শাহিন আহমেদ
দেশের বৃহত্তম কয়লার মোকাম যশোরের অভয়নগরে হুহু করে বাড়ছে কয়লার দাম। যে করণে নাগালের বাইরে চলে গেছে ইটের বাজার। এ এলাকায় পরপর চার দফায় কয়লার দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্য দিকে ইটের দাম ও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
জানা গেছে, এ অঞ্চলে নভেম্বর থেকে শুরু হয় নির্মাণ কাজের মৌসুম। তাই ইট ভাটাতে নতুন ইট ক্রয় করতে সবাই ব্যস্ত সময় পার করে। ভাটা মলিকগন ইট তৈরিতে তারা ও ব্যস্ত সময় পার করেন। এ সময় সারা দেশে পুরোদমে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এতে ব্যবহূত হয় বিপুল পরিমাণ ইট। আমদানীকৃত কয়লার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে এর প্রভাব পড়েছে ইটের বাজারে। উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রতি ইউনিট ইটের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত। কয়লার দাম বেশি বলে ইট ভাটা মালিকগন তেমন ইটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অনেকেই বলছে ফেব্রয়ারী থেকে ইট তৈরি করবে না।
গত বছর এপ্রিল থেকে বিশ্বব্যাপী বাড়তে শুরু করে কয়লার দাম। ওই সময়ে টনপ্রতি কয়লার দাম ছিল উন্নত মানের ইন্দোনেশিয়া ৯ হাজার টাকা। সাউদ আফ্রিকার কয়লা ছিল ৮ হাজার টাকা, বর্তমানে একই মানের কয়লা টনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২১ হাজার টাকায়, যার কারণে দেশের বাজারে ইট উৎপাদনের খরচও বেড়ে গেছে জানিয়েছেন ইটভাটা মালিকরা। চাপাই নব্বাবগঞ্জ থেকে নওয়াপাড়ায় কয়লা কিনতে আসা মোশারেফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম, গাইবান্ধা থেকে সোরয়ার রহমান, পাবনা থেকে শাহিনুর রহমান, মেহেরপুর থেকে নুর ইসলাম, নাভারণ থেকে খালেক সাহেব বলেন, কয়লার দাম বেশি থাকায়। এবার দেরিতে ভ্টাায় আগুন দেয়া হয়েছে। যে পরিমান প্রতি বছর ইট তৈরি করি । তা এবার আরো বেশি বানাও হবে না। এক দু গাড়ি কয়লা ক্রয় করে ভাটা চালিয়ে যাচ্ছি। ভাটায় কোন কয়লা মজুদ করতে পারছি না।
প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ ইট তৈরি করি। কয়লার দাম বেশি থাকায়। এবার ৬/৭ লাখের মত ইট তৈরি হবে। তার বেশি হবে না । প্রথমে যখন কয়লা কিতে আসি তখন ভাল মানের কয়লা ১০ হাজার টাকা ছিল, এরপর দ্বিতীয় বারে কয়লা ক্রয় করতে আসলে ১৪ হাজার টাকা প্রতি টন। তৃতীয় দফায় কয়লার দাম নিয়া হয় ১৬ হাজার টাকা। এখন কয়লার দাম ২১ হাজার টাকা। এভাবে প্রতিনিয়ত আমদানীকারকেরা কয়লার দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে, এ উপজেলায় কয়লা আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান কয়লা আমদানী করতে দেখা গেছে, উত্তরা প্রাইভেট লিমিটেড, সাহারা এন্টার প্রাইজ, শেখ ব্রার্দাস, মোশারেফ এন্ড ব্রার্দাস, ইউনাইটেড কোল লিমিটেড, এ্যালিগেন্ট কোল, বসুন্ধারা গ্রæপ, মেঘনা গ্রæপ, আফিল ট্রেড ইন্টান্যাশনাল, সৈনিক ট্রের্ডাস, জেএইচএম ইন্টান্যাশনাল, সিলেট সিন্ডিকেট, ইন্ডিয়ান কয়লা এনেছে জাফিদ্রী এন্টার প্রাইজ। অন্য দিকে দেখা গেছে, এখনো কয়লার দাম বেশি থাকায় ইট ভাটা চালু করতে পারেনি। যেমন, মোরাদ বিক্্রস, মোল্যা বিক্্রস, যমুনা বিক্্রস, আলী বিক্্রস, কাজী বিক্্রস, ইতনা বিক্্রস, এমইডি বিক্্রস। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার কিছু কিছু ভাটা চালু হয়নি বলে জানা গেছে । আবাসন প্রকল্পের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইটের দাম এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এক সময় প্রতি ইউনিট ইট ৮ টাকায় ক্রয় করলেও বর্তমানে একই মানের ইট কিনতে ব্যয় করতে হচ্ছে ১১ টাকা। আবাসন খাতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ইটের চাহিদা থাকায় ফ্ল্যাট তৈরিতে খরচও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। বেশ কয়েকটি ইটভাটায় কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে ইটভাটার জন্য মালিকরা কয়লা কিনে রাখেন। এ বছর কয়লার দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় আগের তুলনায় কয়লার মজুদ তেমন করতে পারেনি। যার কারণে প্রতিটি ইট তৈরিতে খরচ বেড়ে যাওয়া ছাড়াও আগের তুলনায় অর্ধেকেরও কম উৎপাদন হচ্ছে ইট। ফলে চলতি সময়ে নির্মাণ মৌসুমে সারা দেশেই ইটের সংকট থাকবে বলে মনে করছেন ইটভাটা মালিকরা। তাছাড়া উৎপাদন খরচ বাড়লেও সে অনুপাতে দাম বাড়ানোর সুযোগ না থাকায় ইটভাটাগুলো চলতি মৌসুমে লোকসানের মধ্যে পড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। ইটভাটা মালিক তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে প্রতিটি মাঝারি মানের প্রতি ইউনিট ইট বিক্রি হতো ৫ থেকে ৬ টাকা (মাঠ পর্যায়ে)। বর্তমানে একই মানের ইট বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকায়। অন্যদিকে ভালো মানের ইটের দাম ছিল ৮ থেকে ৯ টাকা। বর্তমানে একই মানের ইট বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১০ টাকা থেকে সাড়ে ১১ টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো মানের ইট ইউনিট প্রতি ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে নির্মাণ খাতে ইটের চাহিদা থাকলেও বিক্রি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি ইটভাটাগুলোয় বর্তমান মৌসুমে ইট উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। কয়লার দাম না কমলে দেশে ইটের দামও কমবে না।
দেশের আবাসন ও নির্মাণ খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে খাত সংশ্লিষ্টরা। নওয়াপাড়া কয়লা ব্যবসায়ী ( সেকেন্ড পাটির্র) মধ্যে কয়েকজন জানান, কয়েক দফায় আমদানীকারকেরা কয়লার দাম বাড়িয়েছে। এবার ইট ভাটা মালিকগন ইট তেমন তৈরি করতে পারছে না। যে কারণে তাদের বকেয়া টাকা উত্তোলনের জন্য অনেক কাঠখড় পোয়াতে হবে। তাদের কোটি কোটি বকেয়া টাকা তুলতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর সদর উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সহ সভাপতি আলহাজ্ব নাজিরউদ্দিন বলেন, আমার ৩ টা ভাটা । আমি প্রতিবছর ২ কোটি ১০ লাখ ইট তৈরি করি। এবার এর অর্ধেকও ইট বানাতে পারবো না। আমদানি করা কয়লার দাম প্রায় তিন গুণ বেড়ে গেছে, যার কারণে ইটভাটায় বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাছাড়া কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি হলেও সেভাবে ইটের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ইটভাটাগুলো বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এ ব্যপারে সাহারা এন্টার প্রাইজের নওয়াপাড়া শাখা অফিসের ইনর্চাজ মোহাম্মদ রিদুয়ান কবির জানান, এই সিজিনে প্রথম থেকেই কয়লার দাম ১৭ হাজার ১৮ হাজার ১৯ হাজার ২০ হাজার টাকা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে চায়নারা কয়লা ক্রয় করেছে। যে কারণে দাম বেশি। তাছাড় করোনার একটা প্রভাব রয়েছে এই সেক্টরে। জ্বালানী তেলের দাম, জাহাজ ভাড়া বেশি হওয়ায় কয়লা দাম বেশি।
প্রকাশক ও সম্পাদক :
মোঃ কামরুল ইসলাম
মোবাইল নং : ০১৭১০৭৮৫০৪০
Copyright © 2025 অপরাজেয় বাংলা. All rights reserved.