Type to search

চৌগাছায় রাজাকারের পিতা পিস কমিটির সদস্যের নামে বাজার রাখতে চলছে নানা নাটক!

যশোর

চৌগাছায় রাজাকারের পিতা পিস কমিটির সদস্যের নামে বাজার রাখতে চলছে নানা নাটক!

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের চৌগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের করা তালিকার ৮ নম্বর রাজাকার ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অস্ত্রধারি রাজাকার মুজাহিদ এবং তার পিতা পিস কমিটির সদস্য আহমদ আলীর নামে বাজার ও সড়কের নাম বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেয়ায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে যখন তোলপাড় চলছে ঠিক তখনই ওই পরিবারের অপকর্ম আড়াল করতে সর্বোচ্চ কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে স্থানীয় সুবিধাবাদি চিহ্নিত কয়েক ব্যক্তি।

হঠাৎ করেই রাজাকার এই পরিবারটির উদ্যোগে ২৫ আগস্ট কড়ইতলা বাজারে (প্রস্তাবিত কড়ইতলা মুক্তিযোদ্ধা নগর) জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসের অনুষ্ঠান করেছে। সেখানে উপজেলা বা ইউনিয়নের কোন আওয়ামী লীগ নেতা যোগ না দিলেও তারা মাইক বাজিয়ে- ব্যানার টাঙিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আবার সেই ব্যানারের রশি খুলে ফেলে পরিকল্পিতভাবে কুখ্যাত রাজাকার মুজাহিদ ও স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারটির বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ করে প্রশাসন  ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করায় প্রতিবাদকারীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে “চৌগাছায় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে।

তবে প্রকাশিত সংবাদটি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব। তিনি বলেন ঘটনার দিন আমি পুলিশের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে জেলা সদরে ছিলাম। থানার যে কর্মকর্তা ঘটনা তদন্ত করতে গিয়েছিলেন (এস আই মেহেদি হাসান) তিনি আমাকে বলেছেন যে এমন কোন ঘটনা কড়ইতলা বাজারে ঘটেনি। সেখানে ঝুলানো ২১ আগষ্টের একটি ব্যানার (যেটি চিকন প্লাস্টিকের রাশি দিয়ে বাধা ছিল) বাতাসে খুলে গিয়ে থাকতে পারে। পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে তিনি আবারো সেটি ঝুলিয়ে দিয়ে আসেন। সেখানে কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি।

কথা হয় ঘটনার তদন্তে যাওয়া এসআই মেহেদির সাথে। তিনি বলেন মোবাইল ফোনে একটি অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে (কড়ইতলা বাজার) গিয়েছিলাম। সেখানে দেখি ২১ আগষ্টের একটি ব্যানার যা নসিমন দড়ি দিয়ে বাধা ছিল। সেটি হয়ত বাতাসে ব্যানারের যেখানে বাধা থাকে সেখান থেকে খুলে গেছে। বাজারে উপস্থিত সকলেই আমাকে জানায় কেউ ব্যানারটি ছেড়েনি। তখন যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছিল তাকে আমি বলি সকাল দশটার একটি ঘটনা শুধু আপনিই দেখলেন আর কেউ দেখলোনা? পরে ব্যবসায়ীদের নিয়ে ব্যানারটি আবারো টাঙিয়ে দিয়ে আসি। অভিযোগকারীর নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি একটি কাজে যশোরে শহরে আছি। থানায় ফিরে বলতে পারবো।

উপজেলার এই চিহ্নিত রাজাকার ও তার পরিবারের ব্যাপারে মুখ খুলেছেন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান রাজাকার মুজাহিদ আলী ও স্বাধীনতা বিরোধী এই পরিবারটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তিনি বলেন “কেনো এবং কি কারনে হঠাৎ করে রাজাকার পরিবারের এই জাতীয় শোক দিবস পালনের আয়োজন? যে পরিবারটি ৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে অদ্যবধি কোনো রকমেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ভুল করেও নিজেদের জড়ায়নি, উল্টো মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির পক্ষে যাদের অবস্থান। তারা ২০২০ সালে এসে কেন ঘটা করে ১৫ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করছে? ১৮৪০ নম্বর গেজেটধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান ৭১’র স্মৃতিচারণ করে বলেন, এম আহমদ আলী ও তার পুরো পরিবার ছিল স্বাধীনতা বিরোধী মুসলিম লীগ পরিবার। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তার ছেলে মুজাহিদ আলী রাজাকারের প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী ভুমিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে ঝাপিয়ে পড়েন। তার অন্যান্য ছেলেরাও বাপের দেখানো পথেই ছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে রাজাকার মুজাহিদের ভাই শওকত আলী এবং মুজাহিদ আমার

বাড়িতে এসেছিল। শওকত আমাকে তখন বলে যুদ্ধের সময় মুজাহিদ ভুল করেছে। ওকে একটু দেখে রাখবেন। এসএম হাবিব বলেন এখন শুনছি এই শওকত নাকি যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়েছিল এবং স্বাধীনতার পক্ষে ছিল বলে কে বা কারা মনগড়া লিখা লিখেছে।

আহমদ আলী বা তার পরিবারের কেউ যদি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতো তাহলে আমার ৫১ বছরের রাজনীতির জীবনে আমি জানতাম না? আর তারা যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিই হবে তাহলে মুজাহিদ কেনো রাজাকার ছিল? রাজাকার মুজাহিদদের ১৫ আগষ্ট পালনে আপনি দাওয়াত পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে এসএম হাবিব বলেন “না”। দাওয়াত পেলেও যেতাম না। এসএম হাবিব বলেন বেশি নোংরামি করা ভাল না। ওই স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার যা শুরু করেছে তার পরিনতি ভাল হবেনা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদি মাসুদ চৌধূরী বললেন, আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জন্মগ্রহন করেছি। তবে আমার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে শুনেছি মুজাহিদ খুলনায় রাজাকারের প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র রাজাকার ছিলেন। তিনি বলেন একটি বাজার বা সড়ক কিংবা অন্য যে কিছুই হোক। সেটির নাম করন করতে গেলে প্রথমেই ইউনিয়ন পরিষদ ও পরে উপজেলা থেকে রেজুলেশন করা লাগে। তারপর সেটি জেলা পরিষদ হয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এসব কিছু না করেই কিভাবে আহমদ আলীর নামে নামকরণ হয়?

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগের আহ্বায়ক দেবাশীষ মিশ্র জয় বলেন মুজাহিদ সম্বন্ধে উপজেলার কে জানেনা? কিভাবে একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অস্ত্রধারী রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীর পিতার নামে একটি বাজারের নামকরন হয়? তিনি বলেন কে বা কারা তাদের মদদ দিচ্ছে তাদেরকে খুঁজে বের করে জনসন্মুখে মদদদাতাদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।

উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক শরিফুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে কোনো আপোষ নেই।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান রাজু বলেন আগষ্ট মাস এলেই এতো ষড়যন্ত্র হয় কেনো? একজন চিহ্নিত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার হঠাৎ করে কেন শোক জাতীয় শোক দিবস পালন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো? সেটা আমার বুঝে আসেনা। উপজেলা ছাত্রলীগ স্পষ্টভাবে এই রাজাকার-স্বাধীনতা বিরোধীর নামে বাজার ও রাস্তার নামকরনের বিরোধীতা করছে। দ্রুতই চিহ্নিত রাজাকারের বাবা ও পিস কমিটির নেতার নামে ওই বাজারের ‘আহমদ নগর’ সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলতে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

যাদেরকে সন্ত্রাসী বানিয়ে বুধবার কয়েকটি সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে কথা হয় সেই কড়ইতলা বাজার কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ কর্মী ফারুক হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমরা চিহ্নিত রাজাকারের পিতা ও পিস কমিটির নেতার নামে সাইনবোর্ড দেয়ার বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ন আন্দোলন করছি এবং সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তা চালিয়ে যাবো। তাতে যে বাধাই আসুক না কেনো পিছিয়ে যেতে রাজি নই। ফারুক বলেন আমরা মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেয়া শেষে কড়ইতলা মুক্তিযোদ্ধা নগর করার দাবি সম্বলিত ব্যানারটি বাজারে টাঙিয়ে রাখি। রাজাকার পরিবারটির লোকজন রাতের আধারে সেটি চুরি করে নিয়ে গেছে। আমরা আবারো ব্যানার বানিয়ে সেখানে টাঙিয়ে রেখেছি। মুজাহিদের ভাগ্নে কবিরুল ইসলাম মোবাইলে আমাকে হুমকি দিয়েছে। আমি যেন এই আন্দোলনে নেতৃত্ব না দিই। ওরা আহমদ আলীকে এলাকার বড় ব্যক্তি বলে কয়েকটি পত্রিকায় নিউজ করেছে। দুদিন আগে একটি পত্রিকায় আমহদ নগর কেন্দ্র করে চলছে উন্নয়নযজ্ঞ শিরোনামে নিউজ করিয়েছে। তিনি জানান রাজাকার মুজাহিদের ভাতিজা হাসান মাহমুদ ও ভাগ্নে কবিরুল সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। হাসান ও কবিরুল কয়েকজন সাংবাদিকদের দিয়ে এসব নিউজ করিয়েছে বলেও তার দাবি। তিনি এও বলেন তারা পরামর্শ করে আমাদের বিপদে ফেলতে এসব নাটক করছে। আমরা এই বাজারে ব্যবসা করি। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড তারাই করছে। ফারুককে সমর্থন করে বাজারে উপস্থিত একজন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি, কলেজ ও স্কুল শিক্ষকসহ সকলেই রাজাকার মুজাহিদ ও তার বাবার নামে বাজারসহ রাস্তার নামকরনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।