বিলাল হোসেন মাহিনী :
পৃথিবীর প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যু বরণ করবে। মৃত্যুর পর আবারও মানুষকে জীবিত করা হবে; হিসাবের জন্য। মহান আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে আমাদের কৃতকর্মের হিসাব নিবেন। হাজার হাজার বছর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। সেই কঠিন মুসিবতের সময় মুমিনগণের মধ্যে সাত শ্রেণির মানুষ আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া পাবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন পৃথিবী প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পর্যবসিত হবে। আর তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিন দলে; অতঃপর ডান দিকের দল; ডান দিকের দলটি কত সৌভাগ্যবান! আর বাম দিকের দলটি কত হতভাগা!’ (সুরা-ওয়াকিআহ, আয়াত: ১-১০)
আরবি কিয়ামত শব্দের অর্থ দাঁড়ানো। এই দিন যেহেতু বিচারের পূর্ব পর্যন্ত সবাইকে দাঁড়িয়েই থাকতে হবে, তাই এই দিনের নাম কিয়ামত। এই দিন হবে অত্যন্ত দীর্ঘ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেই দিনের পরিমাণ তোমাদের গণনায় সহ¯্র বৎসর।’ (সুরা-সাজদাহ, আয়াত: ৫) কুরআন মাজিদে আরও রয়েছে, ‘ওই দিনের ব্যাপ্তি পঞ্চাশ হাজার বছর।’ (সুরা-মাআরিজ, আয়াত: ৪) হাদিসে এসেছে, সেদিন সূর্য মাথার এক বিঘত ওপরে থাকবে, পায়ের নিচে জমিন হবে তামার। হাশরের ময়দানে আরশের ছায়া ব্যতীত কোথাও কোনো ছায়া থাকবে না। সেদিন নেককার ইমানদারেরা আরশের সুশীতল ছায়ায় স্থান পাবেন। ইমাম বুখারির (রহ.) বর্ণনায় মেশকাত শরীফে বর্ণিত; হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর (আরশের) ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। তারা হলেন, (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক। হাদিসে এসেছে; প্রত্যেক ব্যক্তিই দায়িত্বশীল, আর প্রত্যেককেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। সেই হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে শাসক। শাসক হিসেবে ন্যায়পরায়ন হলে আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া পাওয়া যাবে (২) সেই যুবক যে যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদাতে কাটিয়েছে। কেননা, যৌবনের ইবাদত আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। (৩) যে ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মসজিদেই তার মন পড়ে থাকে। অর্থাৎ, মসজিদের সাথে তার অন্তর লটকানো থাকে। পরবর্তী সালাতের জন্য মনটা অস্থির থাকে। (৪) সেই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়, (৫) সে ব্যক্তি, যে একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, (৬) সে ব্যক্তি, যাকে কোন উচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৭) সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে। যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান হতে কী খরচ করেছে। (বুখারি: ৬৬০, মুসলিম: ১০৩১, তিরমিজি: ২৩৯১, নাসায়ী: ৫৩৮০, মুসনাদে আহমাদ: ৯৩৭৩, মুওয়াত্তা মালিক: ১৭৭৭, ইবনু হিব্বান: ৪৪৮৬)
কিয়ামতের ভয়াল দিনে ইমানদারদের চেহারা হবে উজ্জ্বল আর পাপীদের চেহারা হবে কুৎসিত কদাকার কালো। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ওই দিন কিছু লোকের চেহারা উজ্জ্বল হবে, আর কিছু লোকের চেহারা হবে মলিন কালো।’ (সুরা-আলে ইমরান, ১০৬) তিনি আরও বলেন, ‘অপরাধীরা সেদিন নিজ নিজ চেহারা দ্বারাই চিহ্নিত হয়ে যাবে এবং তাদের কপালের চুল ও পা ধরে চ্যাংদোলা করে টেনেহিঁচড়ে নেওয়া হবে।’ (সুরা-রহমান, ৩৯-৪১) হাশরের ময়দানে সব মানুষের বিচার হবে। এ কঠিন এবং ভয়াবহ অবস্থায় মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় সাত প্রকারের বান্দাকে নিজের আরশের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন। জ্বলন্ত অগ্নিকু-ের মাঝে রহমতের শীতল চাদর বিছিয়ে দেবেন।আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদেরকে উক্ত সাত শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হওয়ার তওফিক দান করুন। আমিন।
বিলাল মাহিনী / পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর,