
নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইলের কালিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট
মোসা.আফরিন জাহান পরিচারিত ভ্রাম্যমান আদালত ঢাকা সাবরেজিষ্ট্রী অফিস
থেকে খোয়া যাওয়া দলিলের বালামবইসহ বিপুল পরিমান জাল দলিল তৈরীর
সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেছে। কালিয়া পৌরসভার মির্জাপুর গ্রামের কাশেম
সরদারের বাড়ীসহ অপর একটি বাড়িতে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এ গুলো উদ্ধার
করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারী) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানের
ঘটনায় বৃহস্পতিবার (০২ ফেব্রুয়ারী) কালিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযুক্ত কাশেম সরদার মির্জাপুর গ্রামের মৃত কওছার সরদারের ছেলে। অভিযানে
খবর আগেই জানতে পেরে কাশেম তার পরিবারসহ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
উপজেলা ভূমি অফিস ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, কাশেম সরদার জাল দলিল
প্রস্তুত চক্রের বাংলাদেশের অন্যতম সদস্য। সে দীর্ঘদিন যাবৎ অসৎ
উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন সহকারী কমিশনার(ভূমি),সেটেলমেন্ট,সাবরেজিষ্ট্রি
অফিসের বালাম বইসহ অন্যান্য অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও নথি চুরি করে
আসছে। এছাড়া পুরাতন ষ্ট্যাম্প ও জমির দলিল প্রস্তুত কাজে ব্যবহৃত
আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ব্যবহার করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জাল দলিলসহ
বিভিন্ন অফিসিয়াল কাগজপত্র তৈরী করে ব্যবসা করে আসছে।
কালিয়া পৌরসভার গোবিন্দ নগর গ্রামের মৃত উত্তম বিশ^াসের ছেলে প্রফুল্ল
বিশ্বাস ওরফে ফুরুতের ১ একর ৮৮ শতক জমির প্রতারণার মাধ্যমে কাসেম তার
প্রতিবেশীর যোগসাজসে দলিল তৈরী করে নিলে ঘটনাটি জানাজানি হয়। তারই সুত্র
ধরে ৩১ জানুয়ারী বিকাল ৪ টার দিকে নির্বাহী ম্যাজ্যিষ্ট্রেট মোসা.আফরিন
জাহান প্রথমে কাসেমের বাড়িতে ও পরে পৌরসভার গোবিন্দনগর গ্রামের
প্রফুল্লের বাড়িতে অভিযান চালান।
সেখানে কাশেমের রাখা বেআইনিভাবে সংরক্ষিত সরকারি অতিগুরুত্বপূর্ণ ১৯৭৪ ও
১৯৭৫ সালের ঢাকার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের একটি বালাম বই নং-৫১২+৫, জমি
কেনা বেচার ১৭টি মুল দলিল যার ৫টি ভারতীয় ষ্ট্যাম্পে, ৪টি বাংলাদেশী
ষ্ট্যাম্পে ও পাকিস্তানি ষ্ট্যাম্পে তৈরী ৮টি দলিল উদ্ধার করে। এছাড়া
যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর ও সিল সম্বলিত ভারতীয়
ষ্ট্যাম্পে ০২টি রেজিষ্ট্রি ডকুমেন্ট, ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন মূল্যের
বাংলাদেশী ষ্ট্যাম্প, পাকিস্তানি ও ভারতীয় ষ্ট্যাম্প, পাকিস্তানি
ষ্ট্যাম্পে লিখিত বয়নামা- ৫টি,সার্টিফাইড দলিল ১০টি, কালিয়া উপজেলা ভূমি
অফিসের সেল সার্টিফিকেটের মূল নথি-১১টি, মুক্তিযোদ্ধা প্রতিমন্ত্রী ও
সচিবের স্বাক্ষর সাময়িক মুক্তিযোদ্ধা সনদ-১টি, ব্রিটিশ, ভারতীয় ও
বাংলাদেশের অসংখ্য কোর্ট ফি, বিভিন্ন জমির খতিয়ান, ৭টি পাকিস্তানি বাইকেল
এবং দাখিলাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট জব্দ করা হয়।
কালিয়া থানার ওসি শেখ তাসমীম আলম বলেন,মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
কালিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোসা.আফরিন জাহান
বলেন, নড়াইল জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশনা মোতাবেক গোপন সংবাদের
ভিত্তিতে উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া
১৯৭৪/৭৫ সালের বালাম বই,বাংলাদেশী, ভারতীয় ও পাকিস্তানি বিভিন্ন মূল্যের
ষ্ট্যাম্প,কোর্ট ফি উদ্ধার করি। এ সময় অপরাধী পালিয়ে যায়। এ ব্যপারে
নিয়মিত মামলা রুজুর জন্য কালিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করা
হয়েছে।