কবুল হজের অপর নাম হজে মাবরুর : সম্পাদন পদ্ধতি, গুরুত্ব ও ফজিলত -বিলাল হোসেন মাহিনী
আল্লাহ তায়ালার নিকট কবুল হজকে ইসলামি পরিভাষায় ‘হজে মাবরুর’ বলা হয় এবং মাবরুর হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তোবা জানি না ‘হজে মাবরুর’ কী? এবং হজের সাথে কেন এ শব্দটিকে জুড়ে দেয়া হলো। ইসলামের অন্য কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে তো মাবরুর শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে হজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের জন্য ‘মাবরুর’ শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, পবিত্র হজব্রত পালনকালীন ৪০-৪৫ দিনের ক্রমাগত বিররুন-এর অনুশীলনের কারণে হাজীদের চরিত্রে ‘বিররুন’ স্থায়ীভাবে বাসা বাঁধে। যখন একজন হাজী দেশে আসবেন তখন প্রতিবেশী ও সমাজ মাবরুর হাজী’র চরিত্রে বিররুন-এর প্রতিফলন দেখতে পাবেন। হজে যাওয়ার আগের মানুষের সাথে বর্তমান মানুষটির ভিন্নতা খুঁজে পাবেন সমাজের মানুষ। হজের পূর্বে যে মানুষটি মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করতেন, গালিগালাজ করতেন, নিজের স্বার্থ রক্ষায় মরিয়া উঠতেন, মানুষের অধিকারের ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন কিন্তু এখন তার একটিও এখন বিদ্যমান নেই। হজ পরবর্তী সময়ে মানুষের সাথে ভালো আচরণ করা, অপরের দুঃখে অন্তরাত্মা কেঁদে ওঠা, ঝগড়া এড়িয়ে চলা, উত্তম চারিত্রিক মাধুর্য দ্বারা মন্দ কথা বা কাজের জবাব দেয়া হজে মবরুরের নিদর্শন।
উপসংহার : পবিত্র হজের বিভিন্ন পরিভাষার মধ্যে ‘হজ্জে মাবরুর’ অন্যতম। এটাকে কবুল হজও বলা যায়। তবে হাদিসে ‘হজে মাবরুর’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় শব্দটির বিভিন্ন অর্থ বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বটে; কিন্তু সব কথার সার একটিই। তা হলো- হজে যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বেঁচে থেকে পাপমুক্ত হজ সম্পাদিত হওয়াকে ‘হজ্জে মাবরুর’ বলে।
হজকে হজে মাবরুরে রূপান্তর করার জন্য নিজেদের মাঝে অযথা কথাবার্তা না বলে পুরো সময়জুড়ে জিকির-আসগার ও ইবাদতে মশগুল থাকতে হবে। গীবত, পরনিন্দা ও বিভিন্ন উপায়ে অন্য মুসলমান ভাইকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সব প্রকার গোনাহ ও পাপকাজ বর্জন করতে হবে। হজ সংশ্লিট প্রতিটি স্থানের প্রতি যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়াও হজ আদায়কালীন সময়ে সৎ সঙ্গী গ্রহণ করা। সার্বিক ইবাদতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করা এবং হজ পরবর্তী জীবনকে হজ পূর্ববর্তি জীবনের থেকে উত্তমভাবে পরিচালিত করার প্রচেষ্টা করা। দ্বীন ইসলামের ওপর অটল ও অবিচল থাকার প্রতিজ্ঞা করা। হজ আদায়রত অবস্থায় তাকওয়া’র সাথে জীবন পরিচালন ও অপরের অধিকার আদায়ের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা জরুরি।
লেখক : পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, যশোর।
[email protected]
০১৭৩৫-১৭৬২৮৬