Type to search

রাজধানীতে গৃহবধূর লাশের এ কেমন সুরতহাল রিপো-ট করলো পুলিশ ?

জাতীয়

রাজধানীতে গৃহবধূর লাশের এ কেমন সুরতহাল রিপো-ট করলো পুলিশ ?

অপনাজেয় বাংলা ডেক্স- রাজধানীর পল্লবীতে ডরথী বাড়ৈ (৩৮) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে; ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন তিনি। তার মৃত্যুর পর ঘটেছে আরেক রহস্যজনক কাণ্ড। লাশ একটি হলেও সুরতহাল প্রতিবেদন হয়েছে দুটি। নজিরবিহীন এ কাণ্ডের কাণ্ডারি পল্লবী থানার এসআই মো. মোরশেদ আলম। দুই সুরতহাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। তবে দুটি সুরতহাল প্রতিবেদনের কপিই রয়েছে আমাদের সময়ের কাছে। প্রতিবেদন দুটি গত শনিবার রাত ৮টা থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে করা হয়েছে। নিহতের স্বজনদের বদ্ধমূল ধারণা, ডরথী ছাদ থেকে পড়ে যাননি, তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের সি-ব্লকের ১২নং হোল্ডিংয়ে অবস্থিত পাঁচতলা ভবনের সামনে থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ডরথীকে। সুরতহাল প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী-ভবনটির ছাদে আটকেপড়া একটি পোষা বিড়াল উদ্ধার করতে গিয়ে পা পিছলে নীচে পড়ে মারা গেছেন এ গৃহবধূ। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে পল্লবী থানার এসআই মো. মোরশেদ আলম শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে মর্গে গিয়ে ডরথীর লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন।

সূত্রের খবর-শনিবার রাতে এ সুরতহাল করার পর রবিবার দুপুর একটার দিকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মর্গে গিয়ে লাশ পর্যবেক্ষণ করেন ময়নাতদন্ত করার জন্য; কিন্তু সুরতহাল রিপোর্টের সঙ্গে বাস্তবে সামঞ্জস্যতা না পেয়ে তিনি ময়নাতদন্ত করতে রাজি হননি। সুরতহাল প্রস্তুতকারীকে ডেকে পাঠাতে বলেন

চিকিৎসক। খবর পেয়ে এসআই মোরশেদ আলম মর্গে যান। বেশ কিছু সময় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। এর পর নতুন করে ডরথীর লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করেন ওই এসআই। বেলা আড়াইটার দিকে লেখা নতুন সুরতহাল প্রতিবেদনে এসআই মোরশেদ উল্লেখ করেন-লাশের মাথার পেছনে ডান পাশে ফোলা জখম রয়েছে। নাক, মুখ ও কান স্বাভাবিক। দাঁত বন্ধ। আগের সুরতহাল প্রতিবেদনে ‘গলায় কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই’ লিখলেও পরেরটিতে লিখেন-‘গলার বাম পাশে ছোলা দাগ রয়েছে। মুষ্টি খোলা দুই হাত শরীরের সঙ্গে লাগানো।’

আগের রিপোর্টে ছিল-‘বাম হাতের কনুইয়ের নিচে হালকা ছোলা জখম’। পরেরটিতে লেখেন-‘বাম হাতের কনুইয়ের নিচে ভাঙা এবং হালকা ছোলা জখম রয়েছে। কনুইয়ের ওপরে এবং নিচে ছোলা দাগ রয়েছে। ডান হাতের কব্জির ওপর কালো দাগ রয়েছে।’ আগেরটিতে এর পর লেখেন-‘এ ছাড়া শরীরে আর কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই।’ পরেরটিতে লেখেন-‘ পিঠের বাম পাশে অনেকগুলো কালো ছোলা দাগ ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছোলা দাগ রয়েছে।’ আগের রিপোর্টে ‘ডান পা হালকা বাঁকা’ লেখা হলেও নতুন সুরতহালে একই এসআই উল্লেখ করেন-‘ডান উরু ভাঙা এবং হাঁটুর নিচে-পেছনে ছোলা জখম; হালকা বাঁকা বাম পায়ের হাঁটুর ওপরেও ছোলা দাগ রয়েছে।’

তিন বছর আগে মার্টিন কেপি দাসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে হয় ডরথীর। এর পর থেকে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি ডরথী। যে ভবন থেকে পড়ে যান ডরথী, সে ভবনের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন মার্টিন-ডরথী। মার্টিন জানান, গত শনিবার দুপুরে পাঁচতলা ভবনটির ছাদে আটকেপড়া পোষা বিড়াল উদ্ধার করতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত পা পিছলে ছাদ থেকে পার্শ্ববর্তী দুই ভবনের ফাঁকা জায়গা দিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে আহত হন তার স্ত্রী। খবর পেয়ে প্রতিবেশীরা প্রথমে ডরথীকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ডরথীকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পর মৃতদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

ডরথীর বড় ভাই তাপস বাড়ৈয়ের বদ্ধমূল ধারণা, তার বোনকে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার বোন ছাদ থেকে পড়ে গেছে-এটা আমরা মানতেই পারছি না। কারণ ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার মতো বিশেষ কোনো আলামত ছিল না লাশের শরীরে। তা ছাড়া সুরতহাল নিয়ে যা হলো, সব কিছু মিলিয়ে আমার মনে হয় ডরথী পড়ে যায়নি, তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। যা সুষ্ঠু তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।

এক লাশের দুই সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনা নজিরবিহীন। মামলা চালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো লাশের সুরতহাল। তাই অত্যন্ত সাবধানী ও দক্ষতার সঙ্গে এটি প্রস্তুত করা অত্যাবশ্যক। এক লাশের দুই সুরতহাল প্রস্তুত করার অর্থ হলো-কোনো এক পক্ষের হয়ে এ কাজটি করেছেন ওই কর্মকর্তা, নয়ত পুরোটাই ছিল তার অজ্ঞতা বা কর্তব্যকাজে অবহেলা।

দুই সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী পল্লবী থানার এসআই মোরশেদ আলম অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে গতকাল উল্টো প্রশ্ন রাখেন-এক লাশের দুই সুরতহাল করা হয় নাকি? এর পর বলেন, ডরথী বাড়ৈয়ের লাশেরও একটি সুরতহাল হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন ওই গৃহবধূ। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

সূত্র- আমাদের সময়.কম