Type to search

অভয়নগরে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

অভয়নগর

অভয়নগরে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

  • থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ
    পুলিশের দাবি অভয়নগরে থানা হেফাজতে আফরোজার মৃত্যু হয়নি
    অভয়নগর প্রতিনিধি
    যশোরের অভয়নগরে পুলিশ হেফাজতে আফরোজা বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় ধূ¤্রজাল সৃস্টি হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে থানা পুলিশের হেফাজতে ওই নারীর মৃত্যু হয়নি। তার মৃত্যু হয়েছে যশোর আড়ইশ বেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
    জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খ সার্কেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: জাহিদুল ইসলাম সোহাগ।  সোমবার দুপুরে এক সাক্ষাতকারে এ কথা জানান। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অর্থ) নূর ই আলম সিদ্দীকিকে প্রধানকরে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খ সার্কেল মো: জাহিদুল ইসলাম সোহাগ ও কোর্ট ইন্সপেক্টর রুখসানা খাতুন। আফরোজা বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে মামলা নং ৩২ তারিখ ২/৬/২৪। তার নামে মাদক আইনে অপর একটি মামলা হয়েছে।
    মৃত আফরোজা বেগম এর ছেলে মোঃ আরিফ হোসেন মুন্না  জানান,  পুলিশ তার মায়ের চিকিৎসা সহ সকল ডকুমেন্টস আটকে দিয়েছে।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে পেসক্রিপশন ছিল তা জিম্মি করে রেখেছে। ওসি সাহেবের কাছে ওই পেসক্রিপশনের ছবি তুলতে চাইলে তিনি ছবি তুলতে দেননি। এখনো পর্যন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে কোন কাগজপত্র আমাদের দেওয়া হয়নি। আমরা ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে থাকি। কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে স্থানীয় মডেল কলেজের পিছনে একটা বাড়ি করেছি। আমাদের একটা ইজিবাইক ছিল। সেটা বিক্রি করে ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ও গ্রামীন ব্যাংক থেকে লোন করা ৫০ হাজার টাকা  ঘরে ছিল । ওই খবর পেয়ে এক মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর কথায় পুলিশ আমাদের বাড়িতে আসে। ঘটনার দির পুলিশ সব টাকা নিয়ে গেছে। বেশ কিছুদিন আগে বাড়ি করার সময় এলাকার এক সন্ত্রাসী চাঁদা চেয়েছিল।   চাঁদা  না দেওয়ায় তারা পুলিশ এনে আমার  মাকে ৩০ পিস ইয়াবা দিয়ে ধরে নিয়ে যায়। আমার মা একজন  পরহেজগার মানুষ ছিল তিনি আদৌ কোনদিন এই মাদকের সাথে জড়িত ছিলেন না। তাকে এএসআই সিলন চুলের মুঠি ধরে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে মারপিট করেছে। এবং অনেক সময় ধরে নির্যাতন করতে থাকে। এছাড়া ওই দিন রাত সাড়ে তিনটার সময় রেল স্টেশনে এসে দারোগা শামছুর ১০ হাজার টাকা চায়। টাকা না দিলে মা কে ২০০ পিস ইয়াবা দিয়ে কোর্টে চালান দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। ভয়ে আমি দারোগা শামছুর এর হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলাম।
    মুন্না আরো জানায় দারোগা সিলন ও শামছুর শনিবার রাত ১২টার দিকে আমাদের  বাড়িতে আসে। পরে নিজেদের কাছে থাকা ইয়াবা দিয়ে তাঁর মাকে গ্রেপ্তার দেখায়। এ সময় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজন পুলিশ মাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারধর করতে থাকে । পরে রাত ১টার দিকে থানায় নিয়ে যায়। সকালে থানায় গিয়ে দেখি আমার  মা খুব অসুস্থ্য। পুলিশকে অনুরোধ করে আমার মাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা কয়েকটি টেস্ট দিলেও পুলিশ সদস্যরা সেগুলো করতে না দিয়ে ফের থানায় নিয়ে যায়। আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাজারহাট নামক স্থানে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়।
    আফরোজা বেগমের ছোট ছেলে নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির মোল্যা বলেন, শনিবার রাতে আমার আম্মু বাড়ির পাশে একটি পানির কল থেকে  পানি আনতে যায়। এ সময়  আমাদের বাড়িতে পাঁচজন পুলিশ আসে। এরপর আমার মা বাড়িতে আসলে এর মধ্যে সিলন দারোগা (এএসআই সিলন আলী) আম্মুকে বলে  কাছে যা আছে, বের করে দিতে বলে । তাঁর কাছে কিছু নেই জানালে তিনি (সিলন আলী) একজন নারী পুলিশকে ফোন করে ডেকে আনেন। তিনি আম্মুর শরীর তল্লাশি করেও কিছু পাননি। এরপর সিলন দারোগা আম্মুকে চড় দিতে থাকেন। আম্মুকে মারতে নিষেধ করলে তিনি (সিলন দারোগা) আমাকেও দুটি চড় মারেন। এরপর আমাকে ঘর থেকে বের করে নারী পুলিশের সহায়তায় ঘরে দরজা দিয়ে কী করেছে, জানি না। তবে আমার সামনে চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে আম্মুকে ঝুলিয়ে দিয়েছিল।এবিষয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার রকিবুল ইসলাম বলেন, ওই মহিলা খুবই দুর্বল ছিলো এবং পেশার খুবই বেশি ছিলো, যে কারনে আমি খুলনা রেফার্ড করতে চাইলে পুলিশের অনুরোধে যশোর রেফার্ড করা হয়েছে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, ওই নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে তাঁর মৃত্যুর কারণ জানাযাবে। এদিকে হাসপাতালে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা এই বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
    অভয়নগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, মাদকসহ আটক ওই নারী হৃদ্রোগে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। আফরোজা বেগমকে নির্যাতন করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই সিলন আলী বলেন, আফরোজা বেগমকে মারধর বা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাঁর পরিবারের সদস্যরা এটা বললে সেটা ঠিক না। শনিবার রাত ১১ টার দিকে অভয়নগর থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের ও সিলনের নেতৃত্বে ৪ থেকে ৫ জন পুলিশ তাদের বড়িতে যায়। কোন মামলা ছাড়াই ওই রাতেই তার মাকে বাড়ি থেকে ধরে মার পিট করতে করতে থানায় এনে আটকে রাখা হয়। রোববার সকালে জানতে পারি আমার মা অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় তাকে অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তারা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কিছু টেষ্ট করাতে বলেন। কিন্তু থানা পুলিশ কোন পরীক্ষা ছাড়াই তাকে আবার থানাতে নিয়ে আসে। থানাতে আসার পরপরই  মা আবার অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তাকে আবার অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তার অবস্থা আশক্সকাজনক হওয়ায় সকাল ১১টায় তাকে যশোর সদর হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরন করে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাজারহাট নামক স্থানে পৌছালে তার মায়ের মৃত্যু হয়। তার পরেও পুলিশ তাকে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। ডাক্তারা তার নাড়ী পরীক্ষা করে মৃত্যু ঘোষণা করেন।