Type to search

অতি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা

সাহিত্য

অতি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা

বিলাল হোসেন মাহিনী

সম্প্রতি টানা বৃষ্টির কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। ঘের-বেড়ি তলিয়ে গেছে, পুকুর ভেসে গেছে কোথাও। ফল-ফসল, শাক-সবজি’র অসামান্য ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। অব্যবস্থাপনার ফল ভোগ করছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ, সড়ক ও গ্রাম্য রাস্তাঘাট। নির্মানাধিক সড়ক ও ব্রিজ কালভার্ট পারাপারে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধরণ মানুষ। এর প্রতিকারে কতটুকু সোচ্চার থাকে মাঠ প্রশাসন বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা?

বাংলাদেশ ভাটির দেশ। এখানে নদীভাঙন, অতিবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস অতীতেও ছিল, এখনো আছে। কিন্তু অতীতের তুলনায় বর্ষাকালীন দুর্যোগের হার যেমন বেড়েছে, তেমনি এগুলোর গতি-প্রকৃতিও অনেক বদলেছে। জানা যায়, অতীতে কোনো কোনো বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বন্যার উপদ্রব দেখা দিতো, যার ফলে নদী ভাঙ্গন হতো। এখন অক্টোবর পেরিয়ে নভেম্বরেও বৃষ্টি, ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়। এছাড়াও বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। আবার মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ যেমন, আগুন লাগার ঘটনাও বাড়ছে, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। সব মিলিয়ে একের পর এক দুর্যোগে দিশেহারা বাংলাদেশের মানুষ।

শ্রাবণ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরীসহ সংযুক্ত আরো কিছু নদীতে প্রবল স্রোত থাকে। প্রতিদিন নদীভাঙনে ঘরবাড়ি, রাস্তা, ফসলি জমি বিলীন হয় এ সময়ের বৃষ্টি ও বন্যায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে,  সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন নদীর অব্যাহত ভাঙনে কয়েকটি জেলার কালভার্ট ও সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপাকে পড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। বেড়েছে বন্যার প্রকোপ। বানভাসি মানুষের সংখ্যা। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ডুবছে রাজধানী ঢাকাসহ সিলেট-চট্টগ্রাম বিভাগের বহু জেলা-উপজেলা।
এসব দুর্যোগে ধান ও শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে, সাধারণ কৃষকদের মধ্যে নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপদ। সেপ্টম্বর থেকে নভেম্বরের অতিবৃষ্টিতে আমন ধান ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পানি যখন কমতে শুরু করে তখনই নদীগুলোর দুই পারে ব্যাপক আকারে ভাঙন দেখা দেয়। বাড়িঘর, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট যেমনি ভাঙনের শিকার হয়েছে, তেমনি নদীতে বিলীন হয়েছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি। বহু মানুষ সর্বশান্ত হয়ে গেছে।

দেশের নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়াই বন্যা ও নদীভাঙনের প্রধান কারণ। তাই নদী খননের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলেও এ দেশে নদীগুলো নিয়মিত খননের মাধ্যমে নাব্যতা ধরে রাখা হতো। বিশাল ড্রেজার বহর ছিল। পাকিস্তান আমলে এই দেশ ড্রেজারশূন্য হয়ে পড়ে এবং নদী খনন বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার চারটি ড্রেজার ক্রয় করে। এরপর দীর্ঘদিন আর কোনো ড্রেজার কেনা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এরই মধ্যে কয়েক ডজন ড্রেজার কেনা হয়েছে। ডেল্টা পরিকল্পনায়ও নদী খননকে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন পরিকল্পনার বস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। তার আগে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াতে হবে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু ভাঙনগ্রস্থদের নয়, নানা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ সব মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *