Type to search

কুরআন বুঝার উপায়

সাহিত্য

কুরআন বুঝার উপায়

মাওঃ মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম

মহাগ্রন্থ আল কুরআন মানব জাতির মুক্তির সনদ। পৃথিবীর মানুষ যদি শান্তি শৃংখলা ও নিরাপত্তা সহকারে বসবাস করতে চায় তাহলে তাদের কুরআন মেনে চলার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন “আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নিয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম” (আল-আরাফ-৯৬)। এছাড়া মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন “আলিফ-লাম-রা-হে মুহাম্মদ! এ একখানি কিতাব আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি যেন তুমি লোকদেরকে জমাট বাধা অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আস- তাদের রবের দেওয়া সুযোগ সুবিধার সাহায্যে সেই আল্লাহর পথে যিনি প্রবল পরাক্রান্ত ও নিজসত্তায় নিজেই প্রশংসিত (সুরা ইব্রাহিম-১)। আয়াতে জুলুমাত বলতে শিরক ও মন্দ কর্মেরঅন্ধকারসমূহএবং নুর বলে ঈমানের আলো বোঝানো হয়েছে। আয়াত থেকে জানা গেল মানবজাতিকে মন্দ কর্মের অন্ধকার থেকে বের করা এবং আলোর মধ্যে আনায়ন করার একমাত্র উপায় এবং মানব জাতিকে ইহকাল ও পরকালে ধ্বংসের কবল থেকে মুক্তি দেওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে কোরআন পাক। মানুষ যতইএর সঠিক অর্থ জেনে বুঝে তার নিকটবর্তী হবে ততই তাঁরা ইহকালে সুখ, শান্তি , নিরাপত্তা ও মনতুষ্টি লাভ করবে এবং পরকালেও কামিয়াবি অর্জন করবে।
কুরআন বুঝারউপায় গুলোনি¤œরূপ ;
প্রথমতঃ থেমে থেমে সুন্দরভাবে তেলওয়াত করাঃ-
মহান আল্লাহ বলেন “আপনি কুরআনকে তারতীল সহকারে পাঠকরুন” (সুরামুজজাম্মিল-৪)। আয়াতে তারতীল শব্দের অর্থ সহজ ও সঠিক ভাবে অক্ষর, শব্দ ও বাক্য উ”চারণকরা। আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, দ্রুত তেলওয়াত করবে না বরং সহজভাবে পড়া।
দ্বিতীয়তঃমাতৃভাষায় অর্থ বোঝাঃ-
মহান আল্লাহ বলেন “আমি একে আরবি ভাষায় কুরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার” (সুরাইউসুফ- ২)। কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল আরব দেশে এবং তাদের মাতৃভাষা ছিল আরবি। ফলে তাদের পক্ষে সহজে কুরআনবুঝা সম্ভব হয়েছিল। ফলশ্রুতিতেআমাদের কর্তব্য মাতৃভাষাবাংলায়কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যাজানাবুঝার চেষ্টাকরা।
তৃতীয়তঃ-মাতৃভাষায়কুরআনেরতাফসীরপড়াঃ-

মহানআল্লাহ বলেন “হে জ্ঞানি সম্প্রদায় তোমরা গবেষণা কর (সুরা- হাশর -২)তাফসীর হলো আলেম ওলামাদের গবেষনার ফসল। তাঁরাপবিত্র কুরআনের প্রতিটা আয়াতসম্পর্কে রাসূল (স.) এর বক্তব্য ও আমলএবং সাহাবীআজমাইনদের বক্তব্য ও আমলতুলে ধরে ব্যাখ্যা করেছেন। পরিভাষায়এটাকে তাফসীর বলাহয়। তাফসীরপড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা কুরআনের যে কোন আয়াত নিয়ে আলোচনা করতে পারি।
 যেমন সুরা আনকাবুতের ৪৫নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন “তোমরা নামাজ কায়েম কর, নিশ্চয় নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ হতে বিরত রাখে”। আয়াতে নামাজের গুরুত্ব ও ফলাফল বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যায় কাজ করার সাথে সাথে নামাজ আদায় করতে থাকলে উক্ত নামাজের পরিণতি কি হবে আয়াতের তাফসীর পড়া ছাড়া জানা সম্ভব নয়। আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বলেন, রাসূল (স.) কে আয়াতের অর্থ জিঞ্জাসা করা হলে তিনি বলেন, যে ব্যক্তিকে তারনামাজঅশ্লীল ও গর্হিত কর্ম থেকে বিরতরাখেনা, তারনামাজকিছুনয়। হযরতআব্দুল্লাহইবনেমাসউদের রেওয়ায়েতেরাসূল (স.) বলেন, যে ব্যক্তি তারনামাজেরআনুগত্য করেনা, তারনামাজকিছুনয়। বলাবাহুল্য অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকাইনামাজেরআনুগত্য। হযরতইবনেআব্বাস (রা.) এ আয়াতেরতাফসীরেবলেন, যারনামাজতাকেসৎকর্ম সম্পাদনকরতেএবংঅসৎ কর্ম থেকে বেঁচে থাকতেউদ্বুদ্ধ নাকরে, তারনামাজতাকেআল্লাহ থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেয়। ( তাফসীরেমা’আরেফুলকুরআন ৬ষ্ট খন্ড ৭৭০ পৃষ্ঠাইসলামিকফাউন্ডেশনপ্রকাশিত)।

অতএব উপরোক্তপদ্ধতিগুলোঅবলম্বন করলেআমরাপবিত্রকুরআনসঠিক ও সুন্দরভাবেবুঝতেপারবইনশাআল্লাহ। মহানআল্লাহআমাদের পবিত্রকুরআনবুঝেসঠিকভাবেআমলকরেপরকালীনকামিয়াবীহাসিলকরারতাওফিক দানকরুন। আমিন।

মাওঃ মোঃআনোয়ারুলইসলাম
উপাধ্যক্ষ
গাজীপুররউফিয়াকামিলমাদরাসা
অভয়নগর, যশোর।