Type to search

জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’র ঝিকরগাছার তিন জয়িতা

অভয়নগর

জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’র ঝিকরগাছার তিন জয়িতা

আফজাল হোসেন চাঁদ :

ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ক্রমে ভিত্তিক জয়িতা বাছাই কাজটি পরিচালিত হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ততা নিয়ে একজন সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নাম জয়িতা। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক জয়িতা। কেবল নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। সরকারের মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর এই জয়িতাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগটির নাম ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ-২০২১’। জয়িতাদের পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পাঁচজন জয়িতাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্মাননা প্রদান করার কথা থাকলেও ঝিকরগাছায় পাঁচটি ক্যাটাগরিতে জীবন বৃত্তান্ত সহ নামের তালিকা চাওয়া হলে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে ৩টি, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে ০১টি, সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে ০২টি, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যে নারী ক্যাটাগরিতে ০২টি ও সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছেন যে নারী ক্যাটাগরিতে ০২টি সর্বমোট ১০টি আবেদন জমা পরে। প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্তগুলো পর্যালোচনা করে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ এর ঝিকরগাছায় তিন ক্যাটাগরিতে জয়িতা নির্বাচন করেন ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটি। যার মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে বারবাকপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে নাসরিন সুলতানা। তিনি কৃষিকাজে হতাশ ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গা চাষীদের পাশে থেকে অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও মেধাশক্তির গুনে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যুগিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও ব্যবহারের বিনিময়ে অর্জিত সাফল্য সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সদা তৎপর ভার্মিকম্পোস উৎপাদনে সফল। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যে নারী ক্যাটাগরিতে পদ্মপুকুর গ্রামের মোঃ রোকমান হোসেনের স্ত্রী সেলিনা বেগম। তিনি একজন কৃষকের স্ত্রী। বিবাহের ৭মাস পরে জানতে পারেন যে তার স্বামী প্রথমে একটি বিবাহ করেছিলেন। বিবাহের ৪বছর পর শুরু হয় তার জীবনে স্বামীর অন্যায়, নির্যাতন ও অত্যাচার। অনেক কষ্টের পরেও তিনি স্বামীর ভিটা ছাড়নেনি। ১টি ছেলে ও ২টি মেয়েকে মানুষ করার জন্য অন্যের বাসায় দিন রাত কাজ করেছে। এমনকি প্রেসের কাগজ ছাপানোর কাজ করে বাচ্চাদের জীবিকা নির্বাহ করেছেন। একই গ্রামে তার স্বামী আবারো বিয়ে করেন। বিয়ের পর তার জীবনে নেমে আসো অন্ধকার কালো ছায়া। যা অতিক্রম করা তার পক্ষে বড়ই কষ্টকর হয়ে পড়ে। তার কষ্ট দেখে আদ্ দ্বীন ফাউন্ডেশন এফএইচভি হিসেবে কাজ নেন। যে কাজটা করে প্রতি মাসের বেতন দিতে হতো তার স্বামীর হাতে। পরে সংসারে অশান্তির কারণে ছেড়ে দিতে হয় এবং তিনি ১৮ বছর ধরে ধাত্রীর কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি তার ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উলাসিস সৃজনী সংঘ হতে সদস্য হন। এখান থেকে অনেক শিক্ষা সফরে গিয়ে অনেক ধরনের শিক্ষা অর্জন করে বর্তমানে তার নিজের জীবনের নতুন গল্প শুরু করে। বর্তমানে একটি চারি থেকে ১২০ টি চারি তে জৈব সারের কাজ করছে এবং প্রতি মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করছেন বর্তমানে তিনি উক্ত সারের ডিলার ও নারী ক্ষমতার (ডাব্লু ই) প্রজেক্টরের সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে রাজাপুর গ্রামের ইব্রাহীম খলিলের স্ত্রী রাশিদ বেগম নির্বাচিত হন। তার ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেখার কিন্তু পিতার অভাবে সংসারে লেখাপড়া করার সুযোগ হয় না ১৪ বছর বয়সে ই তাকে বিবাহ দিয়ে দেন। বিবাহের পর স্বামীর বাড়িতে এসেই এসএসসি পরীক্ষা দেন। এরপর তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ের সন্তানের জন্ম হয়। ২০০৫ সালে স্বামী অসুস্থ হয়ে চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার টাকা ও ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ কিভাবে যোগাবে সেটা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তখন তিনি ছয়শত টাকা মাসিক বেতনে ব্র্যাক স্কুলে শিক্ষকতা, টিউশনি, ব্র্যাকের আইন সহায়তা কর্মসূচির সেবিকা ও পুরুষের মতো মাঠে গিয়ে ক্ষেতের কাজ করেছেন। একই সালে পানিসারা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে তার স্বামী মারা যায়। বর্তমানে তার মেয়ে এমএ পাস করেছে এবং ছেলে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে বিবিএ পঞ্চম বর্ষের লেখাপড়া করছেন। ঝিকরগাছা উপজেলার মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অনিতা মল্লিক বলেন, জয়িতারা বাংলাদেশের বাতিঘর। জয়িতাদের দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রাণিত হলে ঘরে ঘরে জয়িতা সৃষ্টি হবে। আর তা হলেই বাংলাদেশ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।