Type to search

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় অধিকাংশ ইট ভাটাই পুড়ানো হচ্ছে ইটঃ নির্বিকার প্রশাসন

জাতীয়

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় অধিকাংশ ইট ভাটাই পুড়ানো হচ্ছে ইটঃ নির্বিকার প্রশাসন

চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু, চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা  উপজেলার অধিকাংশ ইটের ভাটাই ইট পুড়ানো হচ্ছে। তবুও থেমে নেই ইট তৈরির কার্যক্রম। যুগের পর যুগ এ সকল অবৈধ ইটের ভাটার জন্য ধ্বংস হচ্ছে কৃষি, বনায়ন-পরিবেশসহ সরকারি ব্যয়ে নির্মিত কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন সড়ক। তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের তেমন একটা মাথাব্যথার কারণ না হওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে নিরব দর্শকের ভূমিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্তাবাবু ও স্থানীয় প্রশাসন।
তথ্য অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরসহ চার উপজেলার মোট ইটভাটার সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি দামুড়হুদা উপজেলায়। এ উপজেলার সংখ্যা প্রায় ২৭ টি মতো ইটের ভাটা রয়েছেন। এর মধ্যে সিংহভাগ ইটের ভাটায় অবৈধ। তবে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ)আইন ২০১৩ অনুযায়ী প্রায় সকল ইটের ভাটায় অবৈধ। তবুও থেমে নেই এসকল অবৈধ ইটের ভাটার কার্যক্রম।
দামুড়হুদা উপজেলার গ্রামীণ, আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি জমির মাঝখানে এসকল ইটের ভাটা নির্মাণ করা হয়েছেন। ফলে এসকল ইট ভাটা নির্মাণের জন্য প্রতিনিয়ত চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষি জমি, বনায়ন ও পরিবেশে। পাশাপাশি সরকারের কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের নির্মিত গ্রামীণ ও আঞ্চলিক মহাসড়ক গুলো হচ্ছেন ধ্বংস।
সরেজমিনে উপজেলার একাধিক ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, এখানে ইট ভাটা প্রস্তুত ও স্থাপন আইনের সর্বোচ্চ উপেক্ষা করা হচ্ছে। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। তবুও উপজেলার সকল ইটের ভাটার কার্যক্রম চলমান রয়েছেন পুরোদমে। জেলার অবহেলিত এ উপজেলাটিতে যে সকল স্থানে ইটের ভাটা তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক, গ্রামীণ সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, মাদ্রাসা, বসতবাড়ি সহ কৃষি জমির মাঝখানে। এসকল অবৈধ ইটের ভাটাতে হরহামেশাই পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও ঔষধি বিভিন্ন গাছের কাঠ। উজাড় হচ্ছে ছোট-বড় বাগান। ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় একদিকে যেমন পরিবেশকে করছে দূষণ, ঠিক অন্যদিকে ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নেওয়ায় তিন ফসিল জমির উর্বরতা ধ্বংস হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর আইনের ব্যবহার ও প্রয়োগ না থাকায় উপজেলা সদর সহ উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে যত্রতত্র নির্মাণ করা হয়েছে এসকল ইট ভাটা। এক্ষেত্রে দামুড়হুদা উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইটের ভাটার সংখ্যা সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে। অবৈধ ভাবে নির্মিত এসকল ভাটার মালিকরা বনে যাচ্ছেন কোটিপতি, আর সীমাহীন দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে পড়ছেন কৃষকসহ সাধারণ জনগণ।
উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও সচেতন মহল বলছেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়াতে সকল বয়সীর পথচরী, স্কুল- কলেজ গামী ছাত্র-ছাত্রী সহ আবাসিক এলাকার জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ভাবে হুমকির মধ্যে পড়ছেন। সাথে সাথে ফলদ, ঔষধি বৃক্ষ, জীববৈচিত্র্য, প্রাণী ধ্বংস ও পরিবেশ দূষণে হুমকির মুখে পড়ছে। অথচ সরকারি বিধিমালা আইন অনুযায়ী ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন( নিয়ন্ত্রণ)-২০১৩ এ আবাসিক এলাকা, কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ইটের ভাটা স্থাপনের কথা না থাকলেও এ উপজেলাতে উল্লেখিত স্থানেই সম্পূর্ন আইন উপেক্ষা করেই ভাটা মালিকগণ তাদের ভাটা নির্মিত করে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি এসকল ভাটাতে অবাধে কাঠ পোড়ানোর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের পাতা ঝরে পড়ছেন। ভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় বিশেষ করে বয়স্ক সহ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। একই ভাবে ইট ভাটা প্রস্তুত আইনের সর্বোচ্চ উপেক্ষা করে ভাটা নির্মাণ করণে ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ফসলি জমির মাটি উত্তোলনে কৃষি জমির পরিমাণও দিনদিন কমতে শুরু করেছেন। গত রাতেও উপজেলার ছাতিয়ানতলা-কানাঈডাঙ্গা গ্রামের ব্যারাকপুর মাঠের কৃষি জমির মাটি ভেকু মেশিনের সাহায্যে প্রায় ৩০ ট্রাক্টর যোগে কানাঈডাঙ্গা গ্রামের বোস ব্রিকস সহ বিভিন্ন ইটের ভাটাতে বিক্রি করছেন ভূমিদস্যুরা।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ মহলকে গতকাল রাত ৯টা ৫১মিনিটে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বিরক্তবোধ করে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।