিলেন। গোল করার চেয়ে গোলের ক্ষেত্র বা উৎস তৈরিতে ছিল তার বড় ভূমিকা। সংগঠক হয়েও ঠিক তাই রইলেন বাদল রায়। কিন্তু অনিয়ম-অস্বচ্ছতার বেড়জাল, তা সে যতই শক্ত হোক; ছিন্ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। আর তাই সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কোন অন্যায়, অনৈতিকতা ও অবহেলাকে কখনো মেনে নেননি।

তার এই নীতিবোধ এবং প্রতিবাদী ব্যক্তিত্বের ছঁটা অনেকের জন্য ক্রমশ যন্ত্রনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাঁধে ব্যক্তিত্বের সংঘাত। যে সালাউদ্দিনের সঙ্গে বাফুফের প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনে বাদল রায় ছিলেন রানিংমেট, সেই তারাই দুজন বাফুফের সর্বশেষ নির্বাচনে একে অন্যের প্রতিপক্ষ।

নির্বাচনের সেই ‘ম্যাচ শুরুর আগেই’ যখন অদৃশ্য রেফারি বাদল রায়কে লালকার্ড দেখিয়ে দিলেন তখন ওই লড়াইও যে একপেশে হয়ে গেল! জানা-অজানা এমন অনেক অন্যায়ের শিকার হওয়া বাদল রায়ের মন ভাঙ্গল, সঙ্গে শরীরও বিদ্রোহ করে বসল। ‘ম্যাচ শেষের’ বাঁশি বোধকরি শুনতে পাচ্ছিলেন আগেভাগে। তাই সহধর্মিনী মাধুরী এবং বন্ধু ও প্রতিদিনের বিকেল সন্ধ্যায় সোনালি অতীত ক্লাবের প্রিয় সতীর্থ হাসানুজ্জামান বাবলু ও গাফ্ফারকে অনুরোধ করেছিলেন-‘তোমাদের বলে গেলাম, আমার লাশ যেন ফুটবল ভবনে না যায়।’

জীবিত বাদল যে ভবন থেকে সন্মান পাননি, সেখানে প্রাণশূণ্য শরীরে বাহারি ফুলের স্তবককে তো তার কাঁটাই মনে হবে!

শেষ যাত্রায় সেই কষ্ট পেতে চাননি বাদল রায়।

সূত্র, বার্তা২৪