Type to search

অভয়নগরে বাঘুটিয় ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব তালিকায় থেকে হতদরিদ্রদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ

অভয়নগর

অভয়নগরে বাঘুটিয় ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব তালিকায় থেকে হতদরিদ্রদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ

অভয়নগর প্রতিনিধি
অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে সাবেক চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের তালিকা থেকে কিছু হতদরিদ্রদের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় পুণরায় নাম অর্ন্তভুক্ত করণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট আবেদন করেছেন ভুক্তভূগীরা।
উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বগুড়াতলা গ্রামে। মাসুম শেখ বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি অন্য একজন ইউপি সদস্যপ্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলাম। তিনি জিততে পারেননি। এজন্য বর্তমান মেম্বর আমার ওপর ক্ষুদ্ধ ছিলেন। তিনি আমার নাম কেটে দিয়েছেন। খুব কষ্টে আছি।
একই গ্রামের গৃহবধূ সালমা বেগম বলেন, আমার স্বামী ইলেকট্রিক মিস্ত্রী। খুব কষ্টে আমাদের দিন চলে। পাকা বাড়ির মালিক দেখিয়ে তালিকা থেকে আমার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, তাঁরা কয়েক বছর ধরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পেয়ে আসছেন্। দুই মাস আগে বাঘুটিয়া ইউয়িনের চেয়ারম্যান ও মেম্বর অলনাইনে নিবন্ধনের জন্য তাঁদের খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির কার্ড জমা দিতে বলেন। সে অনুযায়ী তাঁরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তাঁদের কার্ড জমা দেন। পরে তাঁরা জানতে পারেন তাঁদের নাম অনলাইনে নিবন্ধন হচ্ছে না। তাঁদের কার্ডও ফেরত দেওয়া হয়নি। আজ চাল দেওয়া শুরু হলে সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের ৪৩ জনের নামের কার্ড কেটে দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র জনসাধারণকে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তা দিতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ১০টা কেজি দরে চাল বিতরণ (বিক্রি) কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত বিধবা, বয়স্ক, পরিবারপ্রধান নারী, নিম্ন আয়ের দুস্থ পরিবারপ্রধানদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার জন্য একটি তালিকা রয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে উপকারভোগীর তালিকা হতে মৃত, স্বচ্ছল, ভুঁয়া এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবর্তে প্রকৃত হতদরিদ্রদেরকে অন্তুর্ভুক্ত করার নিয়ম রয়েছে। সূত্র জানায়, প্রতিবছরের মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মোট পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলে। ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করা হতো। গত বাজেটে এর দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা কেজি করা হয়। সে অনুসারে ভোক্তারা মাসের হিসাবে ৩০ কেজি চাল পাবেন প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে।
অভয়নগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্র জানায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তালিকাভুক্ত উপকারভোগী রয়েছেন ২১৩ জন। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হলেও আজ সোমবার থেকে ওই ওয়ার্ডে ভোক্তার কাছে চাল বিক্রি শুরু হয়।
সূত্র জানায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অনিয়ম দূরীকরণ, তালিকা সঠিকভাবে তৈরি ও ডুপ্লিকেশন রোধ করতে ডিজিটাল ডেটাবেজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ৩১ আগস্টের মধ্যে উপকারভোগীর তথ্য ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরির জন্য যাচাই শেষ করার কথা। পরে তা বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ উপকারভোগী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা কমিটিতে পাঠায় এবং উপজেলা কমিটি তা অনুমোদন করে। উপজেলা কমিটি অন্য খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত নন, এমন হতদরিদ্র প্রতি পরিবারের একজনের নামে ছবিসহ কার্ড ইস্যু করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সদস্যসচিব।
বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রাজুৃ সরদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ঠিক না। আমি সরেজমিনে যাচাইবাছাই করে তালিকা সংশোধন করেছি।
বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৈয়েবুর রহমান বলেন, এইরকম হয়ে থাকলে সেটা ঠিক হয়নি। উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মীনা খানমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন বলেন,‘অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। তদন্তে উপযুক্ত প্রমাণিত হলে তাঁদের তালিকায় বহাল করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *