প্রতীমা গড়ে ভবদহ পাড়ের বেকার যুবক বিপ্লব বিশ্বাসের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে

কামরুল ইসলাম
ভক্তির টানে দেব দেবীর মূর্তি গড়িয়ে ভাগ্যের পরিবর্তণ করেছেন শিক্ষিত বেকার যুবক বিপ্লব বিশ^াস(৩১)। তার হাতে গড়া নিখঁত প্রতীমা এলাবাসীর মনে দেবতা ভক্তি জাগ্রত করেছে।
বছরের পর বছর ধরে ভবদহ জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হয়ে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভাটবিলা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক বিজ্ঞান বিশ^াসের সংসারে নেমে এসছিলো অমানিশার অন্ধকার। বিজ্ঞান বিশ^াস জানান, ভবদহ জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হওয়ার আগে তার সংসারে সুখ ছিল্।ো বিলে ধান, তিল,তরমুজ ও তরিতরকারির চাষ হতো ও বর্ষাকালে মাছে ভরপুর ছিলো। তখন সংসারে সুখ ছিলো। এর মাঝে তার ঔরাসে জন্ম নেয় ছেলে বিপ্লব বিশ^াস ও মেয়ে দীপিকা বিশ^াস। সংসারে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর এলাকায় ভবদহ সমস্যার কারনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তার পর থেকে সংসারে আসে অভাব অনাটন। শত অভাবের মাঝেও তার অদম্য ইচ্ছা সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর। অভাবের কারনে মেয়ে দীপিকা বিশ^াসের বিয়ে দেয়া হয় এসএসসি পাশের পর। আর ছেলে বিপ্লব বিশ^াসকে দীন মজুর খেটে লেখাপড়া শেখাতে হয়। এসএসপি পাশের পর ছেলে বিপ্লব বিশ^াসকে ও অভাবের কারনে লেখাপড়ার পাশাপাশি দীনমজুর খাটতে হয়। দীন মজুর খেটে খেটে বিপ্লব বিশ^াস সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স পাশ করেছেন। তার পর আর লেখাপাড়ার সুযোগ হয়নি তার।
বিপ্লব বিশ^াস জানান,চাকরির আশায় অনেক চেষ্টা করেও চাকরি নামের সোনার হরিণের দেখা মেলেনি। সংসারে অভাবের তাড়নায় দীনমজুর খেটে তার বড় হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যেতে থাকে। এর মঝে তার মাতার অনুপ্রেরণা ও ঈশ^র ভক্তির টানে বিকল্প পথ হিসাবে দেবদেবীর প্রতীমা গড়ার কাজ শিখতে শুরু করেন।
হাড়ভাঙ্গা দীনমজুর খাটার মাঝে দিয়ে তিনি গুরু ধরে প্রতীমা গড়নের কাজ শিখতে থাকেন। তার অদম্য আগ্রহের পর এক সময় তিনি সফল ভাবে সকল দেবদেবীর প্রতীমা গড়নের শিক্ষা অর্জণ করেন। মাটি ও ইট, সিমেন্ট দিয়ে তিনি মূর্তি গড়ান। এখন তার আশপাশের বিভিন্ন মন্দির থেকে ডাক আসতে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে যশোরের অভয়নগর, মনিরাপুর, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সহ অনেক স্থানে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে তার।
বিপ্লব বিশ^াসের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে- টাঙ্গাইলে আরপি সাহা মন্দিরে ইট, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি নানা দেব দেবীর মূর্তী, যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুড়িরডাঙ্গি মহাশ্মশানে ১৫ ফুট আকৃতির দূর্গা মূর্তি। মনিরামপুর কালিবাড়ি মন্দিরে কালি মূর্তি। এক একটি মূর্তি গড়াতে তার খরচ হয় ২শ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর বিক্রি হয় এক হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
গত দূর্গা ও কালী পূজার মৌসুমে তিনি ৬টি দূর্গা প্রতীমা ও ১৮টি কালী প্রতিমা গড়ে ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সম্প্রতি স্বরস্বতী পূজায় শতাধিক মূর্তি গড়িয়েছেন। যার সব গুলো বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী বাজারে তিনি পিতা মাতা প্রতীমা ভান্ডার নামে একটি মূর্তি গড়ার কারখানা গড়ে তুলেছেন। এখানে তার তিনজন কর্মী রয়েছে। সাক্ষাতকারে বিপ্লব বিশ^াস বলেন, তিনি মূর্তি গড়িয়ে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। স্ত্রী. শিশু পুত্র ও পিতা মাতা নিয়ে এখন তার সুখে দিন কাটে।