সুন্দরী সোহেল কী একে একে তার চার সহযোগীকে হত্যা করলো ??

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স-রাজধানীর মহাখালীতে যুবলীগ নেতা কাজী রাশেদ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি ইউসুফ সরদার সোহেল ওরফে সুন্দরী সোহেলকে এক বছরের বেশি সময়েও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে থাকা বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়ায় অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
সেখান থেকেই নিজ ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সোহেল এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন বনানী-মহাখালী এলাকা। এমনকি মামলা তুলে নিতে বাদী নিহত রাশেদের স্ত্রী মৌসুমী আক্তারকে দেখিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন। তাতে রাজি না হওয়ায় কখনো দিচ্ছেন প্রাণনাশের হুমকি। আবার কখনো মৌসুমীর অশ্লীল ছবি তৈরি করে ভাইরাল করারও হুমকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে গত ২৪ জুলাই বনানী থানায় জিডি করেছেন মৌসুমী।
গত বুধবার দুপুরে একটি ফোন নম্বর থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের এক কর্মকর্তার কাছে ফোন দেন সুন্দরী সোহেল। নম্বরটির অবস্থান এস্তোনিয়ায় বলে এরই মধ্যে শনাক্ত করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। গত ৩১ জুলাই দুপুর ১২টায় অপরিচিত সেই একই নম্বর (প্রাইভেট) থেকে মামলার বাদী মৌসুমীকেও ফোন দিয়েছিলেন সোহেল। অব্যাহত হুমকির কারণে মৌসুমী ভয়ে সেই ফোন রিসিভ করেননি বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে মহাখালীর স্কুল রোডের জিপি-গ/৩৩/১ নম্বর ভবনে গুলি করে কাজী রাশেদকে হত্যা করা হয়। রাশেদ একসময় ছিলেন সুন্দরী সোহেলের দীর্ঘদিনের দেহরক্ষী। ১৫ জুলাই ভোরে সুন্দরী সোহেলের সম্পাদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল রেইনবো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম অফিসের পেছন থেকে রাশেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই হত্যাকা-ে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও গ্রেপ্তার দেখিয়েছে বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাকির হোসেন সরদারকে। জাকির হোসেন সম্পর্কে সোহেলের চাচা।
জাকির হোসেন গত বছরের ৮ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকার করেছেন, তার ভাতিজা সোহেলই যুবলীগ নেতা রাশেদ হত্যাকা-ের হোতা। খুন এবং ওই ভবন থেকে লাশ সরানো পর্যন্ত সোহেলকে সহযোগিতা করে দীপু, হাসু, ফিরোজ, জহিরসহ অচেনা আরও দু-তিনজন। জাকিরকে ঘটনার আগে সোহেল ও ফিরোজ ডেকে নিয়ে বলে, ‘আজ রাশেদকে ফালায়া দিমু, তুই নিচে পাহারায় থাকিস। কেউ যেন ওপরে যেতে না পারে।’ হত্যাকা-ের পর খুনিদের লাশ ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়ার যে দৃশ্য সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে, সেখানেও সোহেল, ফিরোজ, হাসু, দীপু ও জহিরসহ মোট ৬ জনের উপস্থিতি দেখা গেছে। গত বছরের ৭ আগস্ট জাকিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। অথচ জাতীয় নির্বাচনের কয়েকদিন আগেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান যুবলীগ নেতা জাকির। তিনি এখন প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু ঘটনায় প্রত্যক্ষ্যভাবে জড়িত দীপু, হাসু, ফিরোজ ও জহির হত্যাকা-ের পর থেকে একবারের জন্যও বাদীর সঙ্গে কথা দূরে থাক, নিজ পরিবারের কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, খুনে অভিযুক্ত এই চারজন এখন কোথায়? মামলার বাদী মৌসুমী আক্তারের সন্দেহ, সাক্ষী না রাখতে ওই চারজনকেও হত্যার পর লাশ গুম করেছে সোহেল। তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও মৌসুমীর এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। একই আশঙ্কা করছে দীপু, হাসু, ফিরোজ ও জহিরের পরিবারও।
গত সোমবার মহাখালীর আকিজ পাড়ার বাসায় কথা হয় অভিযুক্ত দীপুর স্ত্রী রিয়া মাহবুবের সঙ্গে। আশঙ্কার কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। রিয়া বলেন, রাশেদ হত্যাকা-ের সময় তার মেয়ে দিহী ছিল ৯ মাসের পেটে। কিন্তু ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও একবারের জন্য দীপু আমাদের খবর নেয়নি। এটা হতে পারে না। হয়তো রাশেদের মতো ওরও কিছু হয়েছে। আমার স্বামী অপরাধ করলে তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করার দাবি করছি।
মহাখালীর দক্ষিণপাড়ার বাসায় কথা হয় ফিরোজের স্ত্রী মাসুদার সঙ্গে। তিনি বলেন, তাদের দুই মেয়ে, এক ছেলের মধ্যে ১২ মাস বয়সী ফাতেমাকে এখনো দেখেনি ফিরোজ। রাশেদ খুনের পর থেকে নিখোঁজ সে। আমার কিংবা সন্তানদেরও খোঁজ নেয়নি। তারও হয়তো কোনো অঘটন ঘটেছে। জীবিত ফিরোজ না হোক, অন্তত তার লাশটুকু যেন আমরা ফেরত পাই। মাসুদার সঙ্গে এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ফিরোজের মা ফিরোজা বেগমও।
রাশেদ হত্যা মামলার বাদী মৌসুমী বলেন, মামলা তুলে নিতে সুন্দরী সোহেল ও তার ক্যাডারদের হুমকি-ধমকিতে এ পর্যন্ত ৫টির মতো জিডি করেছি আমরা। কিন্তু এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সোহেল, জাকিরের সঙ্গে কথা হলেও অন্য চার খুনি দীপু, হাসু, ফিরোজ ও জহিরকে কেউ কোথাও দেখেনি। ঘটনার পর থেকে তারাও নিখোঁজ। এমনকি পরিবারের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেনি। সাক্ষী শেষ করে দিতে ওই চারজনকেও সোহেল খুন করেছে বলে আমার বদ্ধমূল ধারণা। সোহেল ধরা পড়লেই সব পরিষ্কার হবে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, রাশেদ হত্যাকা-ের দিন কয়েক পর থেকেই আমরা অভিযুক্ত সবার পরিবারের মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ব্যক্তিজীবনেও নজরদারি করছি। কিন্তু খুনে জড়িত দীপু, হাসু, ফিরোজ ও জহির এখন পর্যন্ত তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। গত বুধবার দুপুরে এস্তোনিয়া থেকে একটি নম্বরে আমার কাছে ফোন আসে। ধারণা করছি, সেটি সোহেলের। কিন্তু অভিযুক্ত ওই ৪ জনের অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। সাক্ষী সরিয়ে দিতে ওই ৪ জনকেও হত্যা করা হয়েছে বাদীর এমন আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছি না। বিষয়টি আমরাও খতিয়ে দেখছি।
সূত্র- আমাদের সময়