Type to search

ভবদহ কৃষক বিদ্রোহ /তৃষা চামেলি

অভয়নগর

ভবদহ কৃষক বিদ্রোহ /তৃষা চামেলি

ভবদহ কৃষক বিদ্রোহ / তৃষা চামেলি

আগামীকাল পৌষ সংক্রান্তি
পিঠাপুলির উৎসব
চালের গুঁড়োয় কতোকাল যে সাদা হয়নি পাড়ার ঢেকিঘর!
ঢেকিঘর ! সেখানে তো কোলাব্যাঙের উর্বর সংসার ।
কতোকাল যে খাইনি রস টইটুম্বর চিতোই পিঠা !
ভুলেই গেছি পাকান, চুষি, দুধপুলি রসের ক্ষীরের মায়ামী ঘ্রাণ ।
আমি ভবদহ কবলিত এক অভিশপ্ত কৃষক
আমার চাষের জমি খেয়ে নিচ্ছে
ভবদহের দাঁতাল দাঁত
আমার ধানভরা গোলায় এখন
জলজ কীটের বর্ধিষ্ণু বসত
শূন্য গোয়ালঘর যেন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে কাতরাচ্ছে গো শাবকের নিদারুণ শূন্যতায়
শিয়াল ডাকা হুক্কাহুয়া মাঠ সে তো
বারোমাস থৈ থৈ জলের সমুদ্দুর
আহা্ রে আমার রূপকথা ঝরা ,সুভরে গানের সুরেলা উঠোন !
শ্যাওলা কচুরিপানার জংলা জঙ্গল এখন যার শোভা।
শ্রীহীন স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ হয়েছে তো বহুকাল যাবত
ফোর জি নেটওয়ার্কের ধূসর মগ্নতায় দিশেহারা টিনএজার সময়
স্মার্টফোনের রঙিন স্ক্রিনে বন্দি চশমাওয়ালা রুগ্ন চোখের দৃষ্টি;
আহা্ রে আমার হাজার বছরের ঐতিহ্য বয়ে বেড়ানো পাললিক গ্ৰামবাংলা !
ভবদহের অভিশপ্ত জল কেড়ে নিচ্ছে আমার প্রেমময় সমৃদ্ধ সংসারের সোনার চাবি
উজাড় করে দিয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, আমলকী, খেজুর, নারকেলের বন…
শস্যবন্ত ফসলি মাঠের গৌরবময় দাপুটে মৌসুম ।
আমরা লাখো ভুক্তভোগী মানুষ
কৃষক, জেলে ,দিনমজুর , শ্রমিক
আমরাই আন্দোলন করি, সমাবেশ করি, মিটিং , মিছিল ধর্মঘট করি ।
ফলে সরকারি বরাদ্দ আসে
ওদিকে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকে
পেটমোটা সব ঘের ব্যবসায়ী
আর যতোসব নৈতিক স্খলনপুষ্ট
কুকুরবৃত্তিক চকচকে ধূর্ত নেতার দল
আমাদের হক মেরে ওরা আলিশান বাড়ি বানায়,
লেটেস্ট গাড়িতে চড়ে
ময়ূরপঙ্খিতে উড়াল দেয় স্বপ্নের স্বর্গপুরে
সোমরসে ঠোঁট ডুবিয়ে
মেনোকা ,ঊর্বশীদের সুচারু শরীরের ভাঁজে রাখে
লোভাতুর নির্লজ্জ কামুক দৃষ্টির জঘন্যতা
আবার স্ত্রীকে অনন্তযৌবনা দেখতে স্কীন সার্জারি করাতে নিয়ে যায়
সিঙ্গাপুর…লন্ডন…
জনগণ জানতে চায়
এই বিলাসিতার উৎস কি ?
দামি আরাম কেদারায় বসে
তোমরা আয়েশ করো কার টাকায় ?
কার মুখের গ্ৰাস কেড়ে হও ঝলমলে বহুতল ভবনের মালিক ?
তোমরা নাকি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লড়াকু সৈনিক, দেশপ্রেমিক!
ভাবতেই গা শিউরে ওঠে লজ্জা আর ঘৃণায় !
ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ…
এই তোমরাই নাকি দীক্ষিত হয়েছো দেশ সেবার মহান ব্রতে !
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার তোমারাই নাকি স্বাপ্নিক কারিগর !
হা হা হা হা হা হা হা হা হা…
আরে দেশপ্রেমিক তো চর্মকার, কর্মকার, জেলে , তাঁতি , মুচি, মেথর, ডোমেরা
বাংলার তাবৎ খেটে খাওয়া মানুষের দল ।
আরে বঙ্গবন্ধু তো জানতেন অসুস্থ অপরাজনীতির দুঃশাসন কীভাবে ভেঙে দেয় সমাজ,সভ্যতা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ।
তবে কি এই সমস্ত চালচোর, তেল চোর, টিনচোর রক্তচোষাদের জন্য প্রাণ বলিদান দিয়েছিল লক্ষ লক্ষ বাঙালি
সম্ভ্রম হারিয়েছিল হাজার মা- বোন !
আমরা নাখা- ভুখা কৃষক জানতে চাই
আমার চৌদ্দ পুরুষের ভিটেমাটিকে তোমরা জলাভূমি ঘোষণা করার দুঃসাহস পাও কোথায় ?
আমার পায়ের তলায় মাটি নেই
ক্ষুধায় অন্ন নেই
চোখের সামনে আইবুড়ো মেয়েটা ঘুরে বেড়াচ্ছে জীর্ণ কাপড়ে
ঠিক দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যা হয়
তোমরা রক্তচোষা পরজীবীরা হয়তো মনে করো কৃষকেরা দুর্বল
কিন্তু না ,এই কৃষক- শ্রমিকই শিল্পের আদিম কারিগর
সভ্যতার জন্মদাতা, দিন বদলের প্রবাদপুরুষ
বলরাম, পরশুরাম,ইলা মিত্রের কথা মনে আছে তো তোমাদের ?
আমরা আর কোন হীরক রাজার দেশ চাই না
এই আমরাই তো ‘৪৭ ‘৫২ ‘৬৯ একাত্তরে বুকের রক্ত দিয়েছি অবলীলায়
তোমাদের শেষ হুঁশিয়ারি দিচ্ছি শোষক
এবার যদি নতুন কোন ছলাকলা হয়
তবে কৃষকের লাঙল, শাবল, কাস্তে কোদাল জমিন থেকে উঠে আসবে বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয়
জালিমের পাপিষ্ঠ বুক রক্তাক্ত করে তবেই সে শান্ত হবে ।
ইতিহাসের পাতা ফুঁড়ে নাচোল বিদ্রোহের মতো
জন্ম নেবে নতুন আরেকটি কৃষক বিদ্রোহ
যার নাম ভবদহ কৃষক বিদ্রোহ ।
১৩.০১.২০২২