Type to search

মণিরামপুরে ছেলে -বৌমার নির্যাতনে বৃদ্ধ’র আত্মহত্যার অভিযোগ

অন্যান্য

মণিরামপুরে ছেলে -বৌমার নির্যাতনে বৃদ্ধ’র আত্মহত্যার অভিযোগ

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :

যশোরের মণিরামপুরের পল্লীতে ছেলে-বৌমার অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মৃত্যুঞ্জয় রায় (৭১) নামে এক বৃদ্ধার আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই বৃদ্ধ ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে পরের দিন সকাল হতেই তড়িঘড়ি করে দাফন করা হয় তাকে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নের কুমারসীমা গ্রামে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই বৃদ্ধ’র মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উৎঘাটন করে মৃত্যুর উষ্কানিদাতা ছেলে কৃষকলীগ নেতা সুস্কৃতি রায় ও তার স্ত্রী বৃদ্ধের নির্যাতনকারী মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স ঝর্ণা বিশ্বাসের শাস্তি দাবি করেছেন। তবে ঘটনার পাঁচদিন পার হলেও সুস্কৃতি স্থানীয় বিতর্কিত প্রভাবশালীদের সাথে উঠাবসা করায় প্রকাশে কেউ মুখ খুলতে পারছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামবাসী জানায়, মৃত্যুঞ্জয়ের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছোট ছেলে অসিত রায় দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করেন। আর একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে পাশ্ববর্তী পাঁচবাড়ীয়া গ্রামে। এই সুযোগে সব সম্পত্তি লিখে দিতে বড় ছেলে কখনও কৃষকলীগ আবার কখনও আওয়ামীলীগের নেতা পরিচয়দানকারী সুস্কৃতি রায় ও তার স্ত্রী ঝর্ণা বিশ্বাস বৃদ্ধ মৃত্যুঞ্জয় ও তার স্ত্রী পাগলী রায়কে নানাভাবে অত্যাচার করে আসছিল। এক পর্যায়ে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদেরকে সংসার থেকে আলাদা করে দেয়া হয়। সেই থেকে স্ত্রীকে রোজগারহীন অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের দিন চলছিল অতি কষ্টে।

তারপরও জমি পাওয়ার আসায় প্রতিনিয়ত মারপিট ও নানাভাবে নির্যাতন চলতো তাদের ওপর। ছেলে ও বৌমার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এর আগে ওই বৃদ্ধ দুই দফায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার স্ত্রী ও প্রতিবেশীরা টের পাওয়ায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান তিনি। এরপরও বৃদ্ধ মা ও বাবাকে নির্যাতন করা সুস্কৃতি ও স্ত্রীর নিত্যদিনের রুটিন হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি এরই ধারাবাহিকতায় নির্যাতন ও ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে ঘরের গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে কাউকে না জানিয়ে তড়িঘড়ি তার ছেলে ও বৌমা মিলে নিজেদের বিশ্বস্থ এক প্রতিবেশির সহায়তায় দড়ি কেটে মৃত. ব্যক্তিকে নামান। এরপর আত্মহত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বৃদ্ধজনিত কারণে মারা গেছেন বলে প্রতিবেশিদের জড়ো করেন। এ সময় অনেকেই তার গলায় দাগের কথা নিয়ে গুঞ্জন শুরু করলেও বুধবার সকালেই দাহ করা হয় ওই বৃদ্ধকে।

ঘটনার দুইদিন পার হলেও সুস্কৃতি ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে পারছে না। কয়েকজন এ নিয়ে কথা বলায় এরই মধ্যে তাদেরকে নানাভাবে ভীতি দেখানো হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন। তবে বৃদ্ধ মৃত্যুঞ্জয়ের কষ্ট যারা দিনের পর দিন দেখেছেন সর্বশেষ তার এমন পরিনতিতে এ মৃত্যুর জন্য ছেলে সুস্কৃতি ও তার স্ত্রী ঝর্ণাকে দোষারোপ করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে, শেষ জীবনে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মৃতের স্ত্রী পাগলী রায়। স্বামীর এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তিনি। কিন্তু ছেলে ও বৌমার ভয়ে তার স্বামীর মৃত্যু রহস্য কাউকে বলতে পারছেন না তিনি। তবে স্থানীয়দের বিশ্ব্সা প্রশাসনের অভয় পেলে তিনি হয়তো প্রকৃত ঘটনা খুলে বলতে পারেন। তাছাড়া ভবিষ্যতে কীভাবে চলবে তার দিন এমন চিন্তাতেও ভেঙে পড়েছেন স্বামীহারা অসহায় পাগলী রায়। তার ওপর চলা ছেরে ও বৌমার অমানুষিক নির্যাচন বন্ধ হবে কীনা বা কেউ তার পাশে থাকবে কীনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।

————————————————————————————————————