Type to search

টানা বর্ষণে ভবদহের ৫৩ গ্রাম তালিয়ে গেছে

অভয়নগর

টানা বর্ষণে ভবদহের ৫৩ গ্রাম তালিয়ে গেছে

দাফন করার জায়গা নেই

কামরুল ইসলাম: গত রোব বারের (১৯/৯/২১) টানা বর্ষণে ভবদহ অঞ্চলের ৫৩ গ্রাম তলিয়ে গেছে। বাড়ির উঠানে হাটু জল থেকে কোমর পর্যন্ত জল উঠেছে। অনেকের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে জল। রান্না ও পয়োঃ নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। মানবেতর জীবন যাপন করেছে ওই সব গ্রামের জনগণ।অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জল উঠায় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে।

এলাকার কবরস্থান ও শ্মশানের চিতা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দাফন করার জন্য বিপাকে পড়েছে এলাকাবাসী।
এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার কিছু অংশ এবং মনিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাঠি ও কুলটিয়া ইউনিয়নের ৫৩টি গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ওইসব গ্রামের বাড়ির ওঠানে হাটু থেকে কোমর পর্যন্ত জল। গোহাল ঘরে জলে ঢুকে পড়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে অনেকে। রান্না ঘরে জল ঢোকায় রান্নার সংকটে পড়ে অনেকে শুকনো খাবার খাচ্ছেন। জলাবদ্ধ এলাকায়র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ দান বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া এলাকার মাছের ঘের ও পুকুর ডুবে যাওয়ায় মাছ চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।


জলাবদ্ধ গ্রাম গুলো হলো- অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ধোপাদী,সরখোলা,লক্ষীপুর ও আমডাঙ্গা গ্রাম। প্রেমবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান জানান, ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। গ্রাম গুলো হলো- জিয়াডাঙ্গা, মাগুরা, বনগ্রাম, প্রেমবাগ, চেঙ্গুটিয়া, চাপাতলা,উড়োতলা ও বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম। সুন্দলী ইউনিয়নের ১৩টি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়েছে। সেগুলো হলো, সুন্দলী, ডহর মশিয়াহাটি,ডাঙ্গামশিয়াহাটী,ভাটবিলা, সড়াডাঙ্গা,ফুলেরগাতী, হরিসপুর,গোবিন্দপুর, ধোপাপাড়া, আড়পাড়া, রাজাপুর, রামসরা ও ধোপাদী গ্রাম, চলিশিয়া ইউনিয়নের ডুমুরতলা, বেদভিটা, বলারাবাদ, আন্দা, চলিশিয়া, কোটা, দিঘলিয়া, ভাটাডাঙ্গা গ্রাম। এছাড়া মণিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখরচন্দ্র রায় জানান, তার ইউনিয়নের ১১টি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে, সেগুলো হলো, বাজেকুল্টে,হাটগাছা,সুজতপুর,লখাইডাঙ্গা,কুলটিয়া, মহিষদিয়া,আলীপুর,পুড়াডাঙ্গা,পদ্মনাথপুর,আসীংগাড়ী, পাড়িয়ালী ও ডাঙ্গা মহিষদিয়া গ্রাম। হরিদাসকাঠি ইউনিয়নের বিপদ ভঞ্জন মন্ডল জানান, তার ইউনিয়নের আটটি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়েছে সেগুলো হলো- নেবুগাতী, কুচলিয়া, পাচবাড়িয়া,পাচকাঠিয়া, ফুলবাড়িয়া,কুমোরসিঙ্গা,হরিদাসকাঠি ও বাহিরডাঙ্গা গ্রাম।


জলাবদ্ধ এলাকার গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে হাটু থেকে কোমর পর্যন্ত জল নিয়ে চলছে জীবন জীবিকা, হটাৎ করে জল ঢুকে পড়ায় অনেকে রান্না বান্নার সংকটে পড়েছেন। মনিরামপুর উপজেলার সুজতপুর গ্রামের গৃহবধূ শেফালী হালদার বলেন, ‘গত রোববারের টানা বৃষ্টিতে এ বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এক দিনের বৃষ্টির কারনে তিন দিন যাবৎ জল বৃদ্ধি পায়। তার বাড়িতে হাটু জল জমেছে। আরো জল বাড়বে। এ অবস্থায় তিনি চুলা জ¦ালাতে পারছেনা। শুকনো খাবার খেয়ে তাদের দিন চলছে। তিনি আরো বলেন, প্রায় ১০ বছর যাবত বর্ষাকাল আসলেই তার বাড়িতে জল জমে। তিনি সরকারের কাছে কোন ত্রান চান না। ভবদহের স্থায়ী সমাধান চান।’


মশিয়াহাটি ডিগ্রি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী পূজা রায় ও পূজা মন্ডল জানান, ভবদহ জলাবদ্ধতার করনে দীর্ঘ দিন ধরে তাদের এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হয়ে আসছে। এতে তারা পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে পারে না। এ বছর করোনা পরিস্থিতির পর বিদ্যালয় চালু হলেও জলাবদ্ধতার করনে অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেতে পারছে না। ফলে পাঠ দানে ব্যহত হচ্ছে। তাদের দাবি, সরকার যেন এ সমস্যার সমাধান করে দেন। তারা ভাল করে লেখা পড়া করে উন্নত জীবন গড়তে চায়।
অভয়নগর উপজেলার কোটা গ্রামের মিরন তরফদার বলেন.‘ তার বাড়ির উঠানে হাটু পানি। পুকুর ভেসে মাছ চলেগেছে। জলাবদ্ধতার কারনে বিলে তিন বছর ফসল হয় না। তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন।’
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, ‘পলি জমে শ্রী হরি নদী ভরাট হয়ে গেছে।

পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। যে কারনে এ জলাবদ্ধাতা। এলাকার কবরস্থান ও শ্মশান তলিয়ে যাওয়ায়। কাফন কাফন করা নিয়ে সংকটে পড়েছে এলাকাবাসী। তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ¯øুইসগেট বন্ধ করে পাম্প দিয়ে পানি সেচে জনগনকে মিথ্যা আশ^াস দিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, পাম্প দিয়ে পানি সেচে জলাবদ্ধা দূর হবে না। জোয়ারাধারের মাধ্যমে এলাকার নদ নদীর নব্যতা ফেরানো সম্ভাব। তিনি বলেন,দ্রæত জোয়ারাধার না করলে এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হবে।’
যশোর জেলা প্রশাসক মো: তমিজুল ইসলাম খাঁন বলেন,“ ভবদহ এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য সেচপাম্প বসানো আছে। সেগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। আশাকরা যায় পানি দ্রæত নিষ্কাশন হয়ে যাবে। তাছাড়া ভবদহের স্থায়ী সমাধানে জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এবছর বৃষ্টি একটু বেশি হয়েছে তাই পানি বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, ভবদহ এলাকার এ সমস্যা দ্রæত সমাধানের জন্য তিনি সরকারের উপরি মহলকে জানাবেন ” ্