পাড়া-মহল্লায় ভিড় বাড়ছে
অপরাজেয়বাংলা ডেক্স: দেশে কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতা দেখা গেলেও রাজধানীর পাড়া-মহল্লা ছিল জনমুখর। নেই মুখে মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধির বালাই। কঠোর লকডাউনের খুব একটা রেশ নেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লাগুলোতে। মূল সড়কে পুলিশ-সেনাবাহিনীর তৎপরতা দেখা গেলেও অলিগলিতে অন্য সময়ের মতোই জনসমাগম দেখা গেছে। পাড়ার চায়ের দোকান কিংবা গলির হোটেলে চলছে আড্ডা। সরজমিন রাজধানীর কলাবাগান, গ্রিন রোড, বাংলামোটর, তেজগাঁও, কাঁঠালবাগানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। বাংলামোটরের বিপরীতে কাঁঠালবাগানের গলিতে মায়ের দোয়া হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে পান খেতে খেতে কথা বলছিলেন খালেক হোসেন। পেশায় ভ্যানচালক।
মুখে মাস্ক নেই। তার পাশেই বসে চা পান করছেন ২০ বছর বয়সী মিথুন এবং তার বন্ধুরা। মিথুন জানায়, পেছনের ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় একঘেয়েমি চলে এসেছে। তাই আশপাশের মেসে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। পাশ থেকে ভ্যানচালক খালেক বলেন, কতক্ষণ ঘরে বসে থাকা যায়। পুলিশ আসে কিনা জানতে চাইলে হেসে দিয়ে বলেন, ওই যে পেছনের গলি দেখছেন পুলিশ আসলে দৌড়ে ভেতরে চলে যাই। পুলিশ চলে গেলে আবার এখানে আসি। এখন পর্যন্ত দুই থেকে তিনবার পুলিশ এসেছিল। মানুষ কতক্ষণ ঘরবন্দি থাকতে পারে বলে প্রশ্ন ছুড়ে দেন খালেক। কলাবাগানের লাজফার্মা গলির ভেতরে ছোট্ট একটি চায়ের দোকানে চা বানাতে ব্যস্ত কিরণ শেখ। দোকানে দাঁড়িয়ে চা-ধূমপান করছেন পাঁচ থেকে সাতজন মাঝ বয়সী যুবক। কাছে এগিয়ে গেলে বলেন, চা খাবেন মামা? কঠোর লকডাউনে চায়ের দোকান খোলা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকজন আসে দেখেই তো দোকান খুলতে হয়। তাছাড়া দোকানে বসে কেউ চা খায় না। চা বানিয়ে দিলে সকলে হাতে হাতে নিয়ে যায়। আমাদের তো বেঁচে থাকতে হবে!
তেঁজতুড়িবাজার মসজিদের বিপরীতে কাঁচাবাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। দোকানগুলোর অর্ধেক সাটারখুলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করতে দেখা যায়। যাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। কথা হয় একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তারা জানান, একটু পরপর এসে পুলিশ টহল দিচ্ছে। অনেকটা চুরি করে জিনিসপত্র বিক্রি করতে হচ্ছে। তাছাড়া পুরোপুরি লকডাউন মানাতে হলে সবার আগে তাদেরকে ক্ষতিপূরণের আওতায় আনতে হবে। না হলে পরিবারের সদস্যদের খাওয়া-পরা, বাসা ভাড়া কোথা থেকে আসবে? এমনটিই জানান তারা।
সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে হোটেল রেস্তরাঁয় বসে খাবার খাওয়া বারণ থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। খামারবাড়ি এলাকার তল্লাবাগের একটি রেস্টুরেন্টে বসেই খাবার খাচ্ছিলেন বাবু মিয়া। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসায় রান্নার লোক নেই। বাসায় খাবার নিয়ে খাওয়া ঝামেলা। তাই হোটেলেই খেয়ে যাচ্ছি। এত সমস্যা থাকলে হোটেল খোলা রাখছে কেন। বন্ধ করে দিলেই পারে এমনটাই বলেন বাবু মিয়া। অথচ কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধে বলা আছে সকাল আট থেকে রাত আটটা পর্যন্ত হোটেলগুলো কেবল পার্সেল দিতে পারবে। এটা মানতে নারাজ বাবু মিয়ার মতো আরও অনেকেই। পান্থপথের একটি ফাস্টফুডের দোকানির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এটা ফাস্টফুডের দোকান হলেও এখন অন্য খাবার পার্সেল দিয়ে থাকি। পাশাপাশি টুকিটাকি ফাস্টফুড বিক্রি করি। আগে শিক্ষার্থীরা দোসা, সোলা ভাটোরা খেতে আসতেন। এখন তাও বিক্রি হয় না। ফার্মগেটের বেসরকারি এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ফুটপাথে চা বিক্রি করতেন শাহ আলম মিয়া। দোকান বন্ধ থাকায় এখন ব্যাগের ভেতরে চা-সিগারেট-পান, বিস্কুট-রুটি এবং ডাব বিক্রি করেন। কথা বলতে গেলে একপর্যায়ে রেগে গিয়ে শাহ আলম বলেন, কীভাবে খাবো আমরা সেই খবর রাখেন। এতই যদি লকডাউন মানাবেন তাহলে আগে আমাদের খাবার দিন। চাল-ডাল দিন। বাসা ভাড়ার টাকা এসব কোথা থেকে আসবে। পাশে থাকা আরেক পান বিক্রেতা ইউসুফ আলীর মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক কেন পরেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছি। তাই মাস্ক পরি না। টিকা নিলে মাস্ক পরতে হয় না।
বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে যে করেই হোক মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে না পারলে শাটডাউন কিংবা কঠোর লকডাউন কোনো কিছুই কাজে আসবে না বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, যানবাহন বন্ধ রেখে কঠোর লকডাউনের কথা মুখে বলা হলেও সেটা সফল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরানো যাবে। একই সঙ্গে তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ মানুষের বাসায় তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি পৌঁছে দিতে হবে। তা না হলে লকডাউন কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে। সফল হবে না।
র্যাবের পরিচালক (ডিরেক্টর অ্যান্ড মিডিয়া উইং) কমান্ডার খন্দকার আল মইন বলেন, ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব শহরের পাড়া-মহল্লায় জনসমাগম ঠেকাতে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে। জনসমাগম ঠেকাতে গুচ্ছাকারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যারা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কঠোর লকডাউন চলাকালীন বাসার বাইরে বের হচ্ছেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। সূত্র,মানবজমিন